হারিয়ে যাওয়া সময়,হারিয়ে গেছে কোথায়
শহুরে মানুসের ঘুমে ব্যঘাত ঘটায় নাগরিক সভ্যতা। ছাপোষা মানুষ গুলুর ব্যস্ততা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। তবে আমার ঘুমে ব্যঘাত ঘটানোর নিত্য দিনকার কারন হচ্ছে পাশের বাসার ঝগড়া। তাদের অত্যাচারে আমার ঘুমের অকাল অবসর দিতে হয়। থাকি নিম্ন বিত্ত এলাকার এক রুমের বাসায়।
বাবা পেশায় একজন ড্রাইভার। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া আটকে যায়। গত দু বসর যাবত ধরে খাচ্ছি,ঘুমাচ্ছি। এই দুয়ে আটকে আছি। বাসায় প্রায় প্রতিদিন গাল মন্দ খেতে হয় কিছু করি না কেন।
মাঝকানে একটা রডের দোকানে ছিলাম হাজার তিনেক টাকা বেতনে। কয়েক মাস পর কাজের অত্যাচার এর জন্য চলে আসি। সকালের নাস্তা করে বের হলাম গলির মাথায়। গোটা কয়েক বন্ধুর দেখা পেয়ে গেলাম তাদের স্কুল বন্ধ থাকায়। হাঁটতে হাঁটতে একটা যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে বসলাম।
আমার দিকে তাকিয়ে মিরাজ বল্ল"কিরে টিপু,তুই দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছিস কেন?ওই বাড়িতে যাতায়াত আছে নাকি?"
আমি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম"ওই বাড়ি মানে কোন বাড়ি?"
"যেখানে খদ্দের দের নিত্য আনা গোনা। "
আস্তে আস্তে ব্যপার গুলু বুঝিয়ে বলল। আমি খানিকটা লজ্জা পাওয়ার ভান করে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলাম। তারপর বাসার দিকে হাটা দিলাম। কৌতহল আর নেশায় ব্যাপারটা শোনার পর মাদকতা সৃষ্টি হল।
সকাল থেকে রাত অবধি ওই বাড়ির পাশে দাড়িয়ে থাকতাম। এটা পতিতাদের কর্মস্থল এই ভেবেই শিহরিত হতাম। সারাদিনের প্রাপ্তি হত কিছু সাজ সজ্জা করা মহিলাদের মুখবয়ব দেখা,এবং মাঝে মাঝে দেখতাম কিছু লোক গাড়ি অথবা বাইকে চেপে ওখানে আসত। ঘন্টা দু ঘন্টা পরে আবার চলে যেত।
এসব করেই কাটছিল আমার দিন।
হটাত একদিন বাবা অফিস থেকে এসে বলল"আমি টিপুর ব্যবস্থা করে এসেছি। আমার এক স্যার এর বাসায়। হাজার পাঁচেক টাকা দিবে। "পরদিন আমাকে জামা কাপড় গুছিয়ে আমাকে নিয়ে দিয়ে আসল সেই বাসায়। বাবা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসল।
বাড়ির মালিককে দেখে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওনাকে কোথাও আমি দেখিছি। হটাত করে মনে পড়ল পতিতাদের ওই বাসা মানে শুধা বিলায় তার নিত্য যাতায়াত ছিল। কয়েকদিন কেটে গেল তার বাসায়। একটা বিষয় খেয়াল করলাম,প্রচুর লোক আসত তার কাছে চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিতে। কিছু লোক আসত দোয়া চাইতে।
লোকটা রাজনীতি করত। দুই মাস কাজ করার পর গৃহকর্তীর অত্যাচারে বাসায় চলে আসি। এখন মাঝে মাঝে শুধা বিলার সামনে গিয়ে দাড়াই। হাটাত একদিন দেখলাম যার বাসায় কাজে ছিলাম সে ওই বাসার দিকে মানে শুধা বিলার দিকে যাচ্ছে। কাক গুলুর কর্কশ ডাকে ওপরের দিকে তাকাতেই হল।
দুটো তার একত্র হয়ায় একটা কাক মারা গেছে তাতে হাজার হাজার কাক বৈদ্যুতিক তারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। তারা বৈদ্যুতিক তারে দাড়িয়ে এটার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করতে পারে কারন তাদের পায়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। বেলা শেষে তারা নিরুঙ্কুস পবিত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।