আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলে যায় রঙিন দিন

আমি সামান্যতেই কেঁদে ফেলি। তখন চকলেট দিলে কান্না বন্ধ করি। আর না হলে অনবরত কেঁদে যাই। ক্লান্তিহীন কান্না।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য আব্বু বিভিন্ন স্কুল ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করলেন।

বাসার আশেপাশের স্কুলগুলোই মূলত ঘুরলেন। আব্বু যে জিনিসটা বারবার আম্মুকে বললেন তাহলো, শেষ পযর্ন্ত প্রতিটা স্কুলই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি লালন করে। তারপরও মন্দের ভালো বেছে নিতে হয় যেরকম বড়রা নির্বাচনের সময় বুঝে নেয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের পকেট হাতড়ে বেড়ায়। আমি প্লেতে পড়ি অথচ এই আমাকেই স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য তারা নিজেরাই আম্মুকে নসিহত করেন।

আমাদের নৈতিকতার লেভেল এত নিচে নেমেছে যে ভাবলে অবাক লাগে বৈকি! এই বিষয়গুলো আম্মু আব্বুর সাথে আলোচনা করে। আমি এখনও বুঝিনা। সেই মনে হয় ভালো। খুব সকালেই ঘুম থেকে জেগে স্কুলের জন্য রেডি হতে হয়। সাতটা বাজলেই আম্মুর হাঁক, এশা ওঠো, ওঠো।

আড়মোড়া ভেঙ্গেও আবার পাশ ফিরে শুয়ে থাকি। তখন আম্মু কোলে করে সোজা বাথরুমে নিয়ে যায়। এই শীতের দিনে কি এত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়া যায়? তার উপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে দাঁতব্রাশ, হাত-মুখ ধোয়া খুব কষ্টকর। খুব কম দিনই আছে যে প্রাতকৃত্যাদি সারার সময় আমি কাঁদিনি। তখন আম্মুর আদর মিশ্রিত বকা শুনতে হয়- এত বড় মেয়ে হলো এখনও কান্না করে।

নাস্তা খাবার সময়ও একই ঝামেলা। এটা খাব না, ওটা খাব। খাবারের প্রতি আমার এমনিতেই অনীহা। দুধ আর সেদ্ধ ডিমটাই আমাকে জোর করে খাওয়ায়। (আপনাদেরকে কিন্তু আপনাদের আম্মু তাই করেছে, ভুলে গেছেন মনে হয়।

আমি হয়তো একসময় ভুলে যাব। সব মায়েরাই মনে হয় এভাবে আমাদের আদর করেন। ) স্কুলে অবশ্য টিফিন নিয়ে যাই। সেটা ম্যাডামরা খাইয়ে দেন। স্কুলে আমার বন্ধু বলতে তাইফা।

ওকে ছাড়া আমি আর কারও সাথে বসিনা। একদিন ও স্কুলে আসেনি, আমার সেকি কান্না!! মানিকজোড় বলতে পারেন। তাইফার আম্মু আমাকে খুব আদর করে। কিন্তু আমি ওনাকে খুব ভয় পাই। ওনি স্থুলদেহী তাই ওনাকে আমার ভয় লাগে।

একই কারণে কয়েকজন ম্যাডামকেও আমার ভয় লাগে। স্কুলে যাবার আগে আমার প্রধান শর্তই ছিল যে আমাকে চিকন ম্যাডাম দিতে হবে। আব্বু যেদিন প্রথম স্কুল দেখে এসে বললেন যে, এশা তোমার স্কুল দেখেছি। সাথে সাথে আমি বলেছিলাম যে ম্যাডাম কিরকম? আব্বু বলেছিল মোটকা। তখন আমার কী কান্না! পরে চিকন ম্যাডামের কথা বলে আশ্বস্ত করলে কান্না থামাই।

এই নিয়ে বাসায় কী হাসাহাসি! বিকেলে ঘুম থেকে জেগেই কার্টুন নেটওয়ার্কের স্ক্রীণ না খুললে আমার চলেই না। "টম এন্ড জেরি" খুব প্রিয় আর মিস্টার বিনতো আছেই। কম্পিউটার গেমসে এখনও এত সিদ্ধহস্ত হতে পারিনি। তবে অভ্যাস আছে বলা যায়। কম্পিউটারে আম্মু গান আর আবৃত্তি শুনে।

আম্মু মনে হয় কবিতা প্রেমী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্যামেলিয়া কবিতাটি আমি শুনে শুনে কিছুটা শিখে ফেলেছি। বলবো? শুনবেন? বলি তাহলে- নাম তার কমলা। দেখেছি তার খাতার উপরে লেখা। সে চলেছিল ট্রামে।

তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায়। আমি ছিলাম পিছনের বেঞ্চিতে। মুখের একপাশে নিটোল রেখা দেখা যায়। আর পারি না। সারাদিন আব্বুর কথা আমার খুব মনে পড়ে।

বারবার আম্মুকে বলি, আব্বু কখন আসবে? আব্বুকে আমি খুব মিস করি। আম্মু বলে আমি নাকি বাপ ন্যাওটা। আব্বু বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। আব্বুর মুড তখন কিছুটা অফ থাকে। ক্লান্তির জন্য কি না কে জানে।

আব্বুর প্রতি আমার খুব মায়া হয়। চোখ ফেটে জল আসে। আব্বু আমাকে যখন জড়িয়ে ধরে তখন আমার কী যে ভালো লাগে!! আম্মু বলে এখন আমার নাকি খুব মজার দিন কাটছে। আচ্ছা, আপনাদেরও কি এরকম মজার দিন কেটেছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো আপনারা কি বলেন- দিনগুলি মোর সোনার খাচায় রইলনারে.... নোটঃ আজ আম্মুর সহযোগিতা একটু বেশিই ছিল।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।