মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন....
(একটি জমি একটি বাড়ি মানুসের স্বপ্ন। বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদগুলোর একটি। সম্প্রতি আবাসন খাতে এক প্রকার বিশ্ফোরন ঘটে গেছে। একদিকে জমি/এপার্টমেন্টের দাম জ্যামিতিক হারে বাড়ছে অন্যদিকে অনেক ডেভেলপার/হাউজিং কোম্পানী গড়ে উঠছে যারা নিত্য নতুন অফার নিয়ে পাবলিকের সামনে হাজির হচ্ছে। সবার মত আমিও খুজে ফিরছি সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে নিজের জন্য একটি বাসস্থান।
এসব নিয়েই আমার আবাসন সিরিজ। )
পত্রিকা খুললেই অনেক অনেক হাউজিং কোম্পানীর বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এসবের মধ্যে একটি বড় অংশ আছে যারা কুয়াকাটায় জমি বা হোটেল বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। এসব বিজ্ঞাপনগুলো খুবই আকর্ষনীয়। কারন কুয়াকাটায় জমির দাম এখনো মধ্যবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে।
এসব কোম্পানীর একটি কমন কথা হলো যে আগামী ৭-৮ বছরের মধ্যে কুয়াকাটা বাংলাদেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রের একটি হবে ও সেখানে জমির অনেক দাম হবে। তখন সেখানে হোটেল নির্মান করে বা অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে একটি হোটেল সুইট কিনে ভাড়া দিয়ে মাসে-মাসে অনেক টাকা উপার্যন (লাভ) করা যাবে।
বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপনের ভাষাগুলো নিম্নরূপঃ
"মাত্র ৩ লক্ষ টাকায় ফাইভস্টার হোটেলের শেয়ার কিনুন ও মাসে ৪০হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা হালাল উপার্যন করুন"।
মাসে ৭৮০০/- টাকা বিনিয়োগ করে ৮ বছর পরে ২কোটি ৫ লক্ষ টাকা গুনে নিন।
বিভিন্ন হাউজিং মেলায় আমি যখন এসব কোম্পানীর সাথে আলাপ করতে যাই তখন তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে কুয়াকাটার গুনাগুন বর্ননা করে।
তাদের ভাষায় যেসব কারনে কুয়াকাটার জমি কেনা বা হোটেলের শেয়ার কেনা লাভজনক সেগুলো নিম্নরূপঃ
১। কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসা খুব ভালো। এবং সেখানে জমির দাম অনেক বেশী যা কাঠাপ্রতি প্রায় ১ কোটি টাকা। কুয়াকাটা যেহেতু কক্সবাজারের মতই সমুদ্রের পাড়ে গড়ে ওঠা একটি এলাকা সেহেতু সেখানেও অচিরেই কক্সবাজারের মত অবস্থা সৃস্টি হবে।
২।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দুরত্ব প্রায় ৪১০ কিলোমিটার আর কুয়াকাটার দুরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, অতএব এটি কক্সবাজারের চেয়েও ঢাকার নিকটবর্তী। তাই এখানে উন্নয়ন বেশী হবে।
৩। কক্সবাজার থেকে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখা যায় আর কুয়াকাটায় সুমুদ্রে সূর্যস্ত ও সূর্যদোয় দুটিই দেখা যায়।
৪।
কুয়াকাটা বিশ্বের সপ্তাচার্য হতে যাওয়া সুন্দরবনের কাছাকাছি। যেটি ভবিষ্যতে বিদেশী পর্যটকদেরকে আকর্ষন করবে।
ইত্যাদি ইত্যাদি.......
এসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে কুয়াকাটা সম্পর্কে কিছু বলতে হলে সেখান কক্সবাজারের সাথে তুলনা এসে পড়ে তাই আমি নিজে একটু চিন্তা করলাম কুয়াকাটা কি আসলেই ৫ বছেরের মধ্যে কক্সবাজারের মতো হয়ে যাচ্ছে। আমার সেটি মনে হয় না। কারন
১।
কুয়াকাটার সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ ভালো না। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে মাওয়া বা আরিচা সহ কয়েকটি ফেরী পার হতে হয়। রাস্তাও খুব খারাপ।
২। কুয়াকাটায় পর্যটক থাকার মতো ভালো ভালো হোটেল এখনো হয়নি।
৩। কক্সবাজার যাবার পথে চট্টগ্রাম দেশের ১ম বানিজ্যিক নগরি (ফলে চট্টগ্রাম থেকে অনেক মানুষ কক্সবাজারে বেড়াতে যায়) কিন্তু কুয়াকাটার কাছাকাছি নগর খুলনা তেমন উন্নতি লাভ করেনি।
৪। কক্সবাজারে জমির দাম বেড়েছে ও হোটেল ব্যবসা ভালো হয়ে উঠেছে সম্প্রতি মানে ২০০৫ এর পর থেকে। একটু ভেবে দেখন ১৯৯০ সালে কক্সবাজারের কি অবস্থা ছিল।
তখন যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো ছিল, পর্যাপ্ত হোটেল ছিল তারপরও ১৫ বছর লেগেছে সেখানে পর্যটন ব্যবসা লাভজনক অবস্থায় পৌছতে। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলা যায় যে কুয়াকাটাতে পর্যটন ব্যবসা লাভজনক হতে আরো প্রায় ১৫-২০ বছর প্রয়োজন।
আর সবচেয়ে যেটি ভয়ের কথা সেটি হলো যে বেশিরভার হাউজিং কোম্পানী নাকি উপজাতিদের জমি বা সরকারী খাস জমি দখল করে সেগুলো পাবলিকের কাছে বিক্রি করছে। একটি আর্শ্চয্যের কথা হচ্ছে অনেকে আবার কিছু না দেখেই সেসব জমি কিনছে।
হাউজিং কোম্পানীগুলোর একটি কমন কথা হলো যে এই সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে আর পদ্মা সেতু হলে কুয়াকাটায় যাতয়াত অনেক সহজ হবে এবং কুয়াকাটায় জমির দাম অনেক বেড়ে যাবে।
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হতে আরো প্রায় ৫-৭ বছর লাগবে।
অতএব সবদিক বিবেচনা করে কুয়াকাটায় জমি বা হোটেলের শেয়র কেনার কোন ভালো দিক আমার চোখে পড়ছে না।
(কুয়াকাটা সম্পর্কে অনেক কিছু লিখে ফেললাম কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে আমি কখনো কুয়াকাটা যাইনি। তবে সুযোগ পেলেই কুয়াকাটা দেখার ইচ্ছে মনে পোষন করি। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।