শামীম আহমেদ
মুন্সীগঞ্জ, জানুয়ারি ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নতুন বিমানবন্দরের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রীনগরে এক পুলিশ নিহত এবং চার পুলিশ ও কয়েকজন সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন।
নিহত পুলিশ সদস্য হলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান (৪৫)। চারজন পুলিশ সদস্য এবং কয়েকজন সাংবাদিকসহ আহত হন ৪২ জন। আহত সাংবাদিকদের দুজন বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও বেসরকারি টিভি এটিএন নিউজ'র প্রতিবেদক, এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। বাকি আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ডাকে স্থানীয়রা জনতা সোমবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে। সোমবার সকাল থেকে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো। বিকেল ৪টার দিকে যান চলাচল শুরু হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত।
"
রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক জানান, শ্রীনগরে সংঘর্ষে আহত পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সোমবার বিকাল পৌণে ৩টার দিকে এই হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক এদের মধ্যে মতিউরকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি চারজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
নিহত পুলিশ সদস্যের বিস্তারিত পরিচয় জানা এবং এ বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
স¤প্রতি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়ায় এবং সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ হাজার ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল।
'সরাতে গেলে তারা মারমুখী'
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ওই এলাকায় প্রায় ৫শ' পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়।
শ্রীনগর থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, উপজেলার শ্রীনগর বাজারে পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধকারী লোকজনকে সরাতে গেলে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
ওসি বলেন, "সকাল থেকেই বাড়ৈখালী, নবাবগঞ্জ ও দোহার এলাকার বহু লোক বিমানবন্দরের বিপক্ষ নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কাছে জড়ো হয়। "
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লোকজন ছনবাড়ি থেকে কুচিয়ামোড় পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।
পুলিশ নিরাপদ স্থানে সরে গেলে জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে ৪২ জন আহত হয়।
পানি ও শেল শেষ হলে হামলা করে জনতা
স্থানীয়রা জানায়, সংলগ্ন কেউটখালী, কড়িখালী, লস্করপুর, আলমপুর ও নিদারপুর এলাকারা প্রায় ১৫-২০ হাজার নারী-পুরুষ ঝাড়– রাম দা নিয়ে বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরবর্তী এক ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভরতদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাফিউল ইসলামের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে আরো পুলিশ মোতায়েন হয়। পুলিশ বিক্ষোভরতদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
বেলা ১টার দিকে পুলিশের জলকামানের পানি এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল শেষ হয়ে যায়।
এ সময় পুলিশ পিছু হটতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে ধাওয় দেয়। উত্তেজিত কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ধাওয়া শুরু করলে পেছনে থাকা পুলিশ সদস্যরা দৌড়াতে শুরু করে। জলকামান ও রায়ট কার পেছন দিকে খুব ধীর চলার কারনে (ব্যাক গিয়ায়ে) এক সময় বিক্ষোভকারীদের নাগালের মধ্যে এসে যায়।
এ সময় জনতা জলকামানের গাড়ি ভাংচুর এবং রায়ট কারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
রায়টকারে থাকা ৫/৬জন পুলিশ সদস্যদের লাটি ও ইট দিয়ে আঘাত করে আহত করে জনতা।
ওসি শাখাওয়াত হোসেন আরো জানান, দুপুর পৌনে ১টার দিকে একদল লোক হাঁসারা পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি এবং পুলিশ ফাঁড়িতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
বেলা ১টার দিকে পুলিশকে ধাওয়া দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় প্রথম আলোর প্রতিবেদকের একটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা ভস্মিভূত হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষোককারীরা প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মর্তূজাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে রাজধানীর ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় কয়েকজন ফটো সাংবাদিকও আহত হন।
সোর্স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।