[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/faisalrocks_1362317154_1-480499_10200096367710576_1392961036_n.jpg]
১. 'এই ওঠ!' পাশ থেকে ডাক দিলো নিলয়দা। শুনে একবার তাকিয়ে পাশ ফিরে শুলাম আবার। সারারাত গান বাজনা মৌজ মাস্তি করার পর আর কি ভাল্লাগে!
'ওঠ!' এবার ডিরেক্ট লাত্থি! 'চটকানা খাবি?'
'কি হইছে?' চোখ ডলতে ডলতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ১১টা বাজে।
'স্টুডিওতে যামু...তমালরে রেডি হইতে কও। আর লগে ৫০০টাকা।
'
'তমালরে আপনে কন...আর ট্যাকা টুকা নাই!'
'সিগারেট আছে?' চোখ ইশারা দিয়ে বালিশের পাশে দেখিয়ে দিলাম। একটাই আছে। 'তমালরে তো টিএন্ডটি তে পাই না...বছরে ১৪মাস নষ্ট থাকে। ' ভুশশ করে ধোঁয়া ছেড়ে বলল। (তখন মোবাইলের যুগ ছিল না।
)
চান্স পেয়ে বললাম 'আমি বাসায় যামু! সন্ধ্যায় দেখা যাক কি অয়। '
'না গেলে কিন্তু মিস। ' হাসতে হাসতে বলল নিলয়দা। প্রানপনে শার্ট দিয়ে ভুড়ি ঢাকার চেষ্টা করছিলেন আরেক হাতে টুপি।
এই ফাঁকে তমাল হাজির।
খালি গা। গলায় ছোট্ট টাওয়েল। মাথা ভেজা। 'নিলয়দা কি যাবেন নাকি আজকেও?' ঠোঁটে সেই মিষ্টি লজ্জিত হাসি...হাত মাথা মোছায় ব্যস্ত।
'তুমি কহন উঠলা...আমারে ডাকও দিলা না!' বিছানা থেকে উঠে স্যান্ডেল পড়তে পড়তে বললেন।
কন্ঠে অভিযোগ।
'আরে ফোন আইছিল। বাইরে যামু। ' কন্ঠে একটা তাড়ার আভাস পেলাম।
'তাইলে লও একলগে যাই...অয় যাইবো বাসায় আর তুমি আমার লগে কাম শেষ অইলে আবার এক লগে আইয়া খেলা দেহুম।
' বুক পকেটে নিলয়দা প্রেসারের ওষুধ পাতি ঠিকমতো পকেটে ভরতে ভরতে বলল। অসম্ভব ক্রিকেট পাগল ছিলেন তিনি।
'নাহ! আর যাই কন বাংলাদেশের আর ভরসা নাই! আৎকা বাইরের বলে খুচা দিয়া আর কদ্দুর যাইবো কন?' গিটার মুছতে মুছতে রাগত স্বরে মতামত জানালো তমাল। 'চল। তোরে আমরা মোড়ে নামাইয়া দেই।
তুই যাইসগা। '
জুতা পড়ে তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসলাম। তিনজন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। নিলয়দার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে রিক্সায় তুলে দিলাম।
সেই শেষ।
আর হাত ধরার সুযোগ পেলাম না। এই ৫টি বছর ধরে শুধু ঐ স্মৃতিটাই ভাসে।
২.
বাংলাদেশের ছেলেপুলেরা প্রচুর গান শোনে। গান করেও। কিন্তু ভিতরে কি লালন করে তা আমার কাছে রহস্যময় মনে হয়।
আমি এখনকার মিউজিক কিছু বুঝি না। না দেশের, না বাইরের। গত ১০ বছর যাবৎ আমি কোন গান শুনিনি। সঙ্গীতজগৎ থেকে নির্বাসন নিয়েছি। অনেকে বলে "মিউজিক শোনেন না...তাহলে আর বুঝবেন কি?" কথা সত্য।
কিন্তু মনে মনে বলি 'আমি যা শুনেছি আর বুঝেছি...তার কতটুকু তোরা পেয়েছিস!'
আমার গান শোনার কান, গানের জন্য তৃষ্ণা তৈরী হয়েছিল সেই ১৯৭৮ সাল থেকেই।
আজ নিলয়দার মৃত্যু বার্ষিকী। ৫বছর আগে ঠিক এই দিনে উনি চলে গিয়েছিলেন। উনার মুখে হ্যাপি'র সেই রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো শুনতাম। আমি চাই প্রতিটি ঘরে ঘরে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের চাহিদা তৈরী হোক।
ঠিক যেমনটি নিলয়দা চাইতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।