২০০৩ সালের বিশ্বকাপের যে ম্যাচটাতে বাংলাদেশ পঁচা শামুকে পা কাটার মত কানাডার কাছে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটিয়েছিল, সে দলে বর্তমান বাংলাদেশ দলের একজন ছাড়াই কেউই ছিলেন না। তখন হয়তো আজকের অনেকেই স্কুল লেভেলে ক্রিকেট খেলছিল। কিন্তু গতকালের ম্যাচে কানাডা দেখল অন্যরূপের বাংলাদেশকে। দেখল শফিউল, সাকিব, রিয়াদের পাশাপাশি বিধ্বংসী তামিমকে। ম্যাচের আগের দিন কানাডিয়ান কোচ তার দলের বোলিং নিয়ে বেশ গর্ব করেছিলেন।
কিন্তু তার বোধহয় জানা ছিলনা যে তামিমের কাছে বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলাররা নাকানি-চুবানি খেয়ে মরেছে সেখানে খুররম, ডেভিসন, হেনরীরা কি আর বোলার। বাংলাদেশের তামিম যে কোন ধাতুতে গড়া তা বোধহয় ভালই টের পেয়েছেন কানাডার বোলাররা। তামিমের ঝড়ের দিনে কানাডার প্রতিরোধের সব দেওয়াল উড়ে গেল ঝড়ের মত। তাইতো সব শংকা, আর ২০০৩ এর দুঃসহ স্মৃতিকে পেছনে ফেলে ৯ উইকেটে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে কানাডাকে টাইগাররা। মাত্র ১৯.২ ওভারে ১১৩ রানের মামুলী টার্গেটে পৌঁছে যেতে কোন রকম বেগই পোহাতে হয়নি টাইগারদের।
ফলে বিশ্বকাপের আগে গা গরমটা ভালই সারল সাকিবের দল। এ যেন নতুন রূপে বাংলাদেশ।
তবে একটা আফসোস বোধহয় থাকতেই পারে দর্শকদের। বাংলাদেশ যদি আগে ব্যাট করতো তাহলে হয়তো আরো বেশি তামিম ঝড় দেখা যেতো। সঙ্গে সাকিব, আশরাফুলরাও যোগ হতো।
তবে এসবের চাইতে ম্যাচটা জেতা হল সেটাইবা কম কি? তামিম ঝড় যেখানে দেখা হয়ে গেছে সেখানে আর কি লাগে?
পঁচা শামুকে পা অনেকবারই কেটেছে বাংলাদেশের। সিংহকে বদ করার পর নেংটি বিড়ালের থাবায় পড়েছে বাংলাদেশ অনেকবার। তবে গতকাল সেরকম কোন কিছু ঘটতে দেয়নি টাইগাররা। বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার পর থেকেই মাশরাফির জন্য মাতম করেছে অনেকেই। দেশের সেরা বোলারকে ছাড়াই কেমন হবে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ।
শফিউল, নাজমুল, রুবেলরা বোধ হয় তার জবাবটা ভালই দিয়েছে মাতমকারীদের। মাশরাফির অভাবটা বুঝতেই দিলেন না এই তিন পেসার। সঙ্গে রাজ্জাক, সাকিবরা যদি থাকেন সেরা ফর্মে তখন কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আর গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বোলারদের সম্মিলিত আক্রমণে বহুজাতিক কানাডা এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল যে ১১২ রানেই থেমে গেল তাদের পথ চলা।
দিবা-রাত্রির ম্যাচে টসে জিতে নিজের বোলারদের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন সাকিব।
নিজের প্রথম ওভারেই শফিউর জানিয়ে দিলেন অধিনায়ক ভাল সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। ইনিংসের পঞ্চম বলে ধিরাল প্যাটেলকে ফেরত পাঠালেন শফিউল শূন্য হাতে। নিজের প্রথম ওভারটা করতে এসে রুবেলকে কেমন ছন্দহীন মনে হয়েছে। সে সুযোগে রুবেলের প্রথম ওভার থেকে পরপর তিনটি চার আদায় করে নিলেন রুবিন্দোগুনা সেকেরা। কিন্তু প্রতিশোধটা সাথে সাথেই নিতে ভুললেন না রুবেল।
মিডঅনে সাকিবের ক্যাচে পরিণত করে ফিরিয়ে দেন রুবেল গুনাসেকেরাকে। ডেভিসনকেও কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেয়নি শফিউল। রাজ্জাকের ক্যাচে পরিণত করে ডেভিসনকে যখন ফেরত পাঠান শফিউল কানাডার সংগ্রহ তখন ৩ উইকেটে ২২। ধুকতে থাকা কানাডাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে অধিনায়ক বাঘাই এবং হানশ্রা। ৩৯ রানের জুটিও গড়ে দু’জনে মিলে।
