শুভ্র বাসায় ফিরল মুখ ভরা হাসি নিয়ে। আগে সব সময় সে এমনিভাবেই বাসায় ফিরত মাঝখানে তার ওপর দিয়ে যে দুশ্চিন্তা বয়ে যাচ্ছিল তা যেন তার মুখেও ফুটে উঠত। আজ হাসিমুখে বাসায় ফিরতে দেখে সুরভীও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।
সে জিজ্ঞেস করল, কি রে হঠাৎ করে তোর মনটা ভাল হয়ে গেল মনে হয়? এমন কি ঘটেছে যে মনটা ভাল হয়ে গেল?
ভাবী তোমাকে বলেছিলাম না উর্মীর কথা।
হ্যাঁ কি হয়েছে উর্মীর?
না আমি আসলে আইডেন্টিফাই করতে পারছিলাম না সে আসলে উর্মী নাকি মায়া?
আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিস্?
না এখনো করতে পারিনি তবে কাল করতে পারব।
কীভাবে?
উর্মীকে আমি সবকিছু বলেছি, আমার বিয়ে, কনে সিলেক্ট এবং কনে সিলেক্ট করতে তার আইডেন্টি কনফার্ম হওয়া এসব, সবকিছু শুনে সে আমাকে সবকিছু বলার জন্য কাল সময় দিতে চেয়েছে।
কোথায় যাবি?
ন্যাশনাল পার্কে।
হ্যাঁ তোর কথা শুনে আমার খুব ভাল লাগল, আজ বেশি রাত জাগবি না, আজকাল তো তুই আবার অনেক রাত পর্যন্ত- মোবাইলে কথা বলছিস্। জানি না নতুন কাউকে নিয়ে ভাবছিস্ নাকি?
ভাবী তুমি ঠিকই বলেছ, আমি আরেকজনকে নিয়ে ভাবছি কিন্তাউর্মী মায়া কি না কনফার্ম হওয়ার পর। কারণ মায়াকে আমি মনে মনে ভালবাসতাম মায়া আর উর্মী যদি একজনই হয় তবে তো খুব ভাল আর যদি উর্মী মায়া না হয় তবে এখন যাকে নিয়ে ভাবছি তাকেই বিয়ে করব।
আসলে একটা কথা কি জানো তোমরা সবাই যেমন দেরি করতে চাচ্ছ না তেমনি আমিও খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান- নিতে চাচ্ছি।
যাক অনেকদিন পর কাল একটা সুসংবাদ তোর কাছ থেকে আশা করছি।
শুভ্রর কিছু ভাল লাগছে না, একটা দ্বিধা-দন্দ্ব, একটা সি্দ্ধান্তহীনতা, পাওয়া-না পাওয়া সমস- কিছু আজ যেন তার সামনে পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালকেই তাকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান-টা নিতে হবে। কে আসবে তার জীবনে মায়া নাকি নকশী? অনেকের কাছে শুনেছে যারা তাদের ভালবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পায় তাদের পরস্পরের নিকট থেকে প্রত্যাশা বেশি থাকে, সামান্য অপ্রাপ্তিকে অনেক বড় করে দেখে এবং পরষ্পরকে দোষারোপ করে আর যারা পায় না তারা না পাওয়ার বেদনায় সারাজীবন ব্যর্থতায় ভুগে তারা মনে করে তাকে ছাড়া যেন তার জীবন অতৃপ্তই রয়ে গেল।
জীবন যেন এক জটিল অংক, একটু ভুল হলেই সবকিছু গড়মিল হয়ে যাবে।
শুভ্র আজ রাতে কম্পিউটারে বসেনি। খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।
ঘুমাবার ব্যর্থ চেষ্টা।
না, ঘুম আসছে না।
মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
নকশী মোবাইল করেছে।
নকশীকে মোবাইল করার কথা শুভ্রর মনে ছিল কিন' করেনি। নকশী তাকে পরীক্ষার কথা বলেছিল তাও শুভ্রর মনে ছিল কিন' কেন করল না। শুভ্রর নিজেকে অপরাধী মনে হলো।
সাধারণত এমন হয় না, প্রতিশ্রুতি রক্ষার বেলায় শুভ্র খুব সহজে ফেইল করেনা। তার মনের মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করল।
শুভ্র মোবাইল রিসিভ করল না।
রিং শেষ হবার পর নকশীর মোবাইলে রিং দিল।
নকশী রিসিভ করেছে, হ্যালো, কেমন আছেন?
হ্যাঁ ভাল, আপনি?
ভাল, আমি কিন' পরীক্ষা করলাম আমার পরীক্ষায় আপনি পাস করতে পারেননি।
সরি নকশী আসলে আপনার কথা আমার খুব মনে পড়ছিল কিন' কি করব বলুন খুব ব্যস- ছিলাম।
না কোন এ্যাপোলজি দরকার নাই।
মাইন্ড করেছেন?
