সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য। আমার চলমান মেইল এড্রেস ঃ shimantodhk2010@gmail.com ,
প্রিয় শেয়ার ব্যাবসায়ি ভাই সকল ও সম্মানিত ব্লগারেরা, কেমন আছেন এই শীতের দুপুরে? সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো এখনো সুর্যের দেখা নেই। বাইরে তীব্র শীতের ঠান্ডা হাওয়া বইছে। শীতের কন কনে ঠান্ডা হাওয়ার সাথে যেন আমাদের মনটাও যেন জমাট বেধে আছে। হ্যা জানি অনেকের মনই ভালো নেই।
গতকালকের শেয়ার মার্কেটের পতনের কারনে অনেকের মনটাই খারাপ হয়ে গেছে। অনেকের বহু দিনের সঞ্চয় নিঃশেষ হওয়ার পথে। অনেকেই বিভ্রান্ত, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
প্রিয় ভাইয়েরা, আজকের এই মেঘলা আকাশের দিকে তাকান, ঠান্ডা হাওয়ায় সুর্য দেখা যাচ্ছে না। তাই আপনাদের মন বিষন্ন? কিন্তু ওই মেঘলা আকাশের পিছনেই সুর্য আছে।
সকল বিপদ আর ভয় কে ম্লান করে দিয়েই সুর্যের আলো দেখা যাবে। ভয়ের কিছুই নেই। আমি আপনাদের কে শেয়ার বাজারের শিক্ষা বিষয়ক কিছু দেয়ার জন্য আসিনি। বরং ফিউচার মার্কেট স্ট্রাটেজি নিয়ে কিছু বলার জন্যই এসেছি।
দেখুন ভাইয়েরা, দ্রব্য মুল্যের এই উর্ধ গতির দিনে মানুষ অনেকটাই দিশেহারা।
ঘরভাড়া, চিকিতসা, শিক্ষা, যাতায়াত সব কিছুরই অগ্নি মুল্য । চাকুরির বাজার সংকুচিত। ঘরে ঘরে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুন। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ নিয়ে শেয়ার মার্কেটে গিয়েছে কিছু রোজগার করার আশায়। গত দুই বছরে অনেকেই ভালো লাভও করেছেন।
আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই, কারন তারা ঘুষ, চুরি, সন্ত্রাসী বাদ দিয়ে সৎ পথে আয়ের জন্য স্ট্রাগল করছে। আমাদের শিক্ষিত তরুন ভাইয়েরা ভালো ভাবে আয়ের পথ পেলে অসত পথে যাবে না।
আমি নিচে যে কথা গুলো বলবো তা বুঝার জন্য দুইটা জিনিস মনে রাখতে হবে,
) বুলিশ মার্কেট=চাঙ্গা বাজার=তেজি বাজার। (ষাড় মার্কেট)
) বিয়ারিশ মার্কেট=মন্দা বাজার=ধ্বস বাজার। (ভাল্লুক মার্কেট)
গত কয়েকদিনে বাজারের পতন নিয়ে অনেকের বক্তব্য হচ্ছে এর পিছনে, এস ই সি, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই দায়ি।
কিন্তু তারা এই কথা বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটাকে কারেকশোন বলছে, যেটা স্বাভাবিক বলেই দাবী করছেন।
কিন্তু আমি আমার অন্য ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাবসায়ী ভাইদের সাথেই গলা মিলিয়ে বলতে চাই এই পতনের জন্য সংশ্লিস্ট অথরিটিই দায়ী।
দেখুন আমি হাজার হাজার উদাহরন দেখাতে পারবো, তবে তার আগে কয়েকটা জিনিস আগে থেকেই আপনাদের ধারনা দিতে চাই। সেটা হলো, শেয়ারের মুল্য।
আপনি সেটা যে দামেই কিনেন বা নিয়ে যান সেটা আবারো তার যৌক্তিক মুল্যে ফিরে আসবে। কৃত্তিম ভাবে স্ফীত করা শেয়ারের দাম তার ন্যায্য মুল্যে ফিরে যাবেই। উদাহরন দেই বাজারের কে পি সি এল, ওসিএল শেয়ারের। এই শেয়ারের দাম বিডিং পদ্দতিতে অনেক হাই প্রাইস তার যৌক্তিক প্রাইস থেকে অনেক বাড়ানো হয়েছে, এগুলো নোংরা কর্পোরেট পলিটিক্স। আর সরাসরি লিস্টিং করার জন্য এটাকে এসইসি আর ডিএসই অনুমোদন দিয়েছে।
মার্কেটে যেদিন এই শেয়ার গুলো আসে তখন সেগুলোর পিই ছিলো ৭৫ এর বেশী। তখন সেই সব কর্পোরেট শয়তান গুলো কোথায় ছিলো? অথচ ৪০ এর বেশী পিই হলেই মার্জিন অফ, নেটিং অফ করে দেয়া হচ্ছে অতিমুল্যায়িত কথা বলে। কিন্তু ওরাই অতিমুল্যায়িত শেয়ারকে বাজারে আসার জন্য অনুমোদন দিচ্ছে। কেন? কেন এই দ্বি-মুখী আচরন?
