[অনুজ প্রতিম বন্ধু ব্লগার জাভেদ জামাল গত ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ আমাদের মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী স্যারের জীবনের একটি বিশেষ দিনের দিনলিপি উপস্থাপন করছি। ]
১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০১০।
রিকশার প্যাডলে পা ফেলতে ফেলতেই দিন পার হয় রহমত আলী স্যারের আজকাল। ৭০ ছুঁই ছুঁই তারপরও এই রিকশার প্যাডল মারাই ক্ষুধা মেটানোর একমাত্র যুৎসই পেশা তাঁর।
ভাড়া গুনতে গিয়েই বিপত্তি হলো যত। আমি একজন মু্ক্তিযো্দ্ধাকে চিনতে ভুল করেছিলাম(কারণ-ওনার কোন সার্টিফিকেট নাই,ওনার কোন লবিংও নাই যে ভদ্রলোক সেজে মিডিয়ার সামনে এসে কোন সেমিনার রুমে “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ”করবেন)তাই স্যারকে রিকশাওয়ালা ভেবেই জিজ্ঞেস করেছিলাম,রাজাকারদের বিচার এবং গার্মেন্টস কর্মীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি নিয়ে তিনি কি ভাবছেন। রহমত আলি হাসলেন,ভাবটা এমন তিনি রাজ্যের সব ঘটনা আগে থেকেই জানেন,নির্বাক থাকলেন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে। আমিও ভাড়া মিটিয়ে খামাখাই জ্ঞান বৈরাগ্যের ধার না করে হাটতে উদ্যত হলাম। ভাবছি,দেশের “আমজনতা”রা তো কোনকিছুই বুঝেনা,খামাখাই প্যাচাল পাড়ি সারাদিন,ধ্যাত!হঠাৎই পিছন থেকে রহমত আলীর কণ্ঠ শুনা গেল আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে গেলেন একে একে সব কথা;কখনো কখনো ৭১’র কথা,কখনো কখনো নিজের ভিটে দখলের কাহিনী।
তারপর শুনালেন জোতদারদের সার্টিফিকেট লাভ করে মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার কাহিনী আর রাজাকার কাসেম মিয়ার হঠাৎ ফেরেস্তা বনে যাওয়ার কাহিনী। (এইসব বলার আগ পর্যন্ত রহমত আলি আমার কাছে শুধুই একজন বয়োবৃদ্ধ রিকশাওয়ালাই ছিলেন)
রহমত আলী স্যার যখন এগুলা বলছিলেন,নির্লিতভাবেই বলে গেলেন। আরো কিছু শুনতে চেয়েছিলাম,আবারো প্যাডল মেরে চলে গেলেন নতুন গন্তব্যে।
রহমত আলী স্যার গত ৩৮ বছর রিকশা চালিয়েছেন,বলতে পারেন তিনি পুরোদস্তর রিকশাওয়ালা,এতে তাঁর কোন ক্ষোভ নেই,এই রিকশা চালাতে গিয়ে কখনো কখনো ট্রাফিক পুলিশের চড় খেয়ছেন,কখনোবা উঠতি বয়সের ছেলেপান দাঁড় করিয়ে রেখেছেন হলের সামনে ভাংতি নেই বলে। কোন ক্ষোভ নেই তাতে,কোনকিছুতেই তাঁর কোন রাগ নেই।
শহীদ মিনার সামনে দিয়ে রিকশা চালিয়ে গেলেও থেমে যান না কখনো। যে রহমত আলী একটা সবুজের মাঝে লাল টকটকে সূর্য এনে দিয়েছিলেন জীবন বাজি রেখে,আমি তাঁকে চিনি শ্রমজীবী এক মানুষ হিসেবে,তাঁকে আমি সন্মান দেখাইনি তাঁর অবিনাশী কীর্তির জন্যে। সালাম ফ্রিডম ফাইটার,সালাম!আমি তোমার কাছে আজ ক্ষমা চাই সবার হয়ে।
Click This Link
১৬ ডিসেম্বর ২০১০।
লাল-সবুজের পতাকায় মন্ডিত মহানগরী আজ বিজয় আনন্দে উদ্ভাসিত।
৩৯ বৎসর আগে দুঃসাহসী রহমত আলী স্যার যেমন করে বারংবার ঢুকে পরেছেন শথ্রু বেষ্টনিতে , আজ লাল-সবুজের মোহে কিছুটা বিকারগ্রস্ত রহমত আলী স্যার ৩৮ বৎসরের সঙ্গী রিকশা ফেলে তেজগাঁ প্যারেড গ্রাউন্ডের জাতীয় বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনির ভিতরে ঢুকে পরেন ।
এক সাথে গর্জে উঠে স্বদেশীয় খাকিপোশাক-কালো পোশাক- সাদা পোশাক।
'' হ্যান্ডস আপ। !''
রহমত আলী স্যার দীপ্ত কন্ঠে উত্তর দেন,
' রহমত আলী ওয়াজ নট বরণ টু হ্যান্ডস আপ.......হি অল-ওয়েস হেড আপ। '
(Rahat Ali was not born to 'Hands Up'...He always 'Head Up')
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।