আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঠিক বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত রহস্যময় মিস্ট্রি স্পট

লেখক/কবি

সোহরাব সুমন ক্যালির্ফোনিয়ার সান্তাক্রুজ থেকে খানিক দূরে রেডউড ফরেস্ট। এর কিছুটা জায়গা পৃথীবির অভিকর্ষের নিয়মের বাইরে। জায়গাটির নাম মিস্ট্রি স্পট। সেখানকার প্রায় ১৫০ বা ৪৬ মিটার এর মত স্থানের চারপাস ঘিরে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র গুলো স্বাভাবিক নিয়ম মেনে চলেনা। অবাক করা এই জায়গাটির অবস্থান জানান দিতে ক্যালির্ফোনিয়ার সব হাইওয়ে জুড়ে রয়েছে ডজন ডজন সাইন বোর্ড।

১৯৩৯ এর দিকে জায়গাটির অবাক করা সব বৈশিষ্ট জানতে প্রথম সার্ভে করা হয়। এর পরের বছর পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য জায়গাটি খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই সারা বিশ্ব থেকে আসা লাখ লাখ পর্যটক জায়গাটির অভিকর্ষ বিষয়ে আজব কিছু ব্যপার নিজ চোখে দেখে, অনুভব করে বড় ধরনের এক বিষ্ময় নিয়ে বাড়ি ফিরতে থাকে। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে আবারো ক্যালির্ফোনিয়া থেকে তিন জন সার্ভেয়ার উপসাগরের দিকে সার্ভে করার জন্য আসেন। এসময় তারা এমন একটি অবাক করা জায়গা খুজে পান যেখানে তাদের যন্ত্রপাতি গুলো ঠিকঠাক কাজ করছিলো না।

যতই তারা চেষ্টা করছিলো কিছুতেই ট্রাইপড সোজা করে মাটিতে বসানো যাচ্ছিলোনা। আর পাম-বব বরাবরই পূবদিকে নিচু হয়ে ছিলো। এই নিয়ে বার বার ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে তারা এক সময় বুঝতে পারে মাথার ভেতরটা সব সময়ই তাদের একদম হালকা অনুভব হচ্ছে। আর কেবল তিনশত ফুট জায়গা জুড়ে তাদের সার্ভের যন্ত্রপাতি ঠিকমত কাজ করছিলোনা। এক সময় তারা বুঝলো আসলে তারা একটি মিস্ট্রি স্পট খুজে পেয়েছেন।

কারো কারো ধারনা স্পেস গাইডেন্স সিস্টেমের জন্যে সেখাকার মাটির গভিরে গোপনে বিশেষ ধরনের ধাতব কোন পুতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ আবার মনে করেন এর গভিরে হয়তো আস্ত কোন স্পেস ক্রাফটই সেধিয়ে গেছে। কারো আবার ধারনা এখান কার মাটির গভিরে আটকে থাকা ম্যাগমা হতে বের হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রভাবে ওজোন স্তর ফুঁটো হয়ে উপরদিকে এক ধরনের ডাইইলেক্ট্রিক বায়োকসমিক রেডিয়েশনের ঘটনা ঘটছে। যা বিশ্বের অনেক জায়গাতেই ঘটতে পারে। তবে কারন যাই হোক না কেন, সমস্ত বিশ্ববাসির কাছে এই মিস্ট্রি স্পট আজো এক বড় ধরনের রহস্য হয়েই আছে।

সব বয়সের লোকের জন্যই মিস্টি স্পট খুবই মজার জায়গা ! অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে অভিকর্ষের আজব কাজকারবার দেখার জন্য জায়গাটিতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটান, রহস্যের একটা কিনারা করতে চান। কিন্তু বাড়ি ফেরেন আরো কঠিন রহস্য মাথায় নিয়ে। মিস্ট্রি স্পটে ঢুকবার পর একজন লম্বাটে মানুষকে তুলনামুলকভাবে মনে হয় খাটো। আবার পেছনে শুণ্যের দিকে হেলে কোন দেয়াল বেয়ে ওঠার সময় কেউ নিচে পড়ে যায়না। অভিকর্ষের আজব আচরনের জন্য শুণ্যে দু’পা তুলে দিয়ে চেয়ারের পেছনের দুপায়ে ভরকরে অনায়াসে হেলান দিয়ে বসে থাকলেও পড়ে যাবার ভয় থাকেনা।