বর্তমানে এই শেয়ার গুলোর প্রাইস ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। যারা প্রায় ৩০০ টাকা মুল্যে এই শেয়ার গুলো কিনেছিলেন তারা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে।
তখন এসইসি কোথায় ছিলো?
সাধারনত ১০০ টাকার ফেস ভেলুর শেয়ারের মুল্য কম মুল্যায়িত, ১০ টাকার শেয়ার অতিমুল্যায়িত। তাহলে এসইসি স্পিলিটের অনুমোদন দিচ্ছে কেন? স্পিলিটের অনুমোদন দিয়ে মার্কেট অতিমুল্যায়িত করার সুযোগ করে দিচ্ছে কারা? এই সব অথরিটি দ্বি-মুখি আচরন করছে কেন ?
আরো কয়েকটা কথা বলি, নভেম্বরের মাঝে হঠাত করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিক্লেয়ার করলো ডিসেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে সকল ব্যাংক কে তার মুলধন এডজাস্ট করতে হবে। শুরু হয়ে গেলো বাজারে ধ্বস আবার কয়েকদিন পরে ডিক্লেয়ার করলো জানুয়ারিতে এডজাস্ট করতে হবে। শুরু হয়ে গেলো বাজার আপ। কিন্তু মাঝ খানে এই ডিক্লারেশোনে অনেক বড় বড় কর্পরেট ইনভেস্টর রা কম দামে শেয়ার কিনে নিলো।
কার স্বার্থে এই ডিক্লারেশন দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক? কারা এর সুবিধা ভোগী? উদাহরন দিলে হাজার হাজার দিতে পারবো....সেই দিকে না যেয়ে আসুন কাজের কথায় যাই।
নোংরা কর্পোরেট দের সাথে খেলা করেই আমাদের কে টিকে থাকতে হবে। বিশ্বের অনেক স্টক মার্কেটেই এই রকম নোংরামী আছে। আমাদের কে আমাদের স্বার্থেই টিকে থাকতে হবে। আমাদের কৌশলগত অবস্থান আমাদের কে নিরাপদ রাখবে।
তাই এই মার্কেটে শিক্ষনীয় অনেক কিছুই আছে। যাক সে গুলো নিয়ে পরে আলোচনা করবো, কারন আমার লিখা অনেক বড় হয়ে যাবে, আর আপনাদের ধৈর্য চ্যুতি ঘটবে।
১৯৩২ সালে জন কেনেডি যখন নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটে বিজনেস করতেন তখন তার বন্ধু বলেছিলো শেয়ার বাজার অনেক চাঙ্গা আরো ইনভেস্ট করার জন্য। মার্কেট ছিলো চরম বুলিশ । কেনেডি বলেছিলেন শেয়ার বিক্রয় করার এখনই সময়।
তিনি সব শেয়ার বিক্রয় করে দেন। এর এক সপ্তাহ পরে আমেরিকার ইতিহাসে সব চাইতে বড় ধ্বস নামে। আর শুরু হয়েছিলো বিয়ারিশ মার্কেট। অর্থাৎ দীর্ঘ মন্দা। এই বিয়ারিশ মার্কেট প্রায় ৩ বছর স্থায়ী ছিলো।
অনেকে নিঃস্ব হয়ে যায়।
আমাদের শেয়ার মার্কেটেও ১৯৯৬ সালে ষাড় মানে বুলিশ প্রবেশ করেছিলো। বাজার ছিলো তেজী। সবার মনেই ছিলো অনেক আনন্দ ও খুশীর আমেজ । কিন্তু বাজারের নিয়ম অনুযায়ী আবার সেটা বিয়ারিশ হবেই মানে ভাল্লুকের প্রবেশ ঘটবেই।
