বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
আমার তখন ছাত্র জীবনের শেষ পর্যায়। ১ টি গ্রামীনের সিম কিনলাম। মাত্র ছয় হাজার টাকা দাম।
তবে কেবল মোবাইল টু মোবাইল কল করা যাবে। ল্যান্ডফোনের কোন কল আসবেও না । ল্যান্ডফোনে কোন কল যাবেও না। মিনিট কলের জন্য কাটে ৭ টাকা । মিস কলে ধরা খেলেও ৭ টাকা শেষ।
সেই সময় মোবাইল নম্বর ছিল ০ সহ ৯ ডিজিটের।
এক সময় সারা দেশে চাউর হল যে টিএন্ডটি মোবাইল ছাড়বে। কলরেট অনেক কম হবে। সব চেয়ে বড় কথা এটা কেবল মোবাইল টু মোবাইল নয়। ল্যান্ডফোনে কল করা যাবে।
ল্যান্ডফোন থেকেও কল আসবে। কি যে মজার ফোন হবে সেটা। এক দিন পত্রিকার খবরে জানতে পারলাম টিএন্ডটি মোবাইল ছাড়তে পারবে না। নতুন একটি কোম্পানী গঠন করতে হবে। তারাই মোবাইল ছাড়বে।
পরে আরো জানতে পারলাম সরকারী ব্যবস্থাপনায় দেশী মোবাইলের কোম্পানী গঠিত হয়েছে। তবে নামটা দেয়া হয়েছেঃ টেলিটক যা মোটেই দেশী নাম নয়। আরো অনেক পরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হল টেলিটক সিম ছাড়বে। তবে প্রচলিত বাজার পদ্ধতিতে নয়। তাদের সিম পেতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
আমার তখন নেট ব্যবহারের কোন সুযোগ ছিল না। ফলে ই-মেইল ঠিকানাও আমার ছিল না। আমার এক বন্ধু ছিল যে ঢাকায় চাকরি করত তার অফিসে নেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল। তার মাধ্যমে আবেদন করলাম। কিন্তু আমার নাম লটারীতে উঠল না।
তবে পরের কিস্তিতে আমি একটি সিম পাবার সুযোগ লাভ করি। কিন্তু সিমটি সংগ্রহ করতে আমার ৩ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। সিমটি হাতে পাবার পর যেন আকাশের চাদ হাতে পেলাম। কিন্তু হ্যান্ডসেটে সিমটি বসানোর পর কল করতে গিয়ে দেখি সহজে কল যায় না। কম পক্ষে ১৫ বার কল করার পর কল যায়।
সেই অসহনীয় অবস্থায়ও আমি গ্রামীন ফোনের সিম বাদ দিয়ে টেলিটক ব্যবহার করতাম । কারণ একটাই । আমি যদি একটি টাকাও খরচ করি তা যেন দেশেই থাকে।
২০০৭ সালে আমি দেশ ছাড়ার সময় আমার টেলিটক সিমটি আমার বাবাকে দিয়ে আসি । যাতে বিদেশ থেকে সহজে কল করতে পারি।
কিন্ত এক সময় কোন এক অজ্ঞাত কারণে সিমটি বন্ধ হয়ে যায়। আমি দেশে না থাকাতে সিমটি আর চালু করা যায়নি। ফলে এখন আমার সেই পুরাতন নম্বর ০১৭-৯৫৮২৫৩ টি আবার চালু করতে হয়।
অন্যান্য অপারেটরদের গ্রাহক কোটি ছাড়িয়ে গেলেও টেলিটক এখনো অনেক হতাশাজনক গ্রাহক নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। অথচ টেলিটক কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলেই এর গ্রাহক সংখ্যা কোটিতে নেয়া সম্ভব।
টেলিটক যদি অন্যান্য মোবাইলের চেয়ে সামান্য একটু বেশী সুবিধা দেয় তাহলে লাখ লাখ মানুষ যারা এক সময় টেলিটক সিম কেনার জন্য ব্যাংকের সামনে ভোররাতে লাইন দিয়েছিল তারা আবার ব্যবহার করতে শুরু করবে। আমি কয়েকটি সুবিধার প্রস্তাব করতে পারি।
১। এক জোড়া সিমে ফ্রি কল করার সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তাতে করে যে কোন লোক কর্মস্থল থেকে তার প্রিয়জনের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতে পারবে।
