আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ২০ জানুয়ারী, শহীদ আসাদ দিবস

>>>বৈশাখের ঐ রুদ্র ঝড়ে আকাশ যখন ভেঙ্গে পড়ে, ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায়...<<<
আজ ২০ জানুয়ারী, শহীদ আসাদ দিবস। তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নির্দেশে ১৯৬৯ সালের এই দিনে স্বৈরশাসন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার রাজপথে শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদ। নিহত হন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় একজন বীর সন্তান। সে সময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স এর ছাত্র এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা হল শাখার সভাপতি। ১৯৪২ সালে নরসিংদী জেলার শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ আসাদ।

তাঁর পুরো নাম আমানউল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির দেয়া আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ১১ দফা আন্দোলন চরমে উঠে। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল ডাকা হয়। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান ২০ জানুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহরে চার জনের বেশি লোক একসঙ্গে হলে তাদের গ্রেফতার করা হবে।

২০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী জড়ো হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ১১ দফা দাবিতে শহরে মিছিল বের করে। মিছিল মেডিকেল কলেজের সামনে এসে পৌঁছলে পুলিশ বাঁধা দেয়। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে আসাদসহ কিছু ছাত্র আবার মিছিল সংগঠিত করে ঢাকা হলের (শহীদুল্লাহ হল) পাশে দিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।

তখন পুলিশের এক কর্মকর্তা আসাদকে বেয়নেট দিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেলের বর্তমান জরুরি বিভাগের সামনে আসাদ শহীদ হন। আসাদের মৃত্যুর খবর সারা শহরে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছুটে আসে।

অসংখ্য শোক মিছিল বের হয়। আসাদ হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবচেয়ে বড় মিছিলটি বের হয়। এ মিছিল ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করার সময় সাধারণ মানুষ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিছিলে যোগ দেয়। আসাদ হত্যার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি তিন দিনের শোক পালন করে। ২৪ তারিখ হরতাল দেয়া হয়।

সেই দিনের মিছিলে আবারো পুলিশ গুলি করে। পুরো পরিস্থিতি গভর্নর মোনায়েম খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তুমুল গণআন্দোলনে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন জায়গায় আইয়ুব খানের নামে স্থাপনা ভেঙ্গে সেখানে শহীদ আসাদের নাম জুড়ে দেয়। সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়ায় প্রবেশের তোরণের নাম আইয়ুব গেট থেকে পরিবর্তন করে আসাদ গেট রাখা হয়।

আর আইয়ুব এভিনিউয়ের নামকরণ করা হয় আসাদ এভিনিউ। আর এভাবেই তিনি বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি আজও এক সাহসী প্রতীক হয়ে আছেন। তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট। এক নজরে শহীদ আসাদ (এই অংশটুকু ও ছবি দুইটি shaheedasad.com থেকে হুবহু সংগৃহীত) নাম : আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান পিতার নাম : আলহাজ্ব মাঃ মোহাম্মদ আবু তাহের বি.এ.বি.টি গ্রাম : ধানুয়া থানা : শিবপু্র জেলা : নরসিংদী জন্ম : হাতিরদিয়া, ১০ জুন, ১৯৪২ মৃত্যু : ঢাকা, ২০ জানুয়ারী, ১৯৬৯ জন্ম ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ১৯৪২ সালের ১০ জুন তারিখে হাতিরদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

সে বছর হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। পিতা আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বি.এ.বি.টি. ঐ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাষ্টার হিসেবে তখন হাতিরদিয়ায় কর্মরত ছিলেন। সাবেক ঢাকা জেলার, বর্তমানে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত নিষ্ঠাবান মুসলিম পরিবারে আসাদের জন্ম। আসাদের পিতা এতদঞ্চলের এক কিংবদনন্তি পুরুষ, যিনি একাধারে একজন আরবী শিক্ষিত আলেম, বৃটিশ আমলে গুটি কতক ইংরেজী শিক্ষিত লোকের মধ্যে সে এলাকায় প্রথম মুসলমান গ্রাজুয়েট, অনগ্রসর ও ডুবন্ত মুসলমান জাতির মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালাবার জন্য বৃটিশের গোলামী বর্জন করে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন জীবনের ব্রত হিসেবে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ চরিত্রবান, আদর্শ শিক্ষক, অলীয়ে-জামান, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।