নাইম ইসলাম এসে ২২ রান করা হানশ্রাকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গার পর বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিবলে কেবল নেচেই গেছে কানাডার ব্যাটসম্যানরা।
ইনিংসের ২৫তম ওভারে নাইমের জায়গায় বল করতে আসা রিয়াদ করলেন কানাডার বড় সর্বনাশটা। বাঘাই এবং জুবিন সুরকারি মিলে গড়া ২০রানের জুটিটা শুধুই ভাঙ্গেননি রিয়াদ নিজের প্রথম ওভারের পরপর দুই বলে বাঘাই এবং রিজওয়ানকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন। হ্যাট্রিক হয়েও যেতে পারতো রিয়াদের। কিন্তু শ্রীলংকান আম্পায়ার ধর্মসেনা রিয়াদের জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ করে দিলে হ্যাট্রিক আর হয়নি রিয়াদের।
তবে কানাডার সর্বনাশটা করে গেছেন ঠিকই। ৮১ রানের মাথায় রিয়াদ পরপর দুই কানাডিয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাকি কাজটা করেন সাকিব। এক ওভারে দুটিসহ দ্রুত তিনটি উইকেট তুলে নিলে ৮১ রানে ৫ উইকেট হারানো কানাডা বাকি ৫টি উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩১ রান যোগ করতেই। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা হয়েছে উইকেট নেওয়ার দৌঁড়ে। আর সে প্রতিযোগিতায় সবার আগে ৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়া সাকিব।
এ যেন দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। আর সাকিবের সাথে প্রতিযোগিতায় থাকা রিয়াদ, শফিউল রুবেলরা ২টি করে উইকেট নিলেও রুবেলের খরচটা একটু বেশীই হয়ে গেছে। ৮ ওভারে ৪২ রান খরচ করেছেন এই পেসার ২টি উইকেট নিতে। স্বাগতিক বোলারদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে কিছুটা প্রতিরোধ গড়া কানাডার অধিনায়ক আশীষ বাঘাই করেছেন ৩০ রান। তবে দলকে ১১২ রানের বেশী পুঁজি দিতে পারেন নি তিনি।
কানাডার মত দুর্বল দল, আবার তাদের পুঁজি যখন মাত্র ১১২। তা নিয়ে তামিম, সাকিবদের বিপক্ষে লড়াই করার চিন্তা করাটাও যে অপরাধ তা বুঝিয়ে দিলেন তামিম। গ্যালারিতে হাজির ১৫ হাজার দর্শককে চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে মুগ্ধ করেছেন চাটগাঁর এ যুবক। কানাডার বোলারদের একেবারে গলির বোলারে পরিণত করে প্রথম ১০ ওভারেই তুলে নিলেন ৭০ রান। তামিমের তাণ্ডবে অপর প্রান্তে ইমরুল কায়েসকে দর্শক হয়েই থাকতে হয়েছে।
মাত্র ৩৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা তামিম অবশ্য থেমেছেন ৬৯ রানে। ৭ চার আর ৩ ছক্কায় সাজানো তামিমের ঝড়ো ইনিংস থামে রিজওয়ানের বলে বোল্ড হয়ে। পাওয়ার প্লে’র সুবিধাটা ভালই আদায় করে নিলেন বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার। প্রথম ১০ ওভারে ৭০ রান নেওয়ার পর কানাডা দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে নেওয়ার সাহস করেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নিলেও খুব বেশি ভাল করেছে তা কিন্তু বলা যাবে না।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভার থেকে ২১ রান তুলতে পারলেও হারাতে হয়েছে তামিমকে। তারপরও ১১৩ রানের লক্ষ্যে পৌঁছতে ১৯.২ ওভারের বেশি ব্যবহার করেনি বাংলাদেশ। তামিমের ঝড়ে আড়াল হয়ে পড়া ইমরুল কায়েস অপরাজিত ছিলেন ৩৯ রানে।
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপটা শুরু হল চট্টগ্রাম থেকে। আর টাইগারদের প্রস্তুতিটাও হল দারুন।
এবার ভারতের বিপক্ষে আসল লড়াই এর অপেক্ষা। অবশ্য তার আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরো একটি গা গরমের ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।