আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পপলিন চাঁদ ও ডিজেল মাহুতের রাত

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই

মেঘের ডিটারজেন্টে ধোয়া পপলিন চাঁদ ঝরে পড়ছে আকাশ থেকে । বাতাসের গায়ে লেগে আছে ঠান্ডা। গাছের ডালে লেগে আছে ঠান্ডা। চলন্ত ট্রাকের মাহুত ভাবলো জমে যাওয়া শরীরটাকে চাঙা করা জরুরী। ব্রেকে ডানপায়ের লাথি খেয়ে বাচ্চাবয়সী নেড়ি কুকুরের মতো কু-উ-উ প্রতিবাদে ট্রাকটা থেমে যায়।

টিনের লাইটারের টুপি খুলতেই লাফিয়ে ওঠে আগুন। মধ্য বাকুড়িয়া। ঠোঁটে একটা মতিহারী বিড়ি জোনাকের মতো জ্বালিয়ে জলদি ফিরে আসে। ঘন মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। রাত যত বাড়ে দৈত্যের মতো অন্ধকার তত পথ আগলে দাড়ায়।

বাতাসের অণু পথঘুরান্তি অশরীরির মতো চিৎকার করে, থাম থাম, পথের ধারে মরে পড়ে আছে কেউ। হয়তো সত্যিই কুয়াসায় কিছু পড়ে ছিল। কিন্তু থেমে যাওয়ার জন্য ট্রাকের জন্ম হয়নি। উত্তপ্ত কয়লার খনিতে কাজ করে শ্রমিকেরা। কয় বছর আগেও এত সরব ছিল না এই মফস্বল জনপদ।

খনিতে নেমে যাওয়া শ্রমিকদের দেহ উঠে আসে ক্লান্ত হয়ে, খরায় পাখনা ঝাপটানো কইমাছের মতো এক সময় তারা মরে পড়ে থাকে। কারো নজর পড়ে না । আদিগন্ত ক্ষেত, জলাভূমি, পাহাড়ী উঁচু নিচু ভাঁজ, এসব ঢাকার মতো পর্যাপ্ত শবদেহ এখনো প্রস্তুত হয়নি। ঝরে পড়ছে পাতা, ঘাসের উপর জমে থাকা ধুলোর পর্দায় মুষিকের আনাগোনা, চামচিকা ছাতার শিকের মতো পাখা গুটিয়ে ঝুলে থাকে হিজলের ডালে। ক্রোশ পার হলে অসীম যোগ চিহ্নের মতো ট্রেনলাইন চলে যাবে সমরপুর।

মৃতদেহগুলো সম্ভবত: সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র পকেটওয়ালা একটা খাকী জামা ছাড়া। ট্রাকের ইঞ্জিন ঘুর্ণনে সদম্ভে পিস্টন উঠছে নামছে । তড়িৎ ফুলকি দ্বিগুণ হচ্ছে । সে যেন ম্যানেজারের চাবুক খেয়ে ছুটে চলা সব্যসাচী ঘোড়া।

যন্ত্র বনাম মানুষের দখল চলছে চারদিকে। মাটিতে কংক্রিটে নতুন কারখানা উঠছে। কারখানার ড্রেনে মদের মতো লাল টকটকে পানিতে ঝিঝি পোকা ডাকছে, ধানক্ষেতের আ'লে তপসে ফড়িং শুয়ে শুয়ে দেখছে পরিত্যক্ত শ্রমিকদের ক্ষোভ আর যন্ত্রণা। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত পতঙ্গের সাক্ষ্য গ্রহন করে না। পাপের দায়িত্ব উল্টো পড়ে পতঙ্গদের ঘাড়ে।

মাস শেষে বেতনের দিনে সতর্ক পাহারা বসে। প্রতিরাতেই ভৌতিক কিছু ঘটে । মাস শেষে সাইকেল ভর্তি চোলাই মদ আনানো হয়। চা বাগানের কুলীদের মতো মাতাল হয় কারখানারর শেড। প্রাপ্ত বেতন গুনতে মাতালদের কষ্ট হয়।

