মাঝে মাঝে বৃষ্টি দেখে হাত বাড়ানোর ইচ্ছে জাগে... ভেতর ভেতর যাই পুড়ে যাই, কেউ জানেনা আমার আগে... আমার বন্ধু ভাগ্য ভালো, ভালো মানে বাড়াবাড়ি রকমের ভালো।
নানান বয়সি বন্ধু এরা। ছোট-বড়-সমবয়সি। এই বন্ধুরা দুধের মাছি না। বরং মরুভূমির জল।
আমার ভয়াবহ আপদে বিপদে এরা নানাবিধ সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে হাজির হয়। সেই সাহায্য-সহযোগিতা আমি নিঃসংকোচে উপভোগ করি। এবং যথাসময়ে ভুলেও যাই। তারপরও এরা আমাকে ছেড়ে দূরে যায় না। কাছাকাছি-ই থাকে।
বিপদ দেখলেই ছুটে আসে। সাথে থাকে সাহায্য সহযোগিতা।
বন্ধু ভাগ্যের সাথে উপহার ভাগ্যও ভালো। কারণে-অকারনে আমি নানান জিনিস উপহার পাই। এই উপহার অবশ্য বেশিরভাগ সময়ই আমার কাজে লাগেনা।
না লাগার কারণও অবশ্য আছে। আমার দরকারি জিনিসের সংখ্যা খুব কম। কম মানে জঘন্যরকম কম। জীবনে কখনো মাথা আঁচড়েছি বলে মনে পড়েনা, সুতরাং আয়না চিরুনির দরকার নেই। ছেলেরাও দেখি নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যাবহার করে।
আমিও করি। জীবনে একটাই ব্র্যান্ড। বছরে একটা, একবার। প্রবল শীতে যখন ঠোঁট ফেটে ফালাফালা, তখন ৮ টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা মেরিল ভ্যাসলিনের কৌটা কিনি। কিনে নাকে মুখে ঠোঁটে ঘষে ঘষে লাগাই।
সেই মেরিলের কৌটার দাম বাড়তে বাড়তে এখন ১৫ টাকা হয়েছে। ক্রেতা হিসেবে অবশ্য আমি সেই আমি-ই আছি। বছরে এক পিস- মেরিল পেট্রোলিয়াম জেলি। সুতরাং প্রসাধনীরও দরকার পরে না। একসময় কলমের মাথায় কায়দা করে ব্লেড আঁটকে শেভ করতাম নিপুণ দক্ষতায়।
আজকাল কলম আর ব্লেড থেকে উত্তরিত হয়েছি, সরাসরি সেলুনে।
যাই হোক, উপহার অবশ্য কাজে লাগার বিষয়ও না। ভালোলাগার বিষয়, অনুভূতির বিষয়। এই অনুভূতি আমি টের পাই না। উপহার পেলে হাঁসি হাঁসি মুখে আনন্দে আটখান-নয়খান হবার ভান করি।
তারপর বাসায় এনে কোথাও রাখি, তারপর কোথায় রেখেছিলাম, কি রেখেছিলাম, আদৌ রেখেছিলাম কিনা তাও দিব্যি ভুলে যাই। ভুলে যাওয়া দিন দিন অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে, এই অভ্যাস খেদাতে হবে। খেদাতে পারছি না।
সবচেয়ে বেশি যেটা ভুলে যাই, তা হোল জন্ম তারিখ। মরুভূমির জল এই অসাধারণ বন্ধুদের জন্ম তারিখগুলো চূড়ান্ত নির্লজ্জতায় ভুলে যাই।
সাথে উপহার দেয়ার কথাতো অবশ্যই। দুনিয়াতে কিছু মানুষ থাকে যারা শুধু হাত পেতে নেয়ার দলে, চক্ষু লজ্জা বলতে এক জিনিস তাদের মধ্যে নাই। আমি তাদের দলে। রাখঢাকহীন ভাবেই।
আশংকার ব্যাপার হচ্ছে, বন্ধুদের অবশেষে টনক নড়েছে।
তাদের কাছে আমার স্বরুপ বোধহয় উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। নেয়ার দলের লোকদের মানুষ বেশীদিন পছন্দ করে না। এরা দীর্ঘ সময় ধরে সেটা করেছে। এই বিষয় আবিস্কার করলাম এবার বইমেলায়! বইমেলা শেষ হতে চলল, হঠাৎ আবিস্কার করলাম আরিহ! একটা বইওতো পেলাম না! ঘটনা কি! ঘটনা কিছুই না। আমার ‘পৌষমাস’ শেষ হতে চলল, সেই শেষ ‘পৌষমাসে’ পরশু হঠাৎ দুখানা ঝকঝকে বই হাতে পেলাম।
আজ সন্ধ্যায় প্রবল অনিচ্ছা নিয়ে একখানা শুরু করতে গিয়ে শেষে আবিস্কার করলাম, কেমন কেমন করে যেন রাত এগারোটার মধ্যে দুখানাই শেষ করে ফেলেছি! এই প্রথম উপহার দেয়া সেইসব বন্ধুদের জন্য আফসোস হতে লাগলো!
আহা! উপহার যদি দিতেই হয়, বই নয় কেন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।