৯৬ বৎসর বয়স পর্যন্ত মাওলানা সাহেব শিবপুর এলাকা আলো করে বেঁচে ছিলেন। ১৯৯৬ সনে ২৫ জানুয়ারী তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরিবার আসাদের বিশেষ চারিত্রিক গুণাবলীর সঠিক ধারণা পেতে হলে তার স্বনামধন্য পিতার কিছু চারিত্রিক গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তিনি জীবনে কোনদিন মিথ্যা বলেন নাই, ধুমপান করেন নাই, নিজের ছবি উঠান নাই, নামাজ কাজা করেন নাই বা দেরিতে নামাজ পড়েন নাই, ওয়াদা ও আমানতের বরখেলাফ করেন নাই। পিতার আদর্শে গড়া আসাদও অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও নামাজী ছিলেন।

বাড়ির শতবর্ষী মাদ্রাসায় অভিজ্ঞ ক্বারী ও হাফেজ সাহেবদের কাছে আসাদ শুদ্ধ কোরান পাঠ আয়ত্ব করেছিলেন। আসাদ ছোট কাল থেকেই ছিলেন সদালাপী, যৌবনে আদর্শ চরিত্রবান, নিষ্ঠাবান সংগঠক এবং নিবেদিতপ্রাণ দেশ প্রেমিক। লম্বা হালকা গড়ন, সুদর্শন এবং সদা হাসি খুশি চেহারার আসাদ তাঁর বিনয় নম্র ব্যবহারের জন্য সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন। আসাদের মাতা মরহুমা মতি জাহান খাদিজা খাতুন ছিলেন একজন শিক্ষয়িত্রী। তিনি আসাদের জন্মের পূর্ব পর্যন্ত নারায়নগঞ্জ আই.ই.টি (ইসলামি এডুকেশন ট্রাষ্ট) গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী ছিলেন।

তাঁর ছয় পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে আসাদ ছিলেন চতুর্থ। তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। শিক্ষা বাল্যকাল থেকেই আসাদ পিতার শিক্ষকতাধীনে শিবপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন এবং ১৯৬০ সনে পিতার স্কুল থেকেই মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬১ সনে ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে বড় তিন ভাইকে অনুসরন করে বিজ্ঞান পড়ার জন্য আই.এসসি ভর্তি হন এবং এক বছর এখানে লেখাপড়া করেন। আসাদের বড় ভাই কে.এম.খুরশীদুজ্জামান সাহেব একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।

ইতিমধ্যে তিনি জেলা মৎস কর্মকর্তা হিসাবে সিলেট বদলি হন। আসাদ তখন বড় ভাইয়ের কর্মস্থল সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে গিয়ে আই.এসসি ভর্তি হন। উক্ত কলেজে পড়া অবস্থায়ই আসাদ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে পরিবারের অজ্ঞাতে বিজ্ঞান পড়া ছেড়ে দিয়ে আই.এ ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে ঐ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স সহ বি.এ ভর্তি হন।

সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় সিটি ল কলেজে এল.এল. বি ক্লাশে ভর্তি হন। সিটি ল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ড.আলীম-আল-রাজী বার-এট-ল। আসাদ তাঁর অতি প্রিয় ছাত্র ছিলেন। একই সময়ে আগের পরীক্ষার ফলফল আশানুরূপ না হওয়ায় ঐ বছরই দ্বিতীয়বার মানোন্নয়ন-মূলক এম.এ পরীক্ষা দেন।

কিন্তু জীবদ্দশায় এই পরীক্ষার ফলাফল আসাদ দেখে যেতে পারেন নাই। রাজনীতি আসাদ ছিলেন তৎকালীন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং মৌলানা ভাসানীর অনুসারী। ছোট বেলা প্রতিবাদী আসাদ স্কুল ও কলেজ জীবনে পুরোপুরি রাজনৈতিক অঙ্গনে জড়িত না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সর্বোতোভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রনেতার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে অল্প দিনের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্দান ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা হল শাখার সভাপতির মত গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিত হন। তৎকালীন ন্যাপ এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা ভাসানীর অনুসারী আসাদ ১৯৬৭ সনে এম.এম পাশ করার পর তারই নির্দেশে কৃষক সমিতি সংগঠন করার জন্য গ্রামে চলে যান।

