আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোররায় কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, আটক ৪

কি বলব

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পরকীয়া বিষয়ক সালিশে ফতোয়াবাজদের দোররার শিকার এক কিশোরীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। মৃত কিশোরীর নাম হেনা আক্তার (১৪)। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক চারজন হলেন- স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মফিজ, শিল্পী আক্তার, স্থানীয় মাতাব্বর লতিফ মীর মালত ও আলাবক্স করাতী। যার সঙ্গে হেনার সম্পর্ক রয়েছে বলে যে অভিযোগ সেই মাহবুব হোসেন (৩৫) ঘটনার পর থেকেই পলাতক।

এছাড়া ফতোয়াবাজির মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষষ সদস্য ইদ্রিস শেখও পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে হেনার লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি উপজেলার চামটা ইউনিয়নের চামটা গ্রামের দরবেশ খানের মেয়ে। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এ কে এম শহিদুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হেনার বাবা দরবেশ খান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

দ্বিতীয় শালিশে দোররার ফতোয়া নিহত কিশোরীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে গত ২৪ জানুয়ারি হেনা আক্তারকে স্থানীয় সালিশ বৈঠকে ঈমাম ও প্রভাশালীদের ফতোয়া অনুযায়ী একশ'টি দোররা (কঞ্চি দিয়ে পিটুনি) মারা হয়। জখম অবস্থায় পরদিন হেনাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও প্রভাবশালীদের চাপে বাড়ি নিয়ে আসে তার স্বজনরা। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার বিকালে তাকে আবার স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তার মৃত্যু হয়। হেনার মামা আশিক সাংবাদিকদের জানান, হেনার সঙ্গে তার চাচাতো ভাই একই গ্রামের রবিউল খানের ছেলে মাহবুব হোসেনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বিবাহিত মাহবুব ঢাকায় চাকরি করেন, তার স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে। তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে গ্রামে এর আগে মাহবুবকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সালিশে সিদ্ধান্ত দেওয়া ব্যক্তিরাই ২৪ জানুয়ারির সালিশে উপস্থিত ছিলেন। মাহবুব গত ২২ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন। এ সময় হেনার সঙ্গে তাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেন মাহবুবের স্ত্রী শিল্পী আক্তার।

তার হৈ চৈ শুনে স্থানীয় লোকজন এসে মাহবুব ও হেনাকে বেদম মারধর করে। আশিক জানান, এর জেরে ২৪ জানুয়ারি মাহবুবের স্ত্রী সালিশ ডাকেন। ওই সালিশে উপস্থিত হন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইদ্রিস শেখ, আবদুল হাই মীর মালত, আবদুল মালেক মীর মালতসহ ১৫-২০ জন স্থানীয় মাতব্বর। সালিশে মাহবুব ও হেনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে ইউপি সদস্য ইদ্রিস শেখ চামটা আলহাজ্ব আবুল বাশার উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান ও স্থানীয় মাঝিবাড়ি মসজিদের ঈমাম হাফেজ মো. মফিজ উদ্দিনকে ডেকে আনেন।

এই দুজন মাহবুব ও হেনাকে একশ' দোররা মারার ফতোয়া দেন। স্থানীয় মাতব্বররা এই বিধান কার্যকর করেন। আশিক আরো জানান, দোররা মারার পর হেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২৫ জানুয়ারি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু একদিন পর মাতব্বরদের চাপের মুখে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে স্বজনরা। নড়িয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসলাম উদ্দিন মোল্লা জানান, হেনা আক্তারের গালে কামড়ের দাগ ও শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

হেনার বড় ভাই ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, "আমার বোনকে হুজুরদের কথায় স্থানীয় মেম্বার তার লোকজন দিয়ে একশ' দোররা মারে। দোররা মারার পরে হেনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করার পর মাতব্বররা আমাদের চাপ দিলে হাসপাতাল থেকে হেনাকে বাড়ি নিয়ে আসি। "বাড়ি আনার পর অবস্থা খারাপ হলেও মাতবররা হাসপাতালে নিতে দেয় নাই। সোমবার অবস্থা আরো খারাপ হলে আমরা মুলফৎগঞ্জ হাসপাতালে নিলে হেনা মারা যায়।

" 'আমরা ফতোয়া দিইনি' চামটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, "দোররা মারার ঘটনা আমি শুনেছি। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। এলাকায় যাওয়ার পর বলতে পারবো আসলে কী হয়েছে। " তবে ফতোয়াবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে চামটা আলহাজ্ব আবুল বাশার উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, "আমরা ফতোয়া দিইনি। আমাদের ডেকে নিয়ে অবৈধ কাজের মাসালা জানতে চেয়েছে এলাকার মাতব্বররা।

আমরা শুধু অবৈধ সম্পর্কের মাসালা বলেছি। " মাদ্রাসার ইমাম হাফেজ মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, "আমাদের ডেকে মাসালা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক (সাইদুর রহমান) অবৈধ সম্পর্কের মাসালা বলেন। পরে স্থানীয় লোকজন মেয়েটিকে একশ' দোররা মারে। " নড়িয়া থানার ওসি আবুল খায়ের ফকির বলেন, "অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে মাহবুবের স্ত্রী শিল্পীসহ তার স্বজনরা হেনাকে মারধর করেছে। পরে সালিশ বৈঠকে বসে ফতোয়াবাজদের কথায় গামছা পেচিয়ে দোররা মারার কথা শুনেছি।

তাতে হেনা মারাত্মক অসুস্থ হয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। " শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, "ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে কী কারণে কিশোরীটির মৃত্যু হয়েছে। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.