ভালবাসতাম মেয়েটিকে। খুব ভালবাসতাম। মোবাইলে পরিচয় বন্ধুর মাধ্যমে। দশ ভাই বোন তারা। আমরা সাত ভাই বোন।
সে সপ্তম, আমি বড়। আমাদের খুব মিল। অনেক কষ্ট করে আমারা আজ শিক্ষিত।
আমার স্বপ্ন ছোট ছোট। তার গুলো আকাশসম।
আমার পরিবার নিয়ে সে অনেক বাজে কথা বলত। ভাল ছাত্রী বটে, কিন্তু অল্পতেই রেগে যেত। রাগলে আমাকে খুব গালাগাল করত। আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করত। আমি তাকে অনেক বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি।
বিনিময়ে কিছুই নেই নি। এমন কি তার স্পর্শটুকুও না। অর্থ বা অন্যান্য কারনে দেহটাকে আমি পেতাম ঠিক , কিন্তু পবিত্র ভালবাসার আমি অবমূল্যাযন করিনি।
আমি দরিদ্র, সেও। আমি প্রকৌশলী, সে মাস্টার্স।
সে ফাস্ট ক্লাশ ফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার ও রেজাল্ট ভাল। তার ভার্সিটিতে শিক্ষক হওয়া হয়নি লবিং নাই বলে, পি.এইচ.ডি হয়নি, এম.ফিল হয়নি। আজ সে একটা কলেজের শিক্ষক। পরিবারের ঘানি টানছে।
আমিও টানছি।
কেবল পার্থক্য আমি আজ বিয়ে করেছি , সে করেনি।
বিয়ের আগে তার কাছে কোন সদুত্তর পাইনি। সে তার ক্যারিয়ারের কথা সব সময় বলেছে। আজ কোথায় তার ক্যারিয়ার ! তাকে পাইনি বলে আমার দুঃখ নেই।
আমার দুঃখ অন্য জায়গায়।
তার ভাই বোন তার কোন খোজ করত না। তার দুলাভাই রা টাকার জন্য কুপ্রস্তাব দিত। এমন কি শিক্ষকরা পর্যন্ত তাকে কুপ্রস্তাব দিত। সে একবার একা একা সুদুর রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে এক শিক্ষকের বাসায় উঠেছিল।
আমার দেয়া জায়গায় না থেকে সে একজন মহান শিক্ষকের বাসায় উঠছিল। তিনি তাকে কোন কিছুর বিনিময়ে চাকরী দিতে চেয়েছিল। সে রাজি হয়নি। চাকরি টা তার হয়নি। আসার পর খুব কেদেছিল।
চাকরী তার হয়নি। উচ্চ শিক্ষাও হয়নি। আমার সাথে বিয়েও হয়নি। সে আজ একা। আমি জানি তার খোজ করার কেউ নেই।
কোথাও কেউ নেই তার। মাঝে মাঝে সে খুব অসুস্থ থাকলে আমাকে ফোন দেয় আর কাদে। আমি ও কাদি। আমার ভালবাসা সঠিক ছিল। আমার বিয়ে করাটাও সঠিক ।
সে আসলে কার ও সাপোর্ট না থাকায় ও কারো সাথে না মেশার কারনে বাস্তবতা সম্পর্কে জানত না।
আজ সে জানে কত আপন আমি ছিলাম। কতটা কাছের। আজ সে যে চাকরীটা করছে সেটাও আমার সর্বাত্বক সহযোগিতায়। তার চলার টাকা পয়সাও আমি দিতাম।
বিনিময়ে কিছুই চাইনি। চেয়েছিলাম ভালবাসা, তা আমি পাই নি।
সে অনেক উচ্চাভিলাসী, অহংকারী ছিল। না হলে নির্বোধ। না হলে এ যুগে এমন ছেলে যে কিনা এমন করে একটা মেয়ের সব লুটায়ে না নিয়ে তাকে শুধু ভালাবাসে !!!
বিয়ের কথা বলার সময় সে বলেছিল আমার মত ছেলে সে ১০০ টা পাবে ।
আজ সে আমার আরও কাচে আসতে চায়। কিন্তু আমি পারি না।
আসলে মেয়েরা যখন খুব উচ্চাভিলাসী হয় , তা খুব বিপদ জনক হয়। সে আমার মত ছেলের সব কিছু পায়ে টেলে দিয়েছিল।
আমি বিয়ে করলাম অনেক বড় ঘরে।
তারা আমার সব জেনেও আমাকে মেনে নিলেন। বড় লোকের মেয়ে , আমাকে ছাড়া , আমার পরিবার ছাড়া কিছুই বুঝেনা। কোন অহংকার নাই। কোন উচ্চাভিলাস নাই। গাড়ি,বাড়ি টাকা তার দরকার নাই।
সে শুধু ভালবাসা চায়। ভালবাসা।
আজ দু বছরে আমার বউয়ের কোন দোষ ত্রুটি আমরা কেউ পাই নি। আমার প্রতিবেশি , আমার বন্ধু-বান্ধব, আমার আত্মীয় স্বজন। সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
দেখতে সেই মেয়েটির চেয়ে অনেক সুন্দর। অনেক টাকা তাদের , গাড়ী বাড়ী সব আছে তাদের । এত বড় লোকের মেয়ে, এত সুন্দর, এত টাকা,এত উচ্চশিক্ষিত। অথচ মাটির মানুষ, এতটা মার্জিত। আমার সবাইকে সে আগরে রেখেছে।
কোন চাহিদা তার নেই। লোকে আমাকে বলে আমার জনম দুঃখি মা বাবার দোয়া আল্লাহ রেখেছে।
গত ১১ তারিখ আমাদের ২য় বিবাহ বার্ষিকি ছিল। আমাদের জিম ডেলার মত অবস্থা । অনেক কস্টে আমরা পরস্পরের অগোচরে উপহার দিয়েছি নিয়েছি।
টাকার অঙ্কে যা নিতান্তই ক্ষুদ্র। তার পরও সে গলা জড়িয়ে ধরে বরেছিল -"কিছুই চাই না , শুধু ভালবাসা চাই"
আজ আমার সে বউয়ের জন্মদিন (২৩-১২)।
মানুষে মানুষে কতটা বৈচিত্র, তাই না? আসলে মানুষ মানুষ ই। সেখানে ধনী গরীব ব্যাপার না। আমার এ ধারনা আজ ভুল যে ,সব সুন্দরী মেয়েরা, বড়লোকের মেয়েরা অহংকারী হয় !!
আমি ভাগ্যবান , কিন্তু তার কথা ভাবলে খুব কষ্ট লাগে ।
বুকের গভীরে ব্যথা লাগে । কারন সে যে খুব অসহায়। তাকে যে আমি খুব ভালবাসতাম। মাঝে মাঝে নিজেকে প্রতারক মনে হয়। হীন মন্যতায় ভুগি।
আবার তার খারাপ ব্যবহারের কথাও মনে পড়ে। তখন খুব খারাপ লাগে ।
আজ অনেকদিন থেকে কথা হয়না তার সাথে। কেমন আছে সে, কোথায় আছে সে তাও জানি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।