আসলে আমাকে রিং করার আপনার সময়ের অভাব ছিল না, আন-রিকতার অভাব ছিল। আপনার কোন দোষ নাই আমি এখনো আপনার হৃদয় ছুঁতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমার।
দেখুন বিষয়টা এভাবে নিবেন না। সরি আর এমন হবে না।
কিন' আমি যে আর কোনদিন আপনাকে রিং করব না।
কেন?
দেখুন আমি আপনাকে প্রতিদিনরিং করেছি, ম্যাসেজ পাঠিয়েছি, আমি আপনাকে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছি, আপনি একটুও হাত বাড়াননি। এটা ঠিক না কারো সঙ্গে রিলেশন হওয়া চাই ফিফটি ফিফটি, দু’জনকে সমান তালে আগাতে হয়।
আমি আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে আপনিও আমার দিকে হাত বাড়াবেন এটাই হওয়া উচিত ছিল কিন' আপনি হাত বাড়াননি আমি ভিখারীর মতো বার বার করে আপনার কাছে একটু সময় চেয়েছি। আপনি আমাকে চরমভাবে অবহেলা করেছেন। আপনার মতো আমাকে কেউ অবহেলা করেনি, ধীরে ধীরে নকশীর গলার স্বর ভারী হয়ে এলো।
শুভ্র বিনয়ের সঙ্গে বলল, নকশী প্লিজ বিশ্বাস করুন, আমি আসলে খুব বিব্রতকর অবস'ার মধ্যে আছি, আশা করছি শীঘ্রই সবকিছু কাটিয়ে উঠব।
শুভ্র বাবা আমাকে খুব স্নেহ করে, কোনদিন যে কোন বিষয়ে বাবা আমাকে গলা উঁচু করে কথা বলেনি।
একবার বাবা আমার ওপর খুব রাগ করেছিল, আমি সেদিন রাতে ভাত খাইনি, পরদিন আমি অসুস' হয়ে পড়েছিলাম বাবা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছিল। তারপর থেকে বাবা আর কোনদিন আমাকে কিছু বলেনি। আমি অনার্স পাস করার পর বাবা আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন' আমি বলেছিলাম আমি আগে লেখাপড়া শেষ করব তারপর বিয়ে করব। আপনি বিশ্বাস করুন বাবা আমাকে রিপিট করেনি। অথচ আমি সেই নকশী একটু সময়ের জন্য, একবার মোবাইলে কথা বলার জন্য আপনার কাছে ধর্না দিচ্ছি।
মিঃ শুভ্র জানিনা কেন আমি আপনার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি?
শুভ্র বলল, নকশী আপনি আমাকে আর একদিন সময় দিন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
মিঃ শুভ্র আমি বাবা-মা’র আদরের মেয়ে, জীবনে কোনদিন আমার গায়ে ফুলের আঁচড় পর্যন- পড়েনি, বাবার কাছে কোনদিন আমি কিছু চেয়ে পাইনি এমন ঘটনা ঘটেনি। বাবা খুব বাস-ববাদী মানুষ, বাবা একটা কথা প্রায়ই বলে, মা এতবড় একটা জীবন, সারাজীবন তো আর এমনিভাবে যাবে না। জীবনে ঝড় আসবে, জীবনকে এলোমেলো করে দিবে, সবকিছু ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তারপরও বাঁচতে হবে, সবকিছু স্বাভাবিভাবে নিতে হবে।
মিঃ শুভ্র আমি ভাবতাম আমি তো লেখাপড়া করছি, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করব, বিয়ে করব, সংসার করব, ব্যাস এই তো শেষ। কিন' এখন দেখছি বাবার জীবনের প্রতি অভিজ্ঞতা অনেক আর আমার জীবনে কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না কিন' আমি খামখেয়ালি করে জীবনে একটা ঝড় ডেকে নিয়ে আসলাম।
শুভ্র বলল, নকশী আপনি ধৈর্য্য ধরুন প্ল্লিজ।
মিঃ শুভ্র আমি আর কোনদিন আপনাকে মোবাইল করব না, কোনদিন এস.এম.এসও পাঠাব না। তবে আপনার জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে যখন ইচ্ছা মোবাইল করবেন।
চলে আসবেন আমার কাছে আমি আপনাকে অবহেলা করব না। আমি আপনাকে শিখাব কিভাবে মানুষকে আপন করতে হয়, কীভাবে মানুষকে হৃদয়ে স্থানদিতে হয়। রাখি আপনি খুব ভাল থাকুন, বলতে বলতে নকশীর কান্নাভাঙ্গা গলার স্বর ভেসে এলো।
হ্যালো, হ্যালো, না নকশী লাইন কেটে দিয়েছে।
শুভ্র আবার নকশীর মোবাইলে রিং দিল, হ্যালো নকশী, কি হলো?
না নকশী মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।