আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভ টিজিং 'শিকড়ের খোঁজে ----

জন্ম

ইভ টিজিং নিয়ে দেশ তোলপাড়। পাড়া মহল্লা অলি গলির কোনা কিঞ্চির এমন কোন স্থান নেই যেখানে এর আলোচনা-সমালোচনা হয়না। যারা এর স্বীকার হয়েছেন তারা নিজের মনকে টেনে-হিছড়ে বিয়ে নামক বদ্ধ ঘড়ে বন্ধি করেছেন কিংবা চির মুক্তির আশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। অন্য বেচারাও হঠ্যাৎ লোহার চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে গিয়ে মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে তৃষ্ণাতর মত প্রহর গুনছে। তাদের বাবা মা বেচে থেকেও অসময়ে যেন মৃত্যু যন্ত্রনার তাড়া অনুভব করেন।

মেয়ে থাকলে তা হারানোর শোক আর ছেলে হলে পৃথিবীর সব লাঞ্চনা শত প্রতিরোধ শত্তেও যেন ঘাড়ের উপর চেপে বসে। তখন মনে হয় ছেলে মেয়ে জন্ম দিয়েই ভুল করেছিলাম। ভুল যে কে করেছে সেটা বলা মুশকিল। তবে ভুল একটা হয়েছে এটা নিশ্চিত। ছোট বা বড় হোক প্রথম থেকে ওই ভুলের উপযুক্ত প্রতিরোধ না করায় দেশ আজ তোলপাড়।

শুধু তোলপাড় বললে কম বলা হবে। একেবারে মহা তোলপাড়। দেশের কিঞ্চিত পরিমান জায়গায়ও ইভ টিজিং এর দূরগন্ধের সৃষ্ঠি হলে মিডিয়ার কর্মীরা ছুটে যান গন্তব্যে। অনেকে আবার ভালো মূল্যায়ন পেতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তেল থেকে তিল বানিয়ে ফেলেন। হতভাগা পুলিশ তখন চাকরী বাচাতে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে বেড়ান গন্ধ সৃষ্ঠি কারীকে ধরতে।

যে কোন মূল্যে তখন ইভটিজারকে ধরে লোহার পকেটের মধ্যে বন্ধি করাই যেন তার জীবনের ব্রত হয়ে ওঠে। ততক্ষনে সাত পাহারের নিচে চাপা পড়ে যায় দূর গন্ধ সৃষ্ঠির রহস্য। একটু পিছনের দিকে যাই। কত আর, ১০ বছর। হ্যা স্মৃতির পাতা থেকে এই ১০ বছর আগে দিন গুলো দেখলে ইভ টিজিং তো দূরের কথা টিজ এর অর্থও অনেকে জানতো না।

স্পষ্ঠ মনে আছে, তখন অষ্ঠম শ্রেনীতে পড়ি। এক সহপাঠী কি যেন ভেবে একদিন বলল, দোস্ত কয়েকদিন ধরে কিছু মেয়কে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য নিজের সাথে অনেক তোর-জোর করেছিলাম। কিন্তু যখনেই তাদের সামনে গিয়ে প্রেমের কথা বলতে উদ্যত হয়েছি ঠিক তখন অদৃশ্য এক শক্তি এসে শরীরে উত্তেজনা বড়িয়ে সব পন্ড করে দেয়। কি করি বলতো? এই প্রশ্নের উত্তর সেদিন ওকে দিতে পারিনি। তবে হৃদপিন্ড স্পন্দন বাড়িয়ে সাহসের সীমাবন্ধতা ওকে যে স্বরন করে দিতে চেয়েছিল সেটা ঠিকই অনুমান করেছিলাম।