। মাত্র এক বৎসরের মধ্যে তিনি শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা, নরসিংদী অঞ্চলে ব্যাপক আকারে কৃষক সমিতি গড়ে তোলেন। "জাগরণী" নামে একটি সাংস্কৃতিক সংঘ এবং শিবপুর নৈশবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার নির্দেশে শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন ও অর্থ সংগ্রহের কাজ করতে থাকেন। ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে বাসত্দব রাজনীতিতে আসাদের কর্মকালের মেয়াদ খুবই অল্প।

এই সময়-কাল ছিল ১৯৬৭ সালে এম.এ পাশের পর হতে ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে মৃতু্যর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এরই মাঝে হাতিরদিয়ার ঘটনায় পুলিশী গ্রেপ্তার এড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছুদিন কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুর থানার আসমাতুন্নেসা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার ফলে আসাদ এত অল্প সময়ের মধ্যে যে বহুমুখী ও বিশাল সাংগঠনিক কাঠামো তৈরী করতে পেরেছিলেন তা এক বিস্ময়কর ব্যপার। ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, মাওলানা ভাসানী পূর্ব বাংলার হাটবাজারে হরতাল আহ্বান করলে আসাদ সেদিন শিবপুর ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে হরতাল পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেদিন অত্র এলাকার বৃহত্তম বাজার হাতিরদিয়া হাটবার থাকায় সেখানে আসাদের নেতৃত্বে সর্বাত্নক হরতাল পালিত হয়।

হরতাল চলাকালে পুলিশের বাধা ও গুলির মুখে সিদ্দিকুর রহমান, মিয়া চান ও হাসান আলী নামে তিনজন কৃষক কর্মী নিহত হন, আহত হন আসাদ সহ অনেকে। আহত অবস্থায় সাইকেল যোগে ঢাকা আসার পথে ঘোড়াশালের কাছে আসাদ রাতের অন্ধকারে রাস্তার ধারে জঙ্গলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন। অনেকক্ষন পর তারই এক কৃষক কর্মীর সহায়তায় জ্ঞান ফিরলে ঢাকায় আসেন এবং হাতিরদিয়া ঘটনার খবর ঢাকার পত্রিকা অফিসগুলোতে পৌছে দেন। পরের দিন সকল দৈনিক পত্রিকায় ও আকাশ বাণী, কলিকাতা থেকে হাতিরদিয়ার ঘটনার খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়। এই ঘটনা পূর্ব বাংলার জনসাধারণকে বিদ্রোহী করে তোলে এবং তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তীব্র গতি সঞ্চার করে।

পূর্ব বাংলার আনাচে কানাচে আন্দোলনের বহ্নিশিখা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার ছাত্ররা এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তারা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন উচ্ছেদের জন্য সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং আন্দোলনের ১১ দফা কর্মসুচী ঘোষণা করে। এই আন্দোলন ক্রমে জোরদার হতে থাকে। আইয়ুব খানের বশংবদ মোনেম খান ও তার সরকার ছাত্র আন্দোলনের গতি রুদ্ধ করার জন্য ছাত্রদের উপর পুলিশী জুলুম চালু করে, তাদের মিছিল সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারী করে।

২০ জানুয়ারী পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি তারিখে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এক সভা আহ্বান করে। এতে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী যোগদান করে। সভাশেষে তারা পূর্বের জারীকৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে এক বিরাট মিছিল বের করে। মিছিলের একাংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের সামনের রাস্তা ধরে চানখার পুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় সশস্ত্র পুলিশ ও ইপিআর বাহিনী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বেলা আনুমানিক দেড়টার সময় মূল ঘটনা স্থলের অনতিদূরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের প্রধান ফটকের পাশের ফুটপাতের উপর বাহাউদ্দিন ডিএসপি নামের জনৈক পুলিশ অফিসারের পিস্তলের গুলি আসাদের বক্ষ বিদীর্ণ করে।

