আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজার : বল্গাহীন ঘোড়া

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির গতিধারা। খাদ্য উৎপাদনের সাথে বাড়ছে মানুষের আয়। কমেছে দারিদ্র্যের হার। এটি দেশের গত দু’ দশকের খানিকটা চিত্র। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও খাদ্য নিরাপত্তা সেই চেনা বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

হুমকির বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি কাঙ্খিত খাদ্য নিরাপত্তা। চড়া দামের কারণে পুষ্টিকর সব খাবার প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। নিম্ন শ্রেণীর মানুষের পাত থেকে অনেক আগেই উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্যের জন্য উপাদেয় সব খাবার। মূলত, জনসংখ্যার উর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের মৎস্য ও কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের গড় আয়ের পরিধি বৃদ্ধি পেলেও আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে ক্রয়ক্ষমতা।

মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষের সব হিসাব-নিকাশ এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে সমাজের নিম্ন আয়ের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এবং কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৬-০৭ থেকে ২০০৯-১০ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি গড়ে ৭.৮ পার্সেন্ট হারে বজায় থেকেছে। এ বছর এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে এসে দাঁড়ায় ৮.৫১ পার্সেন্ট। সপ্তম বেতন স্কেল ঘোষণায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেড় গুণ বৃদ্ধি পেলেও যেমনি বাড়েনি বেসরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা তেমনি বাড়েনি রিকশাচালক, দিনমজুর ও কৃষক শ্রেণীর আয়।

দারিদ্র্য জর্জর এদের পরিবার-পরিজনেরা। এদের জীবনে বাসা বাঁধে না ‘সুখপাখি’। চরম দারিদ্র্যতা আর অনটন এদের নিত্যদিনের সাথী। আবার বাড়ছে বাজারদর এপ্রিল- জুন এবং আগষ্ট-সেপ্টেম্বরের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পর বিগত তিন মাস ধরে বেশ কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসে আবার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাজারদর।

গত এক মাসে বাজারে ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এর মধ্যে লাগামহীন হয়ে উঠেছে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দর । চালের দর কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল। গত কয়েক মাসের প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের স্থিতিশীলতা ও দেশে উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে শীতকালীন বাজারে আসতে শুরু করায় দাম কমেছে। তাই শুধু চালের দাম ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হয়নি।

গত এক মাসে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। বর্তমানে মোটা চাল ২৮-৩৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৩০-৩৮ টাকা, সরু চাল ৩৯-৪৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি আটার দর ৩৩-৩৪ টাকা। বিভিন্ন কম্পানির আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা। দুই মাস আগে দর ছিল ৫২-৫৬ টাকা।

তবে গত একমাসের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় ভোজ্য তেল ও আটার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ভোজ্যতেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। গতকাল কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯৬-৯৮ টাকা লিটার। একমাস আগেও এই তেল প্রতি লিটার ৭৮-৭৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

এ ছাড়া পাম তেল কেজিপ্রতি ৮৬-৮৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে বোতলে ভরা বিভিন্ন কম্পানির তেলের দামও। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় উদ্বেগ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এদিকে শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করায় স্বাভাবিকভাবেই কমেছে সবজির দর। তবে দাম বেড়েছে আলুর।

বাজারে আলুর কেজি এখন ২০-২২ টাকা। বাম্পার ফলন হওয়ায় দুইমাস আগেও পাইকারি বাজারে পাঁচ থেকে ছয় টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল আলু। এর প্রেক্ষাপটে এবছর আলুর দাম ১৫-১৬ টাকা কেজির মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই আলুর দাম বেড়ে এখন ২০-২২ টাকা কেজি। সারা দেশে বার্ড ফ্লুর প্রকোপ ও আতংক কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মুরগি ও ডিমের বাজার।

কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগি ৯০-১১৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, তবে গত দুই-তিন দিনে দাম কিছুটা কমেছে। কারওয়ান বাজারে দেশী মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায় । মুরগির মাংসের দামের সাথে সাথে গত এক মাসে মুরগির ডিমের দামও কমেছে। দুই মাস আগে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ২৮-৩০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৪ টাকা।

গরুর মাংসের দাম একটু বেড়ে ২৪০-২৬০ টাকা কেজি, খাসি ৪০০-৪৩০ টাকা। আর মাছের দাম বরাবরের মতই চড়া। অবশ্য কম দামের মধ্যে ১০০-১৫০ টাকা কেজির মধ্যে কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। কারওয়ান বাজার থেকে নিয়মিত বাজার করেন রাজধানীর রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। সামগ্রিক বাজার দর সম্পর্কে তিনি বলেন, 'যেসব পণ্য না হলে মানুষের দিন চলে না, বাজারে ওই সব পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে।

তবে গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামই বাড়তির দিকে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.