পেট ভরার চিন্তা এবং রাতে শোয়ার জন্য নিরাপদ বাসস্থান পাওয়ার পরও আমি বা আমার মত অনেকেই সুখী না। কেন? লোকে বলে, "সুখে থাকতে ভূতে কিলায়"। যখন চাইছি পেট ভরে খেতে পাচ্ছি, শুতে ইচ্ছে হলে নিজের ঘরে শুতে পারছি, বিপদে পড়লে বাবা-মা আছেন -তারপরও দুশ্চিন্তার অভাব নেই। পড়াশুনার চিন্তা, পড়াশুনা না করতে পারার চিন্তা, পরীক্ষার ভাল ফল করতে না পারার চিন্তা, ভবিষ্যতে কর্মজীবনে করে খাওয়ার চিন্তা- চিন্তার অভাব নেই। মানুষের জীবনে অভাবের যেমন অভাব নেই তেমনি চিন্তারও কোন অভাব নেই।
আর মানুষটা যদি হয় আমার মত অলস তাহলে তো দুশ্চিন্তার আরও কারণ আছে। অলস মানুষ সময় মত কিছু করে না, শেষ মূহুর্তে কাজ নিয়ে হাবুডুবু খায়। পরিশ্রম না করলে জীবনে বাধা-বিপত্তি যেমন আসে-বিরক্তিও আসে। প্রায় দেখা যায়, করার কিছু নাই। মানে কর্তব্য অনেক আছে কিন্তু কিছুই করতে ভাল লাগছে না।
এমনকি আনন্দদায়ক কিছুও না। মনঃস্তত্ববিদরা হয়ত এটিকে ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। কোন কিছুই করতে ইচ্ছা না করাটা এক ধরণের চরম কষ্টদায়ক ব্যাপার। অলস মানুষ হিসেবে এটি অনুভব করি প্রায়ই। সারাদিন অবসর কাটালেও কাজ মাথায় নিয়ে কোন অবসরই অবসর নয়।
অতীত থেকেও কিছু কোন শিক্ষা গ্রহণ করি না। জীবনকে মাঝে মাঝে চরম বিরক্তি আর বোরিং মনে হয়, এ ধরনের বিরক্তিকে বিলাসিতাও বলা যায়। সময় কাটতে না চাওয়াটা এক ধরণের বিলাসী সমস্যাই কিনা!
এই যে ক্ষুদ্র জীবনে আমাদের এত দুশ্চিন্তা, এত কষ্ট, কোনটার পেছনে কারণ আছে কোনটা আবার একেবারেই অনর্থক। জীবনকে উপভোগ করা সহজ নয়। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়।
সব কিছু থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে সন্তুষ্ট বা তাকে ব্যবহার করার ক্ষমতা হয়ত সব মানুষের থাকে না। আমি হয়ত আরও কিছু চাই না, যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট কিন্তু তারপরও কেন জানি কখনও শান্তি পাই না। কেন? এই কেন বিশাল এক কেন।
একজন খুনের আসামী বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে আটক রয়েছে। একে একে বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে উচ্চ আদালতে তার ফাঁসির রায় বহাল থাকল।
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আবেদন নাকচ করা হল। ফাঁসির দিনক্ষণ ঠিক করা হল। অমুক দিন ঠিক অতটার সময়ে আসামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। সব তথ্যই আসামীকে জানান হল। আসামী যেদিন সবকিছু জানল ধরা যাক তার ২৪ দিন পর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
এখন আমরা আসামীর দিকে আমাদের সকল মনোযোগ নিয়ে আসি। এই ২৪ টা দিন তার কেমন কাটবে? দুনিয়াটা হয়ত তার কাছে এক সময় চরম বোরিং একট জায়গা মনে হত, হয়ত সে সারাজীবন মৃত্যুর জন্যেই অপেক্ষা করত, ধরে নিই সে ব্যক্তিগত জীবনে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও স্বস্তিতে ছিল না, হয়ত সে পেশাদার খুনীও ছিল না, হয়ত সে আসলে কোন খুনই করে নি কিন্তু আর ২৪ দিন পর তার মৃত্যু হবে। যদিও মৃত্যু কখন আসবে তা আমারা কখনই নিশ্চিত করে বলতে পারি না তবে মোটামুটিভাবে একটা ধারণা আমরা পেলাম। এই ২৪ টা দিন কি সেই আসামীর কাছে অসাধারণ মনে হবে? তার কি মনে হবে এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর? এই যে কারাগারের ময়লা কক্ষটি সেটিও অনেক সুন্দর, অনেক শান্তির? প্রতি বেলায় তাকে যে খাবার দেয়া হত তাও অনেক ভাল ছিল। কারারক্ষীদের আচরণ তো খারাপ ছিল না! এই কক্ষে ইচ্ছে হলেই সে শুতে পারত, বসতে পারত, হাঁটতে পারত।
সেটি কি চরম আনন্দের ছিল না? কিংবা কারাগারের দিনগুলোর আগের দিনগুলো যখন খুনের ব্যাপারটি ঘটেই নি তখন কি তার জীবনটা অনেক সুন্দর ছিল না? তার একটা পরিবার ছিল, সুখের সংসার ছিল, যখন ইচ্ছে সে বাসার বাইরে যেতে পারত, যখন ইচ্ছে বাসায় ফিরতে পারত, ইচ্ছে হলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারত, মন চাইলে লোকাল বাসে করে আজিমপুর থেকে মিরপুরে যেতে পারত, ঢাকা শহরের কালো ধোঁয়াও তো খুব খারাপ ছিল না। এই পৃথিবীটা, এই জীবনটা তো খুব খারাপ ছিল না। এটা তো খুব সুন্দর একটা সময় ছিল...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।