আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"সুকান্ত ভট্টাচার্য"-র কবিতা+১ টি চিঠি-৩য় পর্ব

অন্যায়ভাবে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই । ।

ব্ল্যাক-মার্কেট হাত করে মহাজন, হাত করে জোতদার, ব্ল্যাক-মার্কেট করে ধনী রাম পোদ্দার গরীব চাষীকে মেরে হাতখানা পাকালো বালিগঞ্জেতে বাড়ি খান ছয় হাঁকালো। কেউ নেই ত্রিভুবনে, নেই কিছু অভাবও তবু ছাড়ল না তার লোক-মারা স্বভাব ও। একা থাকে, তাই হরি চাকরটা রক্ষী ত্রিসীমানা মাড়ায় না তাই কাক-পক্ষী বিশ্বে কাউকে রাম কাছে পেতে চান্ না, হরিই বাজার করে, সে-ই করে রান্না।

এমনি করেই বেশ কেটে যাচ্ছিল কাল, হঠাৎ হিসেবে রাম দেখলেন গোলমাল, বললেন চাকরকে: কিরে ব্যাটা, কী ব্যাপার? এত টাকা লাগে কেন বাজারেতে রোজকার? আলু তিন টাকা সের? পটল পনেরো আনা? ভেবেছিস বাজারের কিছু বুঝি নেই জানা? রোজ রোজ চুরি তোর? হতভাগা, বজ্জাত! হাসছিস? এক্ষুণি ভেঙে দেব সব দাঁত। খানিকটা চুপ করে বলল চাকর হরিঃ আপনারই দেখাদেখি ব্ল্যাক-মার্কেট করি। । সিপাহী বিদ্রোহ হঠাৎ দেশে উঠলো আওয়াজ-“হো-হো, হো-হো, হো-হো” চমকে সবাই তাকিয়ে দেখে-সিপাহী বিদ্রোহ! আগুন হয়ে সারাটা দেশ ফেটে পড়ল রাগে, ছেলে বুড়ো জেগে উঠল নব্বই সন আগে; একশো বছর গোলামিতে সবাই তখন ক্ষিপ্ত, বিদেশীদের রক্ত পেলে তবেই হবে তৃপ্ত! নানা সাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী- সবার হাতে অস্ত্র, নাচে বনের পশু-পক্ষী। কেবল ধনী, জমিদার, আর আগের রাজার ভক্ত যোগ দিল, তা নয়কো, দিল গরীবেরও রক্ত! সবাই জীবন তুচ্ছ করে, মুসলমান ও হিন্দু, সবাই দিতে রাজি তাদের প্রতি রক্তবিন্দু; ইতিহাসের পাতায় তোমরা পড় কেবল মিথ্যে, বিদেশীরা ভুল বোঝাতে চায় তোমাদের চিত্তে।

অত্যাচারী নয়কো তারা, অত্যাচারীর মুন্ড চেয়েছিল ফেলতে ছিঁড়ে জ্বালিয়ে অগ্নিকুন্ড। নানা জাতের নানান সেপাই গরীব এবং মূর্খঃ সবাই তারা বুঝেছিল অধীনতার দুঃখ; তাইতো তারা স্বাধীনতার প্রথম লড়াই লড়তে এগিয়েছিল, এগিয়েছিল মরণ বরণ করতে; আজকে যখন স্বাধীন হবার শেষ লড়াইয়ের ডঙ্কা উঠছে বেজে, কোনোদিকেই নেইকো কোন শঙ্কা; জব্বলপুরে সেপাইদেরও উঠছে বেজে বাদ্য নতুন করে বিদ্রোহ আজ; কেউ নয়কো বাধ্য, তখন এঁদের স্মরণ করো, স্মরণ করো নিত্য- এঁদের নামে, এঁদের পণে শানিয়ে তোলো চিত্ত। নানা সাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মী, এঁদের নামে, দৃপ্ত কিশোর, খুলবে তোমার চোখ কি? #কবি সুকান্তর এই চিঠিটা আমার কাছে খুব মজা লাগে , তাই দিলাম.......... নোটঃ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বন্ধু শ্রীঅরুণাচল বসু। ‘শ্রীঅর্ণব’ অরুণাচলেরই ছদ্মনাম। গৃহত্যাগ করে সৎসঙ্গের আশ্রমে উঠে এই নাম নিয়েছিলেন তিনি।

চিঠি-- সৎসঙ্গশরণম্ শ্রীশ্রীশ্রী ১০৮ অর্ণব-স্বামী গুরুজীমহারাজ সমীপেষু, শত শত সেলামপূর্বক নিবেদন, পরমারাধ্য বাবাজী, আপনার আকস্মিক অধঃপতনে আমি বড়ই মর্মাহত হইলাম। ইতোমধ্যে শ্রবণ করিয়াছিলাম আপনি সন্ন্যাস অবলম্বন করিয়াছেন, তখন মানসপটে এই চিন্তাই সমুপস্থিত হইয়াছিল যে ইহা সাময়িক মত্ততা মাত্র; কিন্তু অধুনা উপলব্ধি করিতেছি আমার ভ্রম হইয়াছিল। এমতাবস্থায় ইহাই অনুমিত হইতেছে যে কাহারও সুমন্ত্রণায় আপনি এই পথবর্তী হইয়াছেন। অতএব আমার জিজ্ঞাস্য এই যে, বৃদ্ধ পিতা এবং অসুস্থ মাতার প্রতি ঐহিক কর্তব্যসকল পদাঘাতে দুরীভূত করিয়া কোন নীতিশাস্ত্রানুযায়ী পালৌকিক চরমোন্নতি সাধনের নিমিত্ত আপনি এক মোহমার্গ সাধনা করিতেছেন? এক্ষেত্রে আমার নিবেদান এই যে, অচিরে এই সৎসঙ্গ পরিত্যাগপূর্বক আপনার এই অস্বাভাবিকতা বর্জন করিয়া স্বীয় কর্তব্যকরণে প্রবৃত্ত হউন। আপনার পিতাঠাকুরের নির্দেশমত আপনার কলিকাতায় আসিয়া থাকাই আমার অভিপ্রায়।

এ স্থানেও সৎসঙ্গের অনটন হইবে না, উপরন্তু আমার মত অসতের সহিত দুই-চারিটা কথোপকথনের সুবিধাও মিলিবে, অবশ্য ইহা আমারই সৌভাগ্যজনক হইবে। যদিচ এ আশা নিতান্তই অকল্পেয়, তথাপি চিন্তা করিতে দোষ কি? আমার দুইখানি পত্রে যে সকল আবেগময় গোপন কথা লিখিয়াছিলাম, তাহার উত্তরের আশা বিসর্জন দিয়াছি; কিন্তু এ পত্রের বিস্তৃত উত্তর না পাইলে ইহাই আমার শেষ চিঠি জানিবেন। ইতি- দাসানুদাস সেবক – শ্রীসুকান্ত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।