অঞ্জন দত্ত যে সিনেমার লোক সে ব্যাপারটা জানতে সময় লেগেছিল। তাকে চিনি তার জীবনমুখী গানের মাধ্যমে। ববি রায়, সিনেমা ইত্যাদি কয়েকটা গানে অঞ্জন দত্ত সিনেমার কথা বলেছিলেন বটে, কিন্তু তা যে সত্যি সেটা উপলব্ধি করতে পারি নি। পরে অবশ্য জেনেছি যে তিনি সিনেমায় অভিনয় করেন এবং গান গাওয়াটা পরে শুরু হয়। মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার সিনেমায় প্রথম অঞ্জনের অভিনয় দেখলাম।
পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ারের নতুন দিকে যাত্রা শুরু করেছেন সেটাও জেনেছি ওয়েবসাইটের সূত্রে। কিন্তু কোন সিনেমা দেখা হয়নি। ম্যাডলি বাঙ্গালি সম্পর্কে বেশ কিছুদিন ধরে হালকা-ভারী প্রশংসা শুনছিলাম, কিন্তু মেজো ভাই যেভাবে রেফার করলেন, তাতে না দেখে উপায় ছিল না। ম্যাডলি বাঙ্গালি আমার দেখা অঞ্জন দত্ত পরিচালিত সিনেমার প্রথমটি।
চারটে বন্ধু – পাবলো, বেনজি, নিওন এবং বাজি – একত্রিত হয়ে একটা রক ব্যান্ড গড়ে তুলেছিল অনেক আগে।
সময়টা তখন টগবগে তারুন্যের। স্বপ্নগুলো তখন আকাশছোঁয়া। বাড়িতে দুদন্ড শান্তি ছিল না, অভাব ছিল প্রাকটিস করার জন্য একটুকু জায়গার। তাই ববিদার গ্যারাজই শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু সেই গ্যারাজটা কেড়ে নিতে চায় বাবুরাম।
বাবুরাম হলো সেই লোক যে “বাঘের মতো মুতের গন্ধ দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করে রাখে এবং টাকার বিনিময়ে মানুষের পাছায় সেলোটেপ লাগিয়ে বেড়ায়। ” গ্যারাজ বাচাবার জন্য দরকার দেড়লাখ টাকা, অথচ এই সময়ে বাগড়া দিয়ে যাচ্ছে ববিদার বিদেশ ফেরত বন্ধু স্যাম। রক ব্যান্ড ‘ম্যাডলি বাঙ্গালি’র স্বঘোষিত ম্যানেজার বনে যায় সে, পাল্টে দেয় ব্যান্ডের লাইনআপ। পাবলোই ছিল ব্যান্ডের প্রধান উদ্যোক্তা, গীতিকার এবং ভোকাল, অথচ হঠাত করে পাবলোর বান্ধবী তানিয়া ভোকাল হয়ে গেল। তারপর নানা রকম আনন্দ-কষ্ট, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, যৌনতা-প্রেগন্যান্সি, আশা-হতাশা সব কিছুকে ছাপিয়ে বন্ধুত্বের জোরে ‘ ম্যাডলি বাঙ্গালি ‘ একটা রক ব্যান্ড প্রতিযোগিতায় পারফর্ম করে, সেটাই এর কাহিনীর মূল গল্প।
ম্যাডলি বাঙ্গালি প্রথম এবং একমাত্র বাংলা রক মিউজিক্যাল মুভি। অসাধারণ সব গান আর তার ভিজ্যুয়ালাইজেশন দিয়ে সাজানো সিনেমাটি। সঙ্গীত পরিচালক নীল দত্ত। গেয়েছেন -
আই ডু অ্যানিথিং ফর ইউ – রূপম ইসলাম
কে আছো কোথায় – নচিকেতা
মেরে মাওলা – আর্কো
সময়ে – তানিয়া
কত কি করার ছিল – অঞ্জন দত্ত
ব্যান্ডের চার সদস্যই একেবারে নতুন অভিনয়ের জগতে, এ জন্য তাদের অভিনয়ে একটা জড়তা ছিল, বিশেষ করে এক্সপ্রেশনগুলোতে। পাবলোর রাগ করার ভঙ্গীটা আসেলই মেকি।
তবে পুরো সিনেমা এতটাই সন্তুষ্টিকর যে এটা এড়িয়ে যাওয়াটা মোটেই কষ্টকর নয়। স্যাম চরিত্রে অঞ্জন দত্ত নিজেই অভিনয় করেছে, বাবুরাম চরিত্রটি ভালো লাগবে।
ইন্দ্রনীল মুখার্জীর সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ, বিশেষ করে গ্যারাজের ভেতর আলো আবছায়ার মধ্যে চমৎকার করে তুলে ধরেছেন। রক মিউজিক পছন্দ করেন অথচ এই সিনেমাটা পছন্দ করবেন না, এমন দর্শক বোধহয় এখনো পৃথিবীতে আসেন নি।
রেটিং ৪.৫/৫
পুরোনো পোস্ট:
সম্প্রতি কি সিনেমা দেখলাম: ৩৯ টা মন্তব্য আছে এখানে, দেখলে ভালোই লাগে।
Life In a Metro: শহুরে কাব্য। একটি জেমসময় সিনেমা। দেখার আগেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।
The Butterfly Effect: সাইকোলজিক্যাল ড্রামা। আ বিউটিফুল মাইন্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল এই সিনেমা দেখার সময়।
একটা মিউজিক ভিডিওর রিভ্যু লিখছিলাম। গানস এন্ড রোজেস এর নভেম্বর রেইন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।