বাদাম ভাঙার আওয়াজটা ঠিক যেন মাথার ভিতর গিয়ে আঘাত করছে। খুব কড়া চোখে তাকায় সে। ওর চোখে অবজ্ঞা ভরা হাসি, অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে পরবর্তী বাদামের জন্য হাত বাড়ানোর সময় আড় চোখে একবার দেখে নেয়; যুদ্ধের মাঠে প্রতিপক্ষের অবস্থান জেনে রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
একের পর এক বাদাম ভেঙে চলছে বোমার মত, এরপর ফু দিয়ে খোসা ছাড়ানো, কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া, তারপর নিক্ষেপ। অনেকটা ছন্দের মত আক্রমণ চলছে।
তুমি এখন যাও আমার সামনে থেকে।
এটা সরকারি জায়গা, বসে থাকা আমার নাগরিক অধিকার।
বসে থাকতে ইচ্ছা হলে চুপচাপ থাকো, আমার কালকে সেমিকন্ডাক্টর পরীক্ষা।
যুদ্ধ বিরতির এ পর্যায়ে কিছুক্ষণ নীরবতা, শুধু নিঃশ্বাস এর শব্দ আর কাগজে খসখস আওয়াজ।
তুমি যাও তো, যাও।
আমি concentrate করতে পারছি না, গিয়ে নাটক কর।
আমি বসে থাকলে concentrate করতে সমস্যা হয় তোমার?
হ্যাঁ হয়। তোমার না আজকে রিহার্সাল আছে? যাও, নাটক করতে যাও।
ঘণ্টা দুই পার হয়ে গেল, কোন যুদ্ধ নেই, কেউ নেই, অথচ মাথায় পি-টাইপ, এন-টাইপ কিছুই ঢুকল না, একটা কার্ভ ও মাথার ভিতর দিয়ে গেল না। আজকের দিনটাই মাটি এবং কালকের পরীক্ষাও।
একধরণের বিষাদ মিশ্রিত অসহায়ত্ব নিয়ে টিউশানির বাসার দিকে রওনা। যুদ্ধের আরেক অধ্যায় এর সূচনা।
রাত দশটার দিকে খাওয়া দাওয়ার পর যখন আবহাওয়া অনেক শান্ত, বই খাতা নিয়ে আরেকবার চেষ্টা। একটা কিছু তো করতে হবে, কালকে পরীক্ষা বাতিল হবে এই রকম কোনই সম্ভাবনা নেই। কিন্তু দুপুরের গোলা গুলোর তেজস্ক্রিয়তা এখনও ভালই কাজ করে যাচ্ছে।
আচ্ছা উঠে যাবার সময় কি ওর চোখ টা একটু ঝাপসা লাগছিল? তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব দুই পক্ষেই থাকে যুদ্ধে। সব গোলাই সমানভাবে নেমে আসে মাটিতে, গ্যালিলীও তো অনেক আগেই তা বলে গেছেন।
সিগারেটটা নিয়ে মিনিট দুয়েক ধরে দেশলাই খোঁজা চলছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। রাগটা ঠিক কার উপর করা উচিত? নিজের উপর, বাদামের উপর, নাকি দেশলাই? ভিতরের ক্রোধের কোন বহিঃপ্রকাশ যদি থাকতো, সম্ভবত শুধু নিজের হাতের টাই না, পুরা হলের সবার সিগারেটই জ্বলে যেত।
এরকম চূড়ান্ত পরিস্থিতিতেই ফোনটা আসল।
৫/৬ সেকেন্ড হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকা এবং অনেকগুলা সাইন কার্ভের আনাগোনা।
হ্যাঁ বল।
হ্যালো, পড়া হয়েছে?
হচ্ছে।
পরীক্ষা শেষ কটায়?
১২ঃ০০
দেড়টায় ক্যাফেতে থাকবো, আর আমার কলমটা রয়ে গেছে।
নিয়ে আসা হবে।
মনে করে ঘড়িটাও নিয়ে যেও পরীক্ষার হলে।
'ল' গুলো ঠিক যেন পিসার হেলানো মন্দির।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।