রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ও বরিশাল বিভাগে ১২১টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়ে গেলো। এর মধ্যে ১২ তারিখে রাজশাহী ও রংপুরের নির্বাচন শান্তিপূর্ন হয়েছে। কিন্ত ১৩ তারিখের খুলনা-বরিশালের নির্বাচন ছিল যথেষ্ট গোলযোগময় ও কারচুপিতে ভরা। কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের এজেন্ট বের করা, ভোট কাটা থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং অফিসাররা আগে থেকে সিলও মেরে রেখেছিলেন- সরকারী দলের প্রার্থীর পক্ষে।
এরপরের ধাপে ১৭ জানুয়ারী ঢাকা বিভাগ ও ১৮ তারিখে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১২২টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে।
হয়ে যাওয়া দুই দিনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি হলো- প্রথম দিনে সরকারের চালাকি এবং দ্বিতীয় দিনে আসল অবস্থানে ফিরে যাওয়া। প্রথমে সরকার জনগনকে খাওয়াতে চেয়েছে- বর্তমান কমিশন নিরপেক্ষভাবে ভোট নিচ্ছে, এ ধারনার উপরে বাকীগুলো চালিয়ে দেয়া যাবে। তাছাড়া সরকার দেখতে চেয়েছিলো, রাজশাহী বিভাগ বিএনপির ঘাটি, সেখানে বিএনপি কেমন ফলাফল করে। আর রংপুরে জাতীয় পার্টি কেমন করে। প্রথমটিতে সফল হলেও দ্বিতীয় ইস্যুতে সরকার আশাহত।
আরেকটি অবাক করার বিষয়- এত মারধর, মামলা-হামলা জেল-জুলুমের পরেও বিএনপির অবস্থান এতটা সুদৃঢ়, আবার জামায়াত পেয়েছে ৫টি- এটা সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। বলা চলে, সরকারের মধ্যে আতঙ্ক ধরে গেছে। সামনের ২দিনের নির্বাচনের ফলাফল সরকারের বিপক্ষে গেলে সরকারের জনপ্রিয়তা ধস নেমেছে মর্মে দেশে বিদেশে মেসেজ যাবে, এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিরোধী দলের দাবীর ভিত্তি প্রতিষ্টিত হবে। অতএব, ১২ তারিখের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরপর ঐ রাতেই সর্বোচ্চ কর্তপক্ষ থেকে আদেশ গেলো- যে করেই হোক ফলাফল পক্ষে আনতে হবে। তাই ১৩ তারিখের খুলনা-বরিশালের নির্বাচনে দেখা গেলো সরকারী দলের শক্তির মহড়া।
কিন্তু ভোট কাটা ও অন্যান্য প্লান বাস্তবায়নে কম সময় পাওয়ায় কাজগুলো ঠিকমত সম্পন্ন করতে পারেনি। একারনে, বরিশালের কোথাও কোথাও ধরা পড়ে গেছে কারচুপি- এমনকি আলমারীতে রাখা আগে থেকে সিল দেয়া ব্যালটে পেপার সমেত। পর্যাপ্ত সময় থাকায় ১৭ ও ১৮ তারিখের নির্বাচনে সরকার তার সকল মেশিনারিজ ব্যবহার করবে, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য- এটাই দেখা যাবে।
পৌর নির্বাচনের গুরুত্বটা বরাবরই একটু বেশী। কারনটা হলো, পৌর এলাকায় বাস করে সমাজের Enlighten এবং সুবিধাভোগী শ্রেনীর লোক।
এ ভোটের ফলাফল সমাজের Class people ও শহুরে লোকের একটা জনমত- তথা ম্যান্টেট। যদিও কাগজে কলমে পৌর নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হয়। কিন্তু এটা এখন আর কাগজ ও সরকারী আদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বহু আগেই দেশ পরিস্কার দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। ব্যবসা-বানিজ্য, বিয়ে-শাদী, স্কুল-কলেজ, ছাত্র-শিক্ষক, চাকুরে-সৈন্য-পুলিশ-ডাক্তার, এমনকি ঘরের মধ্যেও।
মেরুকরনের এ দাপট স্থানীয় নির্বাচনে প্রবল- কেউ অস্বীকার করলেও কোনো ক্ষতি নাই। কারন, এটাই বাস্তব। সে কারনে পৌর নির্বাচনের ফলাফল কোন দিকে যায়, সেটা সরকারের মাথাব্যাথার কারন। বিরোধী দলও চায় সরকারের দুর্গে আঘাত করতে, আর সরকারী দল জোর করে নিয়ে গেলে এ থেকে সরকার পতন আন্দোলন।
সরকারের সামনে এখন মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ- সিট আনতে হবে পক্ষে।
আবার ধরা পড়াও যাবে না আকামে। ১৭ ও ১৮ তারিখের নির্বাচন আ’লীগের জন্য নিতান্তই অগ্নিপরীক্ষা। পার হয়ে গেলে গাজী, আর পাবলিকের হাতে ধরা পড়লে এক্কেবারে ‘জামিন নাই’।
সূত্রঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।