বিষয়টি একটু হালকা ধরনের তথাপি সকলের গোচরে এনেছি এ জন্যে যে আমাদের অবস্থা দিন দিন কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা কিছুটা অনুধাবন করার জন্য। সব কিছুই যেন আল্লার ওয়াস্তে চলছে। সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছি কিন্তু সরকারের দয়ার দেখা পাচ্ছি না। সার্ভিস চার্জ দিচ্ছি কিন্তু সার্ভিস পাচ্ছি না। গতকাল সন্ধ্যার পর মতিঝিলের অফিস থেকে বেরিয়ে হেঁটে চলে গেলাম কমলাপুর রেল স্টেশনে ১৫ ডিসেম্বরের টিকিট কাটার জন্য।
রিক্সায় উঠিনি দু'কারনে। প্রথমত এ সময়ে রিক্সার ড্রাইভার আর শাহরুখ খানের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল! দ্বিতীয়ত জ্যামের কারণে দশ মিনিটের রাস্তা বিশ মিনিটেও যাওয়া যাবে না।
দশ নম্বর কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়েছি টিকিটের জন্য। প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই দীর্ঘ লাইন। সম্ভবত আগামী বৃহ:স্পতিবার বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই অগ্রীম টিকিট কিনতে এসেছেন।
আমাদের লাইনটি সোজাসুজি না গিয়ে দক্ষিণে বাক নিয়ে সাত এবং আট নম্বর কাউন্টারের সম্মুখ দিয়ে বাহিরের দিকে চলেগেছে। উল্লেখ্য যে, সাত এবং আট নং কাউন্টার অনেক আগেই মৃতু্যবরণ করেছে! এখন মাকড়শার জাল আর ধুলোবালি পড়ে প্রাগৈতিহাসিক হয়েগেছে! আমাদের ডান পাশ দিয়ে অগণিত লোক স্টেশনে প্রবেশ করছে। সকলের চোখে মুখে উৎকন্ঠা। কেউ হয়তো ট্রেন পাবে কি পাবে না আর কেউ হয়তো অগ্রীম টিকিট পাবে কি পাবে না তা ভেবে চিন্তিত। কাউকেই সাবধানে চলতে দেখছি না।
কারণ হঠাৎ আমার চোখে পড়লো কেউ একজন স্টেশনের ভিতরে সম্মুখভাগে সিঁড়ির একটু উপরে ঠিক যেন কতর্ৃপক্ষের নাকের ডগায় প্রায় পাঁচশ গ্রাম পাতলা 'পায়খানা' করে রেখেছে! বেচারা 'মল' খালাস করে হয়তো আরাম পেয়েছেন কিন্তু অন্যদের কথা একবারও ভাবেন নি। আর এই গু যাত্রীরা তাদের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে দিচেছ গোটা স্টেশনে! লাইনে দাড়িয়ে কেউ হাসছে আর কেউ আফসোস করছে! আমি প্রায় পয়তালি্লশ মিনিট দাড়িয়ে দাড়িয়ে গুয়ের ছুটা-ছুটি দেখলাম। গু যখন নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে শেষ পর্যায়ে তখন একজন মহিলা পরিচ্ছন্ন কর্মী পাটের থোকা দিয়ে জায়গাটা মুছে দেয় এবং যিনি এ কাম করেছেন তাকে এবং যারা দু'নয়ন থাকা সত্বেও পায়ে করে একটু একটু করে নিয়েগেছেন তাদের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করছেন!
লাইনে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে টনক বিকল হওয়ার দশা! যিনি টিকিট দিচ্ছেন তিনি কি কমপিউটারে টিকিট দিচ্ছেন নাকি মুদির দোকানে অনাড়ি হাতে তেল মাপছেন বুঝতে পারছি না। একটা কচ্ছপ বসিয়ে দিলে হয়তো আরো দ্রুত দিতে পারতো! দীর্ঘ লাইন হ্রস্ব হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন নামক দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম তারা দাবী করেছেন, তাদের ছাপানো একটি সংবাদ পড়ে নাকি যোগাযোগ মন্ত্রীর টনক নড়েছে! শক্তিশালী ট্রেন দফায় দফায় মানুষ মেরেও মন্ত্রীর টনক নড়াতে পারেনি আর দু'টাকার পত্রিকা কিনা মন্ত্রীর টনক নাড়িয়ে দিয়েছে! আল্লাহ যেন মন্ত্রীর টনক সহিসালামতে রাখেন! নইলে বেরসিক ট্রেন যে আরো কত কি করে বসবে তা আন্তাজ করাও অসম্ভব! আমাদের টনকের যখন বারোটা বাজার উপক্রম তখন হঠাৎ দেখি টিকিট দেয়া বন্ধ।
হৈ চৈ পড়ে গেছে। কী ব্যাপার টিকিট দেয়া বন্ধ কেন? জবাব এলো যিনি টিকিট দিচ্ছেন তিনি চা খেতে গেছেন! সুবহানাল্লাহ! এও সম্ভব! এতো গুলো 'পাবলিক' লাইনে দাড়িয়ে আর ঐদিকে কাউন্টার খালি!
মোটামুটি সকলের মুখের দরজাই খুলেগেছে! কারো কারো হাত-পা খুলার পর্যায়ে কেউ কেউ ভাংচুরের হুমকিও দিচেছ। নানান মন্তব্য শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা করছে। তবে সকলেই যে ফালতু মন্তব্য করছে তা না। মন্তব্য শুনে দু'একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির উপস্থিতি অনুমান করতে পারি।
তবে এদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আমার দু'জনের সামনের ব্যক্তিটির মুখে এতক্ষণ খই ফুটতে ছিল। তিনি দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন এবং মাঝে মাঝে মুক্তিযুদ্ধের মহিমা বর্ণনা করছিলেন আর বঙ্গবন্ধুর জন্য নয়ন জলে কপোল ভাসাচ্ছিলেন! পঁচাত্তুরের দু:খজনক ঘটনার জন্য বেকুফ জাতিকে ভৎর্সনা করছিলেন! লোকটার উপর মেজাজটাই খারাপ হয়েগিয়েছিল। স্থান কাল না বুঝেই বয়ান শুরু করে দেয়। মজার ব্যাপার হলো এই ব্যক্তিটি এখন একেবারেই চুপ! যতক্ষণ লাইনে ছিলেন ততক্ষণ আর একটি কথাও বলেন নি।
স্টেশনে নোটিশ দেখলাম, লেখা রয়েছে সিসিটিভি দ্বারা আপনার গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কাউন্টারে লোক নেই, যাত্রীদের দূর্ভোগের শেষ নেই, গুয়ের ছুটা-ছুটির অন্ত নেই এ সব কি পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে না? নাকি পর্যবেক্ষণ চেয়ারটিতে 'অন্ধ হুজুর' বসে বসে দেশবাসীকে 'আলু' দিচ্ছেন! রাত আটটার সময়ও দেখছি যাত্রীরা এগার সিন্ধুর ট্রেনের টিকিট তালাশ করছে অথচ ট্রেনটি ছয়টা বিশ মিনিটে স্টেশন ত্যাগ করার কথা। খবর নিয়ে জানতে পারি তখনো ট্রেনটি কিশোর গঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেনি। তাহলে ছয়টা বিশের ট্রেন কয়টায় ছেড়ে যাবে? বেহাল দশা রেল যোগাযোগের। যেমন লেজে-গোবরে অবস্থা মঈন-ফখরুল জাত ডিজিটাল সরকারের!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।