আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আদিবাসীবান্ধব কর্মসূচি চাই



আদিবাসীদের বাদ দিয়ে সরকারের দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব নয়। তাই কথিত আদিবাসীবান্ধব সরকারের পরিবর্তে বাস্তবের আদিবাসীবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সরকারকে আগামী দিনে আদিবাসী প্রসঙ্গটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। মহাজোট সরকারের দুই বছর পূর্ণ হয়ে গেল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই গত নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ তাদের অধিকার প্রদানের কথা বলেছিলেন। মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তার দিনবদলের সনদ বলে খ্যাত নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের অধিকার প্রদানের বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল।

শুধু আদিবাসী নয়, পুরো দেশই আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহার দেখে চমকিত হয়েছিল। সবার অংশগ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, তা আদিবাসীসহ এ দেশের আপামর জনসাধারণ সাধুবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু আদিবাসী উন্নয়ন প্রশ্নে, আদিবাসী অধিকার প্রশ্নে সত্যিকারভাবে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত সরকার কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৮-এর ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে_ 'ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, আদিবাসী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মান-মর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনী অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে।

সংখ্যালঘু, আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠী এবং দলিতদের প্রতি বৈষম্যমূলক সব ধরনের আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার অবসান করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের জন্য চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ' আদিবাসীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, চা শ্রমিক ও দলিতদের সমান অধিকার বাস্তবায়নের যে কথা ইশতেহারে বলা হয়েছে, তা মহাজোট সরকারের দুই বছর অতিবাহিত হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ সেরূপভাবে নজরে আসেনি। আদিবাসীদের উন্নয়ন করতে হলে প্রথমেই তাদের দেশের সংবিধানের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের যে প্রক্রিয়া, তাতে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটি হলো ভূমি কমিশন গঠন করে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আদিবাসীদের বারবার দাবি সত্ত্বেও এই ভূমি কমিশন গঠনেরও কোনো অগ্রগতি নেই। তদুপরি আমরা দেখেছি, গত বছর নওগাঁর নিয়ামতপুর, রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ দেশের আরও অনেক জায়গায় বেশ জোরেশোরে ভূমিদস্যুরা আদিবাসীদের বসতভিটা, চাষের জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে। আদিবাসী গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতেও অনেক সংবাদ প্রচার হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে ওইসব জায়গায় কোনো ধরনের প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। কোনোরূপ তদন্ত কমিটিও জোরালোভাবে গঠিত হয়নি। চাকরি ক্ষেত্রে আদিবাসীদের সুযোগদানের কথা বললেও গত দুই বছরে খুব কমসংখ্যক আদিবাসী সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পেরেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দু'একটা করে আসন বাড়ানো ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সব শিক্ষার ভিত্তি। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের কথাটি এই শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে। সংশয় হলো, অনেক কিছুই কাগজে-কলমে থাকে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না। তাই এবারের শিক্ষানীতিতে বর্ণিত কথাগুলো শুধু লিপিবদ্ধ অবস্থায় যাতে না থাকে, সে ব্যাপারে সরকার আন্তরিক হবে বলে আশা করছি। সরকার গত বছর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০ প্রণয়ন করেছে।

এ আইনটি প্রণয়ন করার আগে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে 'আদিবাসী' শব্দটির পরিবর্তে এ আইনে 'ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী' ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে দিনবদলের ইশতেহারে, এমনকি ওই আইনেরও বেশ কিছু জায়গায় আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দের ব্যবহার আদিবাসীরা আজও মেনে নেয়নি। এ আইনে দেশের অনেক আদিবাসীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে পরে ওইসব বাদপড়া আদিবাসী নানা সমস্যায় পড়েছে।

এখন পর্যন্ত ওইসব বাদপড়া আদিবাসী অন্তর্ভুক্তের বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। আদিবাসীদের বাদ দিয়ে সরকারের দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব নয়। তাই কথিত আদিবাসীবান্ধব সরকারের পরিবর্তে বাস্তবের আদিবাসীবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সরকারকে আগামী দিনে আদিবাসী প্রসঙ্গটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। সংবিধানে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেই তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে বা আদিবাসীরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে, এমনটিও নয়।

কিন্তু এতে করে আদিবাসীরা নিজেদের পায়ের তলার মাটি খুঁজে পাবে। এখন প্রশ্ন হলো দিনবদলের সনদের রূপকার এই মহাজোট সরকার আদিবাসীদের আর কতদিন অধিকারহীন মানুষ করে রাখবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.