আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আয়ারল্যান্ডে মুক্তিযুদ্ধের উপর মুভি: দি উইন্ড দ্যাট শ্যাকস দা বার্লি

ছাত্র

স্বাধীনভাবে সবাই বাঁচতে চায়। কিন্তু এ স্বাধীনতা অর্জন করা যে কতো কঠিন তা কেবল যারা অর্জন করেন তারাই উপলব্ধি করতে পারেন। তাদের মতো করে আর কেউই হয়তো বিষয়টি অনুভব করতে পারেন না। যেমন আমাদের দেশ স্বাধীন করতে যে সব মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তারা এখনও সেসব স্মৃতি মনে করে কেউ আনন্দ পান আবার কেউ স্বজন হারার বেদনায় চোখ ভেজান। অনেকের মনেই ক্ষত আছে।

এই ক্ষত নিয়েই তারা বেঁচে আছেন। পরবর্তী প্রজন্ম এই ইতিহাস নিয়ে গর্ব বোধ করে। কিন্তু যারা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেও স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেন না তাদের কষ্ট খুবই করুণ এমনকি অবমাননাকরও। অনেক ক্ষয়-ক্ষতি মেনে নিয়েও পরাধীনভাবে বেঁচে থাকা সত্যিই খুব কষ্টকর। যেমন আয়ারল্যান্ড।

আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছু মুভি তৈরি হয়েছে। গেরিলাদের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি মুভিটি। তেমনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর ভালো ভালো মুভি তৈরি হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তৈরি হয়েছে দি উইন্ড দ্যাট শেকস দি বার্লি মুভিটি। আয়ারল্যান্ড পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি।

পেয়েছে স্বায়ত্তশাসন। এই মুভিটির নাম নেয়া হয়েছে একই নামের টাইটেল সং দি উইন্ড দ্যাট শেকস দি বার্লি থেকে। মুভিটি রিলিজ পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় এটি প্রশংসিত হয়। ক্রিটিকরা এর পক্ষে পজিটিভ রিভিউ লিখেন। একটি পত্রিকা লেখে, এটা একটা ব্রেভ, গ্রিপিং ড্রামা।

মুভির পটভূমি ১৯২০ সাল। বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য কিছু মানুষ গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। এ গেরিলা বাহিনীতে যেমন আছেন ক্ষেতমজুর ঠিক তেমনি আছেন ডাক্তারও। এই দলে আছেন দুই ভাই টেড যিনি বড় এবং ড্যামিয়েন যিনি ছোট, পেশায় ডাক্তার। তারা একত্রে গেরিলা হামলা করে একের পর এক বৃটিশদের নাজেহাল করছেন।

কিন্তু তাদেরই দলের সদস্য বেইমানি করে বৃটিশদের কাছে সব তথ্য পাচার করে দেয়। তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় কোথায় অস্ত্র আছে তার খবর দেয়ার জন্য। কিন্তু এ অমানুষিক নির্যাতন সত্ত্বেও টেড কোনো তথ্য দেন না। পরে তারা একজনের সহায়তায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। যখন তারা বেরিয়ে আসেন জেলখানা থেকে তখন তারা জানতে পারেন কে এ কাজ করেছে।

এবং তাদের সবাইকে শাস্তিস্বরূপ গুলি করে হত্যা করা হয়। এখানে একটি করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ড্যামিয়েন, যিনি গুলি করেছেন তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই একজনের মার সঙ্গে বসে দুজনে একসঙ্গে খেয়েছেন। যখন সন্তানের মৃত্যুর কথা তার কাছে জানতে পারেন তখন তিনি তার সন্তানের কবর দেখতে চান। তিনি ছিলেন প্রবীণ।

অনেক পথ দুজনে একসঙ্গে হেটে এসেছেন। কোনো কথা বলেননি। সন্তানের সমাহিত করার স্থানে এসে মা ফুল দিলেন। ড্যামিয়েনকে তিনি বলেন, তোমার মুখ আমি আর কখনও দেখতে চাই না। আসলে এরকম প্রতিটি ট্র্যাজেডির মধ্যেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যখন তাদের এই ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল তখন তাদের দলের অনেক সদস্যই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তখন তারা হতাশ হলেও থেমে থাকেননি। তারা আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেন। এক পর্যায়ে বৃটিশরা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়। বৃটিশরা এই হানাহানি বন্ধের জন্য আয়ারল্যান্ডকে স্বাধীনতার নামে দেয় স্বায়ত্তশাসন।

