বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে গণধর্ষণের পর বিষ প্রয়োগে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে তার সাবেক প্রেমিক ও সহযোগীরা।
এ ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টায় জড়িত মোড়েলগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মাহফুজকে পুলিশ লাইনে কোজ করা হয়েছে।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর গ্রামের লাল মিয়ার কন্যা নিহত গৃহবধূ ছবি আক্তার (১৫) আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের স্থানীয় নেতা নামধারী কয়েক ব্যক্তি এবং পুলিশের এক কনস্টেবল এ ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নির্মম নির্যাতন করে ছবি আক্তারকে হত্যার পর তার দায় স্বামী-শ্বশুরের ওপর চাপানোর অপচেষ্টার এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ার পর এলাকায় এখন তোলপাড় চলছে।
সেন্টু নামের এক প্রত্যদর্শী যুবক সোমবার পুলিশের কাছে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
গত রোববার পুলিশ সুপার খন্দকার রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিবি পুলিশকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে পুলিশকে সেন্টু তার জবানবন্দীতে জানান, খালাতো বোনের দেবর শুভ’র সঙ্গে বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল নিহত ছবি আক্তারের। কিন্তু মাস পাঁচেক আগে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে পড়ে শুভ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ নভেম্বর সে কৌশলে মোবাইল ফোনে কথা বলে ছবি আক্তারকে মোরেলগঞ্জের নব্বইরশি বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসে। যুব ও শ্রমিকলীগের পরিচয়ে চলা শুভ, মিজান মল্লিক ও সদর ইউনিয়নের চৌকিদার খোকাসহ ৪/৫ ব্যক্তি বাসস্ট্যান্ডের পাশের দিনমজুর আলতাফ হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর ছবির ওপর শুরু করে বর্বর পৈশাচিক নির্যাতন। একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়লে তার মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়।
ছবির গোঙ্গানির শব্দে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে এ অমানবিক এ নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পায়।
এ অবস্থায় নরপশুরা আলতাফের ছেলে ভ্যানচালক চান মিয়াকে দিয়ে ছবিকে প্রথমে মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঈদের আগের দিন রাতে ছবি আক্তার মারা যায়।
এ ঘটনার পর থেকে আলতাফের স্ত্রী শেফালি বেগম পলাতক রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রভাবশালীদের ভয়ে শেফালি আত্মগোপন করেছে।
সে ওই নির্যাতনের ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ সাী।
এদিকে ছবির মৃত্যুর পর প্রভাব খাটিয়ে ঈদের দিন তড়িঘড়ি বাগেরহাট হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ছবির লাশ তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকে চিহ্নিত একটি প্রভাবশালী মহল গণধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা শুরু করে। তারা মোড়েলগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মাহফুজ এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় নিহতের মা খালেদা বেগমকে চাপ প্রয়োগ করে ছবি আক্তারের স্বামী পিসি বারইখালী গ্রামের ইদ্রিস আলী মাতুব্বর, শ্বশুর আব্দুর রব মাতুব্বরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিট ও আত্মহননে বাধ্য করার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করায়।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার প্রত্যদর্শী ও গণধর্ষণকারী শুভ, মিজান মল্লিক ও খোকার বন্ধু সেন্টুকে জবানবন্দি দিতে সোমবার আদালতে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। তবে ২৪ নভেম্বর তাকে ফের আদালতে নেওয়া হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শেখ আশরাফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্পর্শকাতর এই ঘটনাটিকে একটি মহল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল। প্রত্যদর্শী সেন্টু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ’
তবে তদন্তের স্বার্থে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টাকারী প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশে অপরাগতা জানান তিনি।
মোড়েলগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান, প্রাথমিকভাবে কনস্টেবল মাহফুজকে পুলিশ লাইনে কোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছবি আক্তার শরণখোলা উপজেলার পল্লীমঙ্গল ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলতি বছরের এসএসসি পরীার্থী ছিল।
এদিকে ছবির ধর্ষক ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। একটি মেয়েকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যার এ ঘটনা স্থানীয় জনগণ মেনে নিতে পারছে না।
একই সঙ্গে খুনীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে অগ্রযাত্রা, রূপান্তর, উজান মহিলা উন্নয়ন সমিতি, আস বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
সুত্র : এম আকবর টুটুল, জেলা প্রতিনিধি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।