মাসে ৩০০ টাকার কার্ড খরচ করে এই সুবিধাটি পেলে জোড়ায় জোড়ায় সিম বিক্রি হবে। কেননা, গৃহকর্তা সহজেই গৃহকর্ত্রীর সাথে কথা বলতে পারবে।
২। কম খরচে বিদেশে কল করার সুবিধা দিতে হবে। বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ থাকে।
কিন্তু বেশীর ভাগ লোকই দেশ থেকে কোন কল পায় না। মাঝে মাঝে দেশ থেকে মিসড কল আসে। তারপর তারা বিদেশ থেকে কলব্যাক করে। কিন্তু সহজ প্যাকেজ করে বিদেশে কল করার সুবিধা দিতে পারলে দেশ থেকেই মানুষ বিদেশে কল করবে। উদাহরণ স্বরুপ আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি।
আমি শ্রীলঙ্কার মোবিটেল সিম ব্যবহার করি। কলম্বো থেকে আমি দেশে ল্যান্ডফোনে মাত্র বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ৪ টাকায় কথা বলতে পারি। বাংলাদেশ থেকে কেউ কল করলে লাগে প্রায় ২৫ টাকা মিনিট। তাই দেশ থেকে কল পাবার বদলে আমি দেশে কল করাতেই বেশী আরামবোধ করি। কারণ দেশ থেকে কল এলে কিংবা দেশে কল দিলে উভয় ক্ষেত্রেই বিলের টাকা যাবে আমার পকেট থেকেই ।
তাই কল করাই ভাল।
৩। টেলিটক সব চেয়ে ভাল মানের মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ দেবার সুযোগ রাখে । কারণ তাদের তাদের মাদার কোম্পানী বিটিসিসি থেকেই বাকি অপারেটররা কিনে নিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে।
৪।
ভাল মানের কল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহক সেবা দিতে হবে। গ্রাহক সেবার লাইনগুলো হতে হবে টোল ফ্রি। মেইলে অভিযোগ পেলে তার সমাধান দ্রুত দিতে হবে। শ্রীলংকায় গ্রাহক সেবার সব লাইনে ফ্রি কল দেয়া যায়। সাথে সাথে সমাধান দেয়।
মেইলে অভিযোগ করলে পরে গ্রাহক সেবা বিভাগ থেকে কল করে গ্রাহকের সব সমস্যার সমাধান দেয় ।
৫। আমি যে মোবিটেল অপারেটরের সিম ব্যবহার করি তাদের একটি কার্ড পাওয়া যায় যার নাম Mobitel Hot IDD. এই কার্ডটি ব্যবহার করলে ২০ টি এসএমএস আর ১৫ মিনিট মোবিটেল টু মোবিটেল কল ফ্রি। বিদেশে কল দেবার বিশেষ সুবিধা সংবলিত TeleTalk Hot IDD কার্ড বের করে তাতে যদি ২০ টি এসএমএস ফ্রি আর ১৫ মিনিট টেলিটক টু টেলিটক ফ্রি কথা বলার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে অনেকতেই তা আকর্ষণ করবে।
৬।
কেউ যদি এসএমএস পাঠায় তাহলে ফিরতি এসএমএসটি ফ্রি করার সুযোগ দিতে হবে। কেননা, কেউ টাকা খরচ করে এসএমএস এর রিপ্লাই দিতে চায় না।
টেলিটকের অনেক সুবিধার মধ্যে সব চেয়ে বড় সুবিধাটি হল তার রয়েছে লাখ লাখ দেশ প্রেমিক গ্রাহক। অনেক গ্রাহকের সিমই এখন মানি ব্যাগের চিপায় ঢুকে পড়েছে। তারা যদি ভাল মানের সেবা দিতে পারে আবারো সেই সব সিম মানি ব্যাগ থেকে বের হয়ে মোবাইল সেটে ঢুকে পড়তে পারে।
পত্র-পত্রিকা কিংবা বেতার টিভির বিজ্ঞান নয় সবার আগে প্রয়োজন ভাল মানের সেবা। উত্তম সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারলে বিজ্ঞাপন দরকার হবে না। মানুষই হুমড়ি খেয়ে পড়বে টেলিটক ব্যবহার করার জন্য । টেলিটক কর্তৃপক্ষ কি চান না যে সবাই টেলিটক সিম ব্যবহার করুক, দেশের টাকা দেশেই থাকুক??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।