"তুমি ভালো না বাসলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে।
তোমার পায়ের কাছে অস্তিত্ব লুটিয়ে দিয়ে-ভালোবাসা ভালোবাসা,
যে পায়, সে পায়- কি অমূল্য ধন। "
("কাউকে ভালোবাসতে গেলে তার দূর্বলতাগুলোকেও মেনে নিতে হয়। প্রকৃতির কারিগরের ওপর কারো হাত নেই। ")
কিভাবে লেখা শুরু করব বুঝতে পারছি না।
যদিও হিমি আমাকে বলে দিয়েছে,কিভাবে লিখব কিন্তু আমি আওলায়ে ফেলছি। আমার বুদ্ধি বেশি তো!(প্লীজ হিমি রাগ করো না। )টিএসসি থেকে শুরু করি।
রাত ৯ টায় হিমির সাথে দেখা হয় ফুলার রোডে। রাস্তা ঘাট শুনশান নিরবতা।
ঈদের দিন বা ঈদের পর দিন হবে হয়তো। টিএসসি তে মানুষ গিজ গিজ কিন্তু এখান টায় ভিড় একেবারেই নাই। হিমি আর আমি পাশাপাশি বসলাম। হিমি পড়েছে শাড়ি,(পুরো শাড়িতে হাতের কাজ করা। )হিমির এক আকাশ চুল সারা পিঠময় ছড়ানো।
দুই হাত ভরতি তার কাচের চূঁড়ি। হালকা শীতের বাতাস হিমির চুল ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে। আমার ভাবতে অবাক লাগছে,এই সেই বিখ্যাত হিমি(!)সে এখন আমার মত ছন্নছাড়ার পাশে বসে আছে। আমি এখন ইচ্ছা করলেই হিমির হাত ধরতে পারি। এত আনন্দ ঈশ্বর আমার জন্য রেখেছিলেন?এই খুশিতে পরপর চারটা সিগারেট শেষ করে ফেলি।
হিমির সাথে প্রথম কথা আমি'ই বলি- বলতে চেয়েছিলাম রাজনীতি নিয়ে কিন্তু বোকার মতো বলে ফেললাম,লুকোচুরিই তো প্রেমের রোম্যান্স। প্রেম যেদিন স্বীকৃতি পেয়ে যায় সেদিন থেকেই প্রেমের মজাও নষ্ট হয়ে যায়। গার্জেনদের সজাগ-চকিত দৃষ্টি আঁটঘাট বাঁধন-মাঝের দু'দিকে দু'টি মিলন-ব্যাকুল মন বিরহের মধ্যে রাত জেগে জেগে দু'চোখের নিচের পাতার নিচে কালো দাগ করে ফেলা-এইতো প্রেমের আনন্দ। নিজের প্রতি অবহেলায় দিনে দিনে শীর্ণতা প্রাপ্তিই তো প্রেমিক-প্রেমিকার লক্ষণ।
হিমি আমার কথা শুনে খিল খিল করে হেসে ফেলল।
আমি বোকার মত হিমির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি কি কিছু ভুল বলেছি?আচ্ছা,ঠিক আছে তাহলে অন্যভাবে বলি-ভালোবাসার থার্মোমিটারে তিন মাত্রার উত্তাপ আছে। মানুষ যখন বলে 'ভালোবাসিনে' সেটা হলো ৯৫ ডিগ্রী, যাকে বলে সাবনর্মাল। যখন বলে 'ভালোবাসি' সেটা হলো নাইন্টি এইট পয়েন্ট ফোর, ডাক্তারের ভাষায় তাকে বলে নর্মাল, তাতে একেবারে কোন বিপদ নেই। কিন্তু, প্রেম জ্বর যখন ১০৫ ছাড়িয়ে গেছে, তখন রুগী আদর করে বলতে শুরু করেছে 'পোড়ামুখী' তখন চন্দ্র বদনটা একেবারে সাফ ছেড়ে দিয়েছে। যারা প্রবীণ ডাক্তার, তারা বলে এইটেই হলো মরণের লক্ষণ।
এইবার হিমি বলে উঠল-"ভালোবাসার ক্ষেত্রে সেই বেশি জ্ঞানী যে ভালোবাসে বেশী, কিন্তু প্রকাশ করে কম। "
রাত ১০ টা আমরা হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি চলে আসি। আমি হিমি কে বলি ফুচকা খাবে?হিমি বলল না। আমি বললাম খাও না,আমার কাছে টাকা আছে তো। মনে মনে আমি বুদ্ধি করছি,কিভাবে আর কিছুক্ষন এই মেয়েটির পাশে থাকা যায়।
আমি হঠাৎ করে বললাম চিটাগাং যাবে হিমি?সারারাত বাসে গল্প করতে করতে যাবো। আমি অনেক গল্প জানি। তোমার ভালো লাগবে। হিমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,হুম যাবো।
রাত ১২ টায় বাস চললো চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে।
ভোর ৫ টায় বাস আমাদের নামিয়ে দেয় চিটাগাং শহরে। এর মধ্যে বাস একবার থামে কুমিল্লাতে ২০ মিনিটের জন্য। সারারাত তেমন একটা গল্প বলা হয়নি। হঠাৎ আমার অনেক ঘুম চলে আসে। হিমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমি হিমির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি।
আর এক হাত দিয়ে হিমির হাত ধরে রাখি। হিমির হাত কি নরম!