তবে আগের মত হৃদপিন্ড এখন আর কাউকে স্পন্দন বাড়িয়ে সাহসের সীমাবদ্ধতা স্বরন করিয়ে নিজে আর লজ্জীত হতে চায়না। কারন এখন নাকি দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেনীর ছেলে মেয়েরাও প্রেম লীলায় মক্ত হয! যেন কলি ফোটার আগেই ফুল। আগে অনেকের মুখের দিকে হ্যা করে ঢাকার নানা কথা গিলেছি। হজম করতে করতে মনে হয়েছে সত্যিই ওটা আজগুবি শহর। এইচ এস সি পরীক্ষা শেষে সেখানে যাওয়ার প্রথম সুযোগ হয়েছিল।

তবে বিকেলে ঘুরতে বেড়িয়ে পরি গোলক ধাধায়। শুরুতেই ফুটপাত দিয়ে হাটতে গিয়ে রমনীদের ধাক্কায় লাইচ্যুত হলাম। পিছনে তাকিয়ে ভাবলাম, নিশ্চই ব্যাস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষ, হয়তোবা দুঃখিত শব্দটা উচ্চারন করতেও ভুলে গেছে। পিঠ চাপড়ে সঙ্গের বন্ধু বিদ্রুপ করে করল, দোস্ত এটা ঢাকার শহর, ধাক্কা দেওয়া ও খাওয়ার মত মনস্তাত্তিক শক্তি অর্জন করে এখানে চলাফেরা করতে হয়। ওর কথায় মনস্তাত্তিক শক্তি যা অর্জন করেছিলাম রমনীদের পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে মুহুতেই সব গুলিয়ে গেল।

মনে হচ্ছিল টিভিতে দেখা কোন ভিন দেশের দৃশ্য। সবচেয়ে অবাক হয়েছিলম তাদের রুপের মাধর্য দেখে। বন্ধুকে বললাম, দোস্ত আমাদের দেশে যে এত সুন্দর মেয়ে আছে তাতো জানতামনা। বন্ধু সতর্ক করে বলল, তুই যাকে সুন্দরী বলছিস সে আসলে মা, সাথে তার মেয়ে। মেকাপের সাথে পোশাক মানিয়ে যাওয়ায় মেয়ের চেয়েও মাকে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে।

কথা শেষ হবার আগেই লজ্জায় নিজের হতভাগা চোখ আর মুখ লুকানো ছাড়া ওই মূহুতে আর কিছুই ভেবে পাইনি। মুখ লুকিয়ে সেদিন না হয় লজ্জা ঢাকতে পেরেছিলাম। কিন্তু এই তো কয়েকদিন আগে নিজের শহরের রাস্তা ধরে হাটছিলাম। হঠ্যাৎ লক্ষ্য করি জিরাফের মত গলা উচিয়ে আশেপাশের অনেক তরুন অপলক দৃষ্ঠিতে পিছনের দিকে তাকিয়ে আছে। কৌতুহল বশত ফিরে দেখি, খানিকটা দূরে এক রমনি পাতলা পোশাক পড়ে হেলে ঢুলে হেটে আসছে।

মনে হচ্ছিল, পোশাকের পাতলা সুতাগুলোর পাশাপাশি ওরনাটাও লজ্জায় ছটফট করছে। পাশের লোকগুলোকে আর কি বলবো। কবি সাহিত্যিকরা তো আর মিথ্যে বক বক করেনা। কারন তারাও তো ওই বয়সটা পাড় করে এসেছে। হারে হারে টের পেয়ে বারবার সতর্ক করেছে নতুন প্রজন্মকে।

শুধূ গুটি কয়েক গাছ অপসংস্কৃতিকে উপযুক্ত সার মনে করে সেটাকে মাত্রাঅতিরিক্ত প্রয়োগ করায় অস্বভাবিক ভাবে ফুলে ফাঁপা হয়ে উঠেছে। এদের দেখাদেখি তাদের বা আশেপাশের ডালের কলিগুলো কলি হয়ে ফোটার আগেই ফুল হয়ে ফোটার আশা করে। পরিনতিতে কলি ও ফুলের মাঝ পথে গিয়েই মৃত্যু ঘটে। আর তাদের পচা দূরগন্ধেই দেশে মহা তোলপাড় সৃষ্ঠি করে। ### লেখক ---- মিঠুন পাল


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।