কাপুরুষের শেষ আশ্রয় হল দেশপ্রেম
বৃহস্পতিবার সকালে বদরগঞ্জের দোয়ানি হাজিপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের এক মা তাঁর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে ও মেয়ের বান্ধবীকে নিয়ে রিকশাভ্যানে করে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী বিনোদনকেন্দ্রে বেড়াতে যান। বিকেলে একই ভ্যানে করে বাড়ি ফেরার পথে আট-দশজন বখাটে অটোরিকশা নিয়ে তাঁদের পিছু নেয়। ভ্যানের সামনে তিনি ও তাঁর মেয়ে বসে ছিলেন। ভ্যানটি বদরগঞ্জ-মধ্যপাড়া সড়কের কাঁঠালবাগানে এলে বখাটেরা তাঁর মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করে। এ সময় চিৎকার করলে বখাটেরা চলে যায়।
মেয়েটির মা অভিযোগ করেন, কিছুদূর যাওয়ার পর ওই অটোরিকশা থেকে দুটি ছেলে তার মেয়ের হাত ধরে টান মারে। এতে মেয়েটি পাকা সড়কে পড়ে যায়। তার সামনের তিনটি দাঁতের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে যায় এবং ডান পা কেটে প্রচুর রক্ত বের হয়। এ সময় পথচারীরা এসে বখাটেদের ধাওয়া করে রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ আলী, মনির হোসেন ও অটোরিকশাচালক শাহাবুদ্দিনকে অটোরিকশাসহ আটক করে। অন্যরা পালিয়ে যায়।
আটক মোহাম্মদ আলী বদরগঞ্জের বুজরুক হাজিপুর নয়াপাড়া গ্রামের এবং মনির হোসেন যাদুনগর গ্রামের বাসিন্দা। জনতা তাদের বদরগঞ্জের শাহেদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে যান বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল আলম সরকার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোবারক আলী সরকার ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম। মধ্যরাতে ইউএনও সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আটক তিনজনকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোবারক আলী সরকার জানান, আটক ব্যক্তিরা জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আহত মেয়েটিকে গতকাল সকালে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশেদুল ইসলাম আমির জানান, মেয়েটির তিনটি দাঁত ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে। কিন্তু মেয়েটির মা অর্থাভাবে ওষুধপত্র কিনতে পারছেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটি বলে, ‘আমি ওদের (বখাটে) কঠিন শাস্তি চাই।
আমার দাঁত ভেঙেছে। ওরা যেন ছাড়া না পায়। ’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায় শুনে মেয়েটির মা কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বখাটেরা টাকা দিয়ে ছাড়া পেল কিন্তু আমার মেয়ের দাঁত কে ফিরিয়ে দেবে? আমি এ বিচার মানি না। এখন আমি মেয়েটির চিকিৎসা করব কী দিয