সে উন্মাদনা এড়িয়ে হেডলাইটে ট্রাক চালক দেখছে ঠিক যতটুকু পথ তার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়ছে দশম বর্ষীয় সহচর কিশোরটি। পেটে তার বন্দরের ক্ষুধা। এখানে কোন খাদ্য নেই। চায়ের দোকানের ঝাঁপ তোলা।

চকচক করছে মৃত শহরের করোগেটেড টিন। পিছনে ট্রাক ভর্তি কাগজ মোড়ানো আমসত্ত্বের রোল। ভোরের আগে এসব পৌছে দিতে হবে ছাপাখানায়। পত্রিকার নিউজপ্রিন্টের বদলে পুষ্টিকর আমসত্ত্বে ছাপা হবে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। শোনা গেছে খাবনামার গদ্য এখনো ঠিক হয়নি।

জ্যোতিষীরা ঝিম ধরে আছে। ঘোলা কাচের ভেতর অল্প কিছু গল্প নির্মিত হয়েছে। যে স্বপ্নগুলো বাজারে খুব প্রিয় - কলসী নিয়ে জলপোহানো নারী, নোলকের ব্রীড়া, পাতাবাহারের গিফটকার্ড, জলবিয়োগের শুভদেয়াল। এসব দেখে অবশ্য নাগরিকদের ক্লান্তি মুছে যাবে। ছাপানো হবে গয়না নৌকা আর কুঁচফলের মতো রঙিন শিশুর ছবি।

গত কয়েক বছর ধরে কবিদেরও ট্রাক থাকে। ট্রাকের চাকা চুয়ে চুয়ে কালি ঝরে ফুলস্কেপ রাস্তায়। চলে দিন, মাস, ত্রিশ বা একত্রিশের গণিতে, বছর ঘুরছে দৈনিক একডিগ্রী কোণ করে। সময়ের অভাব নেই। তবু সময় আমাদের খুব প্রয়োজন।

সীল গালা করে ঋণের ব্যাংকনোট বয়ে যায় শত শত গাড়ি। রহিমাগঞ্জ রুটির কল চলছে - একটা বনরুটির গন্ধ ভেসে আসে নাকে। সামনে সিদ্ধচালের ভাতের মতো নরম পাড় ভাসিয়ে পাহাড়ী নদীর ঢল। ভোরের আলোয় গেওয়া কাঠের গুঁড়ি ভেসে আসলে ঐরাবতের মতো ঝট করে তুলে নিচ্ছে শ্রমিকেরা। দেশলাইয়ের প্রজাপতি ছাপা বাক্সে এসব আগুন বাজারে আসবে।

ট্রাক এসে নগরপালকে বললো মানুষ পচনের গন্ধ দূষিত করছে সড়ক। গন্ধটা ক্রমেই শহরের দিকে ধেয়ে আসছে। দুরালাপনীতে কয়লাখনির ব্যবস্থাপক নিশ্চিত করলো বাড়াবাড়ি রকম মানুষ মরেছে। পুলিশ বললো, -স্যার, আপনার ওখানে যে ন্যাপথলিনের বস্তা দিয়েছিলাম, দেন নাই? -দিয়েছি। তবে এই পতঙ্গগুলো অন্যরকম।

গায়ে গন্ডারের চামড়া। -কী বলেন স্যার? -বিপদ হয়েছে - ন্যাপথলিনের প্যাকেটেই এই পোকার জন্ম। সমানে পোকা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের জলদি উদ্ধার করেন। -গার্ড নাই? বন্দুক নাই? -এরাও পোকাদের দলে যোগ দিয়েছে কাল রাত।

পতঙ্গের ভয়ে আছি। পতঙ্গগুলো সংখ্যায় বড় হচ্ছে। আর বুলডোজারের মতো রক্তচোষাদের চুষে খাচ্ছে। দুর থেকে চিৎকার শোনা গেল আর ঠিক তখনই আমসত্ত্বের সুমিষ্ট গন্ধ ছাড়িয়ে নতুন সূর্যোদয় হচ্ছে। --- অর্থহীন জব্দের জট ।

ড্রাফট ২। ০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.