কম্পাসো মাথাখারাপের মত ভুল দিক নির্দেশ করে। সমতলে গলফ বল গড়ায় উপরের দিকে। এখানে আসা লোক জনের কেউ কেউ হালকা অনুভব করলেও, অনেকেই আবার ভেতর ভেতর প্রচন্ড চাপ অনুভব করেন। হালকা জুতো পায়ের লোকেদেরও কেমন যেন এক ধরনের ভর ভর অনুভব হয়। মিস্ট্রি স্পটের মাঝ বরাবর রয়েছে একটি কাঠের ঘর।

জায়গাটির মালিকই ঘরটি তৈরী করেন। কিন্তু তখন তার জায়গাটির ভুতুড়ে আচরন সমন্ধে এক দমই জানা ছিলোনা। কাঠের বাড়ি বানাতে গিয়ে একই ভাবে বার বার হেলে পড়ার কারনে তার টনক নড়ে। কিআর করা হাজার চেষ্টা করেও সোজা করে ঘরটি তৈরী করতে ব্যর্থ হয়ে শেষে দৈবের হাতেই এর ভাগ্য সপে দেন। কেনার পর পর মি¯টার প্রাথার নামের এই ভদ্র লোক জায়গাটি সমতল করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ঘরটির দড়জার বাইরে দাড়িয়ে থাকা কারো দিকে তাকালে দেখা যাবে সে হাস্যকরভাবে ঠিক কতটা পেছনের দিকে হেলে আছেন। আর ঘরের ভেতর রাখা টেবিলের কিনারা ঘেসে একদম বাইরের দিকে হেলে কোন একটি ছোট্ট মেয়ের অনায়াসে হেটে যাবার দৃশ্য দেখার পর নিজের চোখকেই বিশ্বাস করা কষ্টকর হবে। তার পরও নিজের চোখকে মেনে নিতেই হবে, কারন পুরোপুরি একটি একটি বাস্তব ছবি এটি। কেউ নিজে সেই টেবিলের কিনারা ঘেসে হাটলেও এই একই ঘটনা ঘটবে ! কারন আর কিছুই নয় অভিকর্ষের আজব খেয়াল। আর কাঠের দেয়ালের সঙ্গে ৩৫ ডিগ্রি কোনে বাকিয়ে থাকা ছাদ ধরে ঝুলে থাকা কেউ ৪৫ ডিগ্রি কোনে বাকিয়ে থাকবে।

এ অবস্থায় তাকে মনে হবে গোল্ড মেডেল জেতা কোন বিশ্বখ্যাত জিমন্যাস্ট। স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে উত্তর গোলার্ধের সব গাছই কোন কারনে বাকালে ঘড়ির কাটার দিকে বাকায়। কিন্তু মিস্ট্রি স্পটের গাছ গুলো ঠিক এর উল্টোপাসে মানে দক্ষিণ গোলার্ধের গাছেদের মত ঘড়ির কাটার বিপরিত দিকে ঘুরে দাড়ায়। জায়গাটির অনেক গাছই এভাবে ঘড়ির কাটার বিপরিত দিকে বাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্যলির্ফোনিয়ার তিনজন নাম করা উদ্ভিদবিদেরও দাবি এখান কার গাছ গুলো এমন আচরন করে যেন তারা পৃথীবির বিপরিত মানে নিরক্ষরেখার অপর পাশে আছে।

এই মিস্ট্রি স্পটে পুরোপুরি সমতল কোন কিছুকে মনে হয় অসমান। বার বার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও ধাঁধায় পরতে হয়। বৈজ্ঞানিক সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়না। পর্যটকদের অনেকের কাছেই প্রথম প্রথম এর সবকিছুই দেখার ভুল বলে মনে হতেপারে। কিন্তু বার বার এসেছেন এমন অনেকেরই শেষ পর্যন্ত ভুল ভেঙ্গেছে।

তাদের বেশীর ভাগের মতে জায়গাটির চুম্বক ক্ষেত্রে বড় ধরনের গন্ডগোল আছে, ঠিক রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত। কিন্তু মিস্ট্রি স্পটের এতসব রহস্যময় আচরনের পেছনে আসলে কি আছে তার সমাধান এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই মিস্ট্রি স্পটের সত্যিকার রহস্য জানতে আমাদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে এই প্রশ্নের উত্তর বোধ হয় এখন কারোরই জানা নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।