আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়নবের পাজামা



স্কলারশিপ নিয়ে ইতালি যাবে শরীফ। যাওয়ার আগে জানের টুকরা জয়নবকে দেখেশুনে রাখার একপ্রকার নির্দেশ দিয়ে গেলো কুৎসিত দর্শন, কুচকুচে কালো কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো এরকম এক খুব কাছের বন্ধু- রাজীবকে। রাজীবের সঙ্গে জয়নব ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। আমরা দেখি। কেউ কিছু মনে করি না।

কারণ জানি, কাইল্যার সঙ্গে ঘুরলেও জয়নব আসলে কার! কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে- এক সপ্তাও যেতে পারেনি, মহাকেলেঙ্কারি ঘটে গেলো। কানে গরম বাতাস লাগার মতো খবর এলো, ওরা কলা খাওয়া অবস্থায় কলা বিভাগের ক্লাসরুমে ধরা পড়েছে! কলা বিভাগে দেড়টা দুইটার দিকেই ক্লাসরুম ফাঁকা হয়ে যেতো। প্রেমিকপ্রবর টাকা দিয়ে বিভাগের একজন গেটম্যানকে হাত করেছিলেন। ভেবেছিলেন, টাকা দিয়ে ‘পাক্কা পাহারাদার’ বসিয়েছেন। ফলে নো-চিন্তা-ডু-ফূর্তি-মুডে নিজের ঘর মনে করে নিরাপত্তা-নির্ভাবনায় নিশ্চিন্তে খেলাধূলায় মেতে উঠলেন।

কিন্তু বিধি বাম ছিল অথবা কামদেব রুষ্ট ছিলেন, প্রেমিক শরীফ তার পূজা করতো কিনা কে জানে! কিন্তু আমরা জানতে পারলাম নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেহুলার বাসর ঘরের মতো একটুখানি ছিদ্র ছিল- বিভাগের গেটম্যান ছিল দু’জন। একজনকে টাকা দিয়ে হাত করলেও অপরজনকে কার্যত করা হয়েছে আঘাত; খুব স্বাভাবিক কারণেই বঞ্চিতজন বঞ্চনার দ্রোহে বীরবিক্রমে নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান সব আক্ষরিক অর্থে ধূলায় লুণ্ঠিত হতে দেখে তিনি আর সইতে পারলেন না, কেয়ামতের আলামত দেখার আতঙ্ক নিয়ে জানিয়ে দিলেন বিভাগপ্রধানকে। বিভাগপ্রধান এরকম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার লোভ এবং ক্ষোভ কোনো কিছুই সংবরণ করতে পারলেন না। এক মুহূর্তও দেরি না করে সোজা চলে গেলেন ক্লাসরুমের দরজায়।

ধাক্কা মেরে ঢুকলেন। - দরজাতেই দুজন একজন হয়ে দাঁড়ানো ছিল ওরা। আকস্মিক দানবীয় ধাক্কায় কিছু না বোঝার আগেই দু’জন দুদিকে ছিটকে পড়লো। বিভাগপ্রধান কিছুক্ষণ কোনো থৈ পেলেন না। থরথর করে কাঁপলেন, পলকে চোরা চোখে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাপলেন এবং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ইংরেজিতে ‘গেট আউট’ বলে বাংলায় বললেন, ‘এক্ষুণি বের হয়ে যাও, বের হও, বদমাশ কোথাকার।

’ ওরা ঠিকঠাক হয়ে মিনিট কয়েক পরে একসঙ্গে বের হয়ে দু’দজন দু দিকে চলে যেতে চাইলো। কিন্তু তাদের পথ আটকে বলা হলো, ‘তোমাদের থাকতে হবে। ভিসি স্যারকে জানানো হয়েছে। আরও লোকজন আসছেন। তোমাদের কথা বলে যেতে হবে।

এই ক্যাম্পাস ছেড়ে একবারেই যেতে হবে। ’ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় জরুরি সভা বসে গেলো। যারা সাধারণত খুব দেরি করে আসে তারাও খুব তাড়াতাড়ি চলে এলো। সমবেত প্রায় সকলের চোখেই প্রায় সমান চঞ্চলতা। তবে প্রায় সকলেই কেউ কারু চোখের দিকে তাকানোর মতো করে তাকাচ্ছে না।

কাঠগড়ার আসামির মতো এককোণে জড়সড়োভঙ্গিতে পাশাপাশি দাঁড়ানো জয়নব-রাজীব। বিব্রত নতচোখ। উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে একপর্যায়ে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কলা বিভাগের প্রধানকে স্বয়ং ভিসি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলেন স্যার আপনি কি দেখলেন?’ প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘আমি আর কী বলবো! কী আর দেখলাম! দেখলাম- জয়নব এক জায়গায়, আর জয়নবের পাজামা আরেক জায়গায়। এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে আমার লজ্জা লাগছে। ’ একথার পর আর কোনো কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অথচ তারপরও যারা কোনো কিছুই দেখেনি, তারাও অনেকক্ষণ ধরে অনেক অনেক কথা বললো। এই ফাঁকে সমবেতজন একেকরকম রাগে ক্ষোভে লোভে মনে মনে এবং কেউ কেউ মুখে মুখে গর্জন করতে লাগলো। কেউ কেউ নারীজাতির গোষ্ঠি উদ্ধার করলো। শরীফের জন্য বুক চাপড়ালো। জয়নবের চরিত্রকে তুলোধুনো করলো।

তার রুচির সঙ্গে নানারকম ইতরপ্রাণির রুচিকে মেলাতে লাগলো। নারীকে শরীর-সর্বস্ব এক ভয়ানক যৌনতা-তাড়িত জানোয়ার হিসেবে প্রমাণিত করলো। এমনকি নারী-শরীরে মনের অস্তিত্ব নিয়েও অনেকেই সন্দেহ পোষণ করলো। কে একজন ভুল করে করে নজরুলের কবিতা আওড়াতে লাগলো কানের কাছে, এরা দেবী, এর লোভী, এরা যত পায়, তত চায় আরো, ইহাদের অতি লোভী মন, এরা একা নাহি হতে চায় কারো। এরা শুধু চায় ধন আর ধন।

একজন ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন ধন? ধোন ধন? অট্টহাসি শেষে কবিতাওয়ালা সশব্দে বললেন, দুটোই। একইসঙ্গে আমরা অদূরে ভাষণের সুরে জয়নব-রাজীবের বহিষ্কারাদেশ শুনলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.