সাথে সাথে গুলিবিদ্ধ আসাদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আসাদ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে, আসাদের বড় ভাই ডা.এন.এম.মুরশীদুজ্জামান তাৎক্ষনিক একথা শুনতে পেয়ে দৌড়ে আসেন এবং আসাদকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। হাসপাতালের সব ডাক্তাদের সম্মিলিত চেষ্টা দিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পিস্তলের গুলি আসাদের হৃদপিন্ডের বাম নিলয় বিদীর্ন করেছে। ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ পরের দিন ২১ জানুয়ারী নিজ গ্রাম ধানুয়ায় পারিবারিক গোরস্থানে আসাদকে সমাহিত করা হয়। সেদিন ঢাকায় সকাল সন্ধ্যা স্বতঃস্ফুর্তভাবে এক অবিস্মরনীয় হরতাল পালিত হয় এবং পল্টন ময়দানে এক বিশাল গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে লক্ষাধিক লোক নগ্নপদে এক অভূতপূর্ব মৌন মিছিল বের ক'রে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। নামাজের পূর্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আসাদের মৃত্যু উপলক্ষে ২২,২৩ ও ২৪ জানুয়ারি এই তিন দিন "শোক কাল" হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রতিদিন হরতাল সহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালিত হয়। ২৪ তারিখে কর্মসূচীর শেষ দিবসটিতে প্রদেশ ব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকার রাজপথে লক্ষ লক্ষ জনতার রোষ এত তীব্র ও দুর্দমনীয় ছিল যে, সেদিন গণআন্দোলন একটি স্বতঃস্ফুর্ত গণ-অভু্যত্থানে রূপান্তরিত হয়। ফলে আসাদের মৃ্ত্যুর মাত্র দুই মাসের মধ্যে আইয়ুব খানের এক দশকের এক নায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে। আইয়ুব শাহীর পতনের প্রতীক হিসাবে ছাত্র জনতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সারা দেশে আইয়ুবের নাম ফলক সরিয়ে তথায় আসাদের নাম সংযোজন করে।

এভাবে আইয়ুব গেইট আসাদ গেইট, আইয়ুব এভিনিউ আসাদ এভিনিউ, আইয়ুব পার্ক আসাদ পার্কে নামান্তরিত হয়ে জনতার দেয়া নাম গ্রহণ করে। এরপর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পাকিসত্দান রাষ্ট্রের পতন ঘটে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শহীদ আসাদের নাম অমরত্ব লাভ করে।

। দেশবাসী ১৯৭০ এর প্রথম আসাদ-দিবসে শহীদ মিনারের অনতিদূরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশে মূল ঘটনাস্থলে "ঊনসত্তরের গণ-অভু্যত্থানেরর স্মারক ও অমর আসাদ" স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপন করে। এছাড়া আসাদের গ্রামবাসী তথা শিবপুরবাসী আসাদের প্রতি তাদের প্রাণঢালা গভীর ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ ১৯৭০ সালে আসাদের নামে শিবপুরে শহীদ আসাদ কলেজ স্থাপন করেছে। বর্তমানে ইহা একটি সরকারী কলেজ। কলেজের পাশেই আসাদের নিজ গ্রাম ধানুয়াতে শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাই স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়।

১৯৯১ সালে জাতীয় ভিত্তিতে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট "শহীদ আসাদ পরিষদ" পূণর্গঠিত হয়েছে। শোষণমুক্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা শহীদ আসাদের রাজনৈতিক দর্শন। তাঁর চিন্তা চেতনাকে এ প্রজন্মের কছে পৌছে দেয়ার জন্য এই শক্তিশালী সংগঠন কাজ করে চলেছে। shaheedasad.com এ শহীদ আসাদের জীবনীটি লিখেছেন প্রকৌঃ এফ. এম. রশীদুজ্জমান - শহীদ আসাদের অগ্রজ ; সময়ঃ জানুয়ারি, ১৯৯৬ । পুনঃলিখিত- জানুয়ারি, ২০১০ "একই শিরোনামে একই লেখা সম্বলিত পোস্টটি আমি গভীর রাতেও একবার দিয়েছিলাম।

কিন্তু পাঠক সংখ্যার দিক থেকে দিনেও আবার দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম তাই আবার এই পোস্টটি দিলাম। "
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।