বৃটিশ সব সৈন্য চলে যাবে। আয়ারল্যান্ডের জনগণই দেশ চালাবে। কিন্তু আইন-কানুন, সিদ্ধান্ত সব আসবে বৃটিশদের কাছ থেকে। বড় ভাই টেড এটা মেনে নেন। কিন্তু ছোট ভাই ড্যামিয়েন এ ধরনের পোশাকি স্বাধীনতা চান না।

তিনি অটল থাকেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার। ভাগ হয়ে যায় দলের সদস্যরা। বড় ভাই চলে যান দেশ পরিচালনায়। আর এদিকে ছোট ভাই গেরিলা বাহিনীতে। এবার শুরু হয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ।

ছোট ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। রাখা হয় যে সেলে সেখানে বৃটিশরা তাদের বন্দী করে রেখেছিল। শুধু পার্থক্য হলো তখন তারা বন্দী হয়েছিলেন ভিনদেশিদের হাতে, এবার বন্দী হলেন নিজের দেশের মানুষ, এমনকি আপন ভাইয়ের নির্দেশে। ছোট ভাইকে একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে বলেন বড় ভাই। কিন্তু ছোট ভাই বলেন, আমরা তো এখনও আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি।

তাই যুদ্ধ থামানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। যখন ছোট ভাইকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হলো না তখন তাকে নিয়ম অনুযায়ী ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে হত্যার হুকুম দেয়া হলো। ছোট ভাইকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বড় ভাইও আছেন। এক অফিসার বললো, স্যার আপনি কমান্ড দিতে না পারলে আমি দিই।

তখন বড় ভাই বলেন, না আমিই কমান্ড দিতে পারবো!বড় ভাইয়ের কমান্ডে ফায়ার করা হলো ছোট ভাইকে! মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ছোট ভাই ড্যামিয়েন। মুভিটির সবচেয়ে করুণ, শক্তিশালী, সবসময় মনে রাখার মতো দৃশ্য হলো এটি। অনেক মানুষই মুভি দেখে বা বই পড়ে চোখের পানি রাখতে পারেন না। মিশে যান মুভির বা বইয়ের কাহিনীর সঙ্গে। আর সেটা যদি হয় নিজের দেশ সম্পর্কে তা হলে তো আর কথাই নেই।

সেখানে যোগ হয় প্রচন্ড আবেগ। এই দৃশ্যটি দেখার পরও অনেকেই হয়তো চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। মুভিটি দেখলে বোঝা যাবে আসলে স্বাধীনতা কাকে বলে? কতো কঠিন পথ পেরিয়ে স্বাধীনতা নামক স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিতে পারে। অবশ্যই এই মুভি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান বহু গুণে বাড়িয়ে দেবে। যেমন যারা যুদ্ধে অংশ নেন তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নেমে আসতে পারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

মারা যেতে পারেন নিকট আত্মীয়। বাড়ি-ঘর আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতে পারে। এমনকি যিনি যুদ্ধ করছেন তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি জানেন যেকোনো সময় তিনি দেশের জন্য মারা যেতে পারেন। এটা জেনেও তিনি যুদ্ধে যান একটি স্বাধীন দেশের জন্য।

একটি পতাকার জন্য। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় দিক। মুভিটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পের ধারাবাহিকতা আছে। তাই মুভি দেখতে গিয়ে দর্শক কখনও হোঁচট খাবেন না। সবচেয়ে বড় কথা হলো মুভিটি মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক।

তাই স্বাভাবিকভাবেই মুভিটির প্রতি সবার আগ্রহ জন্মাবে। কারণ, আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশও অনেক ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই মুভিটি অনেককেই হয়তো অতীত স্মৃতিতে নিয়ে যাবে। চমৎকার মুভিটি ডিরেক্টর কেন লোয়াচ নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে ওয়ার, হিস্ট্রি এবং ড্রামানির্ভর মুভিটি পাঁচটি পুরস্কার এবং ১৯টি নমিনেশন পায়।

মুভিটি ২০০৬ সালের ২৩ জুন আয়ারল্যান্ডে রিলিজ পায়। মুভিটিতে অভিনয় করেন সিলিয়ান মার্ফি, প্যাড্রায়াক ডিলানি এবং অরলা ফিৎগেরাল প্রমুখ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।