"তাহার স্পর্শে তাহার গন্ধে তাহার কন্ঠস্বরে
আমার স্পর্শ আমার গন্ধ আমার কন্ঠ মিশে
তাহার সময় হয় না তো শেষ, তাহার সময় জুড়ে
আমি শুধু আমিই থাকি,শুরু এবং শেষে..."
ভোর ৫ টায় বাস থেকে নেমে একটা চায়ের দোকানে বসি। দু'জন দু'কাপ চা নিই। হিমি এক চুমুক দিয়েই আর চা খায়নি। জঘন্য চা।
চায়ের দোকানে মশা,বড় বড় মশা আমাদের দেখে মনের আনন্দে রক্ত খেয়ে যাচ্ছে। বাস থেকে নেমেই দু'জন শীতে কাঁপছি। আমাদের সাথে কোন শীতের জামা নেই। আমরা তো জানতাম না চিটাগাং এ এত শীত। আকাশ তখন ও ফরসা হয়নি।
দু'জন শীতে কাপছি,সাথে আছে বড় বড় মশার কামড়। হুট করে চলে আসছি,এখন কোথায় যাবো,কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। রাতে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। সবকিছু মিলে ভয়াবহ অবস্থা। এর মধ্যে এক পাগল আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পাগলামো শুরু করেছে।
"তোমার সাথে প্রতিটি কথাই কবিতা, প্রতিটি
মুহুর্তেই উৎসব-
তুমি যখন চলে যাও সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর
সব আলো নিবে যায়,
বইমেলা জনশূন্য হয়ে পড়ে,
কবিতা লেখা ভুলে যাই। "
ভোর ছয় টায় আকাশ ফরসা হয়ে শুরু করলেই আমরা একটা রিকশায় উঠে পড়ি। শীতের কন কনে বাতাস!চারিদিকে ঘন কুয়াশা,এক হাত দূরের জিনিস ও দেখা যায় না। রাস্তা-ঘাট নির্জন। মজার ব্যাপার হলো হিমি একটুও ভয় পায়নি।
আমি বললাম তোমার ভয় করছে না?হিমি বলল,তুমি পাশে থাকলে আমার ভয় করে না। কিন্তু তখন আমি'ই ভয়ে কাপছিলাম,হিমিকে একটুও বুঝতে দেইনি। "যতোক্ষণ তুমি থাকো আমার নিকটে থাকে/সপ্তর্ষিমণ্ডল/মাথার ওপরে থাকে তারাভরা রাতের আকাশ,/তুমি যতোক্ষণ থাকো আমার এই হাতে/দেখি ইন্দ্রজাল/আঙুলে বেড়ায় নেচে চঞ্চল হরিণ;"
রিকশাতে একঘন্টা কন কনে বাতাস গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ালাম। বুঝতে পারছি হিমি শীতে কাঁপছে। কিন্তু কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমাদের তো আগে থেকে সব কিছু ঠিক করা ছিল না। এই জন্য হিমিও আমার উপর খুব বেশী রাগ করতে পারছে না। যাই হোক পরে সেই চায়ের দোকানদার আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। (সেই চায়ের দোকানদারের নাম টাও জিজ্ঞেস করা হয়নি। )
"তুমি এলে খুব কাছে আসে সুদূর নীলিমা
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্গীতের
অপূর্ব মূর্ছনা
যেন কারো অবিরল গাঢ় অশ্রুপাত;
তোমার সাথে প্রতিটি বাক্য একেকটি কবিতা
প্রতিটি শব্দ শুভ্র শিশির।
"
(আর এক পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।