সেই ৯৬ সালে ভাল্লুকের প্রবেশও ঘটেছিলো। আর শুরু হয়েছিলো চরম মন্দা। ইন্ডেক্স ৩০০০ থেকে নামতে নামতে ৪৫০ এ এসে ঠেকেছিলো। অনেকে থালা-বাটি নিয়ে শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। সেই ভাল্লুকের অবস্থান ছিলো প্রায় ১২ বছর।
সেটা ছিলো যন্ত্রনা দায়ক আর ভয়ানক দীর্ঘতম দুঃস্বপ্ন। ভাল্লুক চলে যাবার পরে আবার ষাড় এসেছে আমাদের মার্কেটে। যেমন শীতের পরে বসন্ত কাল আসে, প্রকৃতিতে আনন্দ আর সৌরভে ভরে যায়। ২০০৬ সাল থেকেই এই ষাড় টি আমাদের বাজারে ছিলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ২০১১ সালে কি আবারো ভাল্লুক চলে আসলো?
প্রিয় ভাইয়েরা, আমি যখন এই লিখাটি লিখছি, তখন মার্কেট যথেস্ট আপ হয়েছে।
এসইসি, সরকার থেকেও অনেক অনেক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই মার্কেট আপ কতো টুকু স্থায়ী আর পোক্ত সেটাই দেখার বিষয়। যদি গত কয়েকদিনের মার্কেটের ধ্বস কারেকশন হয়ে থাকে তাহলে বলার কিছু নেই। আর যদি সেটা বিয়ারিশ মার্কেট হয়ে থাকে , সেটাকে যদি কৃত্তিম ভাবে বুলিশ করার চেস্টা করা হয় তাহলে সেটা কতোটুকু টেকসই হবে তাও দেখার বিষয়। সেটাকে কৃত্তিম ভাবে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রোগীকে বাচিয়ে রাখার মতই ব্যাপার হবে।
আমাদের নরবড়ে আর ভঙ্গুর অর্থনীতি, রুগ্ন-ধুকে ধুকে টিকে থাকা শিল্প কারখানা গুলোর শেয়ারের মুল্য আকাশ ছোয়া। বিশ্বের অনেক অনেক শক্তিমান রাস্ট্র যাদের আছে অপরিসীম সম্পদ, উন্নত আর প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ শিল্পকারখানা। কিন্তু তারাও এই বিয়ারিশ মার্কেট কে থামাতে পারেনি। অনেকেই ব্যার্থ হয়েছে।
আমাদের স্বল্প পরিমান বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, আর ভাঙ্গাচোরা শিল্পের শেয়ার কে বিয়ারিশ বাজারে বুলিশ করার চেস্টা কতোটুকু স্বার্থক হয় সেটাই দেখার বিষয়।
আমাদের কে টিকে থাকার জন্য যথেস্ট কৌশলী আর মানসিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। মানসিক দৃড়তা আর লং টাইম ইনভেস্ট আপনাকে নিরাপদ রাখবে।
তবে একটি কথা , সু-সংবাদ, মার্কেটে আবারো বুল আসবে। সেটা দ্রুতই আসবে।
প্রিয় বন্ধুরা, আমার লিখা অনেক বড় হয়ে যাবে তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও অনেক কিছুই লিখতে পারলাম না।
আর অনেক কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারি না। ধীরে ধীরে সময় করে পোস্ট দিয়ে সব বিষয় গুলো ক্লীয়ার করবো। আল্লাহ হাফেজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।