আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিউমুন, টুইলাইট – এ মুভিগুলো দেখেছেন কী?যদি দেখে থাকেন,তবে এবার জানুন সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ারের কথা! (যারা দেখেননি,অবশ্যই তারাও আমন্ত্রিত)

দিতে পারো একশ ফানুস এনে! আজন্ম সলজ্জ সাধ, একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই ... ... ...
নিউমুন, টুইলাইট, নাইটওয়াচ, দ্য এডিকশান, ব্লেড ইত্যাদি অনেক বিখ্যাত মুভি নির্মাণ করা হয়েছে এক ভ্যাম্পায়ারের উপর ভিত্তি করে। চমৎকার নির্মাণশৈলী,অসাধারণ কাহিনী – এসব কিছুর কারণে সেসব মুভি বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। সেসব কাহিনীতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল ভ্যাম্পায়ারের চরিত্রের উপর যে রক্তখেকো, দিনের আলোয় যার ভয় ও মানুষের রক্ত যার প্রিয় খাদ্য। ভ্যাম্পায়ারকে নিয়ে নির্মিত প্রায় সব মুভির ভ্যাম্পায়ারগুলো এমন সব চরিত্রের অধিকারী ছিল। এসব মুভির অনেকগুলোই আমাদের দেখা আছে।

আমি তাই সেসব কিছু না বলে আজ বলব সত্যিকারের ভ্যাম্পায়ারের কথা যে রাতের বেলা ঘুরে বেড়ায়,রক্ত যার প্রধান খাদ্য এবং সূঁচালো দাঁত যার এ কাজের সম্বল!আসুন,তাহলে জানা যাক তাদের কথা। ব্রাম ষ্টোকার (১৮৪৭ – ১৯১২);একজন আইরিশ লেখক যিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন ড্রাকুলার কাহিনী লিখে। সে গল্প শুনলে গা ছমছম করে উঠে। ওখানে আছে ভ্যাম্পায়ারের কথা। রক্তচোষা বাদুড়।

ঐ প্রেতাত্মার ক্ষুধা মেটে কেবল রক্ত পান করলে। নিশুতি রাতে কবরখানা থেকে বের হয়ে আসে ওরা। ঘুমন্ত মানুষের শরীর থেকে রক্ত চুষে খায়। বহু বছর ধরে ভ্যাম্পায়ারের কাহিনী মানুষকে আলোড়িত করেছে। কোথাও কোথাও রক্তহীন ফ্যাকাশে ছেলেদের দেখলে মনে করা হত এরা বুঝি ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়েছে।

সেই সব গা শিউরানো কাহিনী। গভীর রাতে কবর থেকে উঠে আসে প্রেতাত্মা। তখন চারপাশের পরিবেশ থাকে কেমন রহস্যময়। বাদুড়ের মত বিরাট পাখা ছড়িয়ে নিঃশব্দে উড়ে যায়। পেট ভরে রক্ত পান করে আবার কফিনের ভেতর গিয়ে শুয়ে থাকে।

রহস্য গল্পের বাইরে কি এই প্রাণীর কোন অস্তিত্ব আছে?প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে এ খুব কৌতুহলের বিষয়। এক ধরনের বাদুড় আছে যারা প্রাণীদেহ থেকে রক্ত চুষে খায়(প্রকৃতপক্ষে এরা রক্ত চুষে না;প্রথমে কামড়ে নেয়,এরপর চেটে খায়)। রক্তচোষা বাদুড় খুব দুষ্প্রাপ্য প্রাণী। সহজে ওদের দেখতে পাওয়া যায় না। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাগ্রোস উপত্যকায় আছে।

এরা থাকে এক পাহাড়ি গুহাতে। খুব দুর্গম অঞ্চল। সহজে সেখানে যাওয়া যায় না। জায়গাটা পানামাতে। ঐ উপত্যকার আশেপাশের এলাকা জনমানবশূন্য।

আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের কথা। দু’জন জীববিজ্ঞানী ভ্যাম্পায়ারের খোঁজ করছেন। তাঁরা গেলেন পানামার গভীর জঙ্গলে। পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তাঁদের কাছে তথ্য আছে ড. ক্লার্ক নামের এক চিকিৎসক ঐ এলাকা থেকে এর আগে কয়েকটি রক্তচোষা বাদুড় সংগ্রহ করেছেন।

ড. ক্লার্ক পানামার পাহাড়ি অঞ্চলে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করতে। ঘোড়ায় করে গিয়েছিলেন। থাকতেন তাঁবু খাঁটিয়ে। গ্রামের আদিবাসীরা তখন রোগ হলে ঝাড়ফুঁক করত। ড. ক্লার্ক চাইছিলেন ওরা আধুনিক চিকিৎসা করাক।

একদিন দেখলেন তাঁর ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবসময় কেমন ঝিমাতে থাকে। গ্রামের লোকেরা বলল ও হল গিয়ে প্রেতাত্মার কাজ। রাতে এসে চুপিচুপি রক্ত খেয়ে যায়। একদিন ড. ক্লার্ক দেখলেন কয়েকটি ছোট ছোট বাদুড় ঘোড়াটি গায়ে বসে রক্ত চুষে খাচ্ছে।

ধরে ফেললেন প্রাণীটিকে। ছোট আকারের বাদুড়। লালচে বাদামী রঙে সমস্ত শরীর ঢাকা,রয়েছে সূঁচালো দাঁত। ড. ক্লার্ক ছিলেন বড্ড কৌতুহলী। তিনি শুনলেন এ বাদুড় থাকে এক পাহাড়ি গুহাতে।

সেখানে লোকজন সহজে যেতে চায় না। জনমানবশূন্য এলাকা। কেমন থমথম করে। সাহস করে ড. ক্লার্ক একদিন সেখানে ঢুকলেন। কয়েকটি ভ্যাম্পায়ার বাদুড় ধরে আনলেন।

প্রাণীবিজ্ঞানী দু’জন প্রথমেই খোঁজ করলেন ড. ক্লার্কের। তাঁর আগে এ ধরনের গুহাতে আর কেউ যাননি। ড. ক্লার্কের কাছ থেকে জেনে নিলেন পথের হদিশ। চ্যাগ্রোস উপত্যকায় কয়েকটি চুনা পাথরের পাহাড় রয়েছে। সেই পাহাড়ের অন্ধকার থমথমে গুহার ভেতরে ভ্যাম্পায়ারদের বাসা।

দিনের আলো সেখানে সহজে প্রবেশ করে না। তাতে রয়েছে জমাট অন্ধকার। বিজ্ঞানী দু’জন অনেক কষ্টে এলেন চ্যাগ্রোস উপত্যকায়। খুঁজে বের করলেন সে পাহাড়। তার ভেতরে থিকথিকে অন্ধকার।

জোর প্রস্তুতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। বিজ্ঞানীরা তৈরিই হয়ে ছিলেন। তাঁরা সাথে সাথেই এক রহস্যময় অন্ধকার রাজ্যে প্রবেশ করলেন। বাইরের পৃথিবীর আলো মিলিয়ে গেল। দু’পাশে পাথুরে দেয়াল।

লম্বা একটি সুড়ঙ্গের মত গুহাটি। ভেতরে ভ্যাঁপসা গরম। কেমন বিছিরি একটা গন্ধ। মৃত পশুদের দেহ পচে এমন গন্ধ হয়েছে। তাঁরা হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে চলেছেন।

এমনিভাবে অনেকখানি হাঁটার পর তাঁরা এক চওড়া গুহায় এসে পড়েছেন। অমনি দেয়ালে ঝুলে থাকা অনেক বাদুড় একসাথে চেঁচিয়ে উঠল। টর্চের আলোতে গুহার দেয়াল দেখা গেল। প্রচুর বাদুড় ঝুলছে। আকারে বড়।

এগুলো ড. ক্লার্কের সেই রক্তচোষা বাদুড় নয়। সেগুলো অনেক ছোট। গুহার অন্য কোথাও আছে বোধহয়। আর সামনে এগুনো যাচ্ছে না। আরো শক্তিশালী আলো চাই।

তাঁরা ঠিক করলেন এরপর আরো শক্তিশালী হয়ে ঢুকবেন। সেদিনের জন্য গুহা থেকে বের হয়ে এলেন তাঁরা। গুহার কাছেই তাঁবু খাঁটিয়ে রাত কাটালেন। চুনা পাথরের গুহাটি যেন বিশাল ডাইনোসরের মত মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাঁদের বাক্সে আরো শক্তিশালী টর্চ ছিল।

প্রথম দিন তাঁরা কল্পনা করতে পারেননি গুহার মধ্যে কেমন অন্ধকার। পরদিন তাই কোমর বেঁধে আবার রওনা হলেন। সাথে নিলেন পাখি ধরার জাল আর শক্তিশালী টর্চ ও হেলমেট। গতকালের থেকেও সাবধানে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অনেকদূর যাবার পর হঠাৎ করে গুহাটা খুব সরু ও ঢালু হয়ে এল।

ফাটলের আনাচে কানাচে অসংখ্য পোকামাকড়। টর্চের আলোতে তাদের শরীর জ্বলজ্বল করছে। কত বিচিত্র তাদের আকার। প্রাণীবিজ্ঞানীরা অস্থির হয়ে উঠেন কখন দেখা পাওয়া যাবে সে প্রাণীদের। সামনে পথ আরো সরু ও ঢালু।

সাবধানে এগুতে হচ্ছে। তাঁরা কষ্ট করে নেমে নিচে এলেন। মাথায় জোর আঘাত পেলেন একজন। ঢালু সুরঙ্গটার শেষদিকে এখন হলঘরের মত একটি গুহা। সেখানে এসে আলো ফেললেন চারদিকে।

পাওয়া গেছে!এই সেই রক্তচোষাদের স্থান!দেখা গেল দেয়ালের গায়ে উপর দিকে পা দিয়ে নিচের দিকে মাথা দিয়ে ঝুলে আছে অসংখ্য বাদুড়। এই নিরীহ গোছের প্রাণীগুলোই তাহলে রক্তচোষা!বিজ্ঞানীরা বিস্ময় মাখা চোখে তাকিয়ে রইলেন। আলো দেখে তারা টিকটিকির মত দেয়াল বেয়ে পালাতে লাগল। অদৃশ্য হতে থাকল ফাটলের ভেতর। বিজ্ঞানীরা ভাবলেন এভাবে পালালে ত তাদের আর ধরা যাবে না।

আর এত কষ্ট করে এখানেও আসা হবে না। যেমন করেই হোক ধরতে হবে। বাইরের পৃথিবীর মানুষের জন্য ধরে নিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ গতিতে জাল দিয়ে ওদের ধরতে গেলেন। প্রাণীগুলো অসম্ভব ক্ষিপ্র।

চোখের পলকে তারা ফাটলের ভেতর ঢুকে পড়তে থাকল। বিজ্ঞানীরা ছোটাছুটি করছেন জাল হাতে। গুহার দেয়ালে আছড়ে পড়ছে জাল। টিকটিকির মত পালিয়ে যাচ্ছে রক্তচোষা বাদুড়গুলো। অনেক কষ্টে মাত্র দুটো ধরা পড়ল।

একটি আবার জালের আঘাতে আহত। ডানা ভেঙে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেল প্রাণীটি। বিজ্ঞানীদের হাতে এখন কেবল একটি জীবিত ভ্যাম্পায়ার। খুব সাবধানে বাঁচিয়ে রাখতে হবে একে।

সভ্য পৃথিবীর মানুষরা এতদিন শুধু ড্রাকুলার গা ছমছমে গল্প পড়েছে,এবার চোখে দেখবে। আবার সেই সরু সুরঙ্গ পথ দিয়ে আসা। দম চাপা পরিবেশ। বোঁটকা গন্ধ। হোঁচট খেতে খেতে এগিয়ে যাওয়া।

এখন অবশ্য বিজ্ঞানীদের আর ক্লান্তি লাগছে না। তাঁদের জালে আটকা পড়েছে এক রক্তচোষা বাদুড়! গুহার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলেন তাঁরা। বাইরে ঝকঝকে সোনালী আলো। যেন এক মৃত্যুপুরী থেকে ফিরে এলেন। চ্যাগ্রোস উপত্যকা থেকে নিউইয়র্ক দশ দিনের পথ।

এই দীর্ঘ যাত্রায় ভ্যাম্পায়ারটিকে বাঁচিয়ে রাখা বেশ কষ্টকর। অন্ধকারে রাখতে হবে প্রাণীটিকে,আলো সহ্য হবে না। রক্ত খেতে দিতে হবে,রক্ত ছাড়া কিছুই খাবে না। তাঁরা দুর্গম পথ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। ভ্যাম্পায়ারটিকে রাখা হয় এক খাঁচায়।

সেটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। প্রাণীটি কেমন যেন জবুথবু হয়ে আছে। তার চাই খাবার। পথে একটি ছোট হাসপাতাল থেকে দু’বোতল রক্ত নেয়া হল। তার থেকে ফাইব্রিন আলাদা করে ফেলা হল।

এবার রক্ত আর জমাট বাঁধবে না। পথে বাদুড়টিকে দেয়া হত রোজ আধ বোতল করে রক্ত। একটি কাঁচের পাত্রে রাখা হত,তা দেখে প্রাণীটি দোমড়ানো পায়ে টলমল করে এগিয়ে আসত। এরপর কুকুরের মত রক্ত চেটে খেত। এভাবে প্রাণীটিকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত আনা হল।

অন্ধকার গুহা থেকে আলো ঝলমলে শহরে। তাকে রাখা হল বিশেষ যত্নে। চিড়িয়াখানাতে তৈরি হল বিশেষ ঘর। আলো তাপ নিয়ন্ত্রিত। তার খাবারের জন্য সেখানে ঢুকিয়ে দেয়া হল আস্ত ভেড়া কিংবা ছাগল।

প্রাণীটি গিয়ে তাদের ঘাড়ে বসত আর ইনজেকশানের মত দাঁত দিয়ে রক্ত পান করত। পরে অবশ্য আরো কিছু ভ্যাম্পায়ার বাদুড় ধরা পড়েছিল। গল্পের সে ভয়ঙ্কর প্রাণীটি বাস্তবে দেখতে খুবই সাধারণ! রেফারেন্স : আলী ইমামের ‘রহস্যের খোঁজে’ রহস্য বিষয়ক আমার আরো কয়েকটি পোষ্ট : ১. 'হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা' নিশ্চয়ই পড়েছেন?এবার তাহলে জানুন এর কাহিনী সত্য নাকি মিথ্যা! ২. মুসা ইব্রাহীমের কীর্তির কথা মনে আছে?যদি থাকে,তবে জানুন তাঁর খ্যাতি পাবার স্থান হিমালয়ের এক রহস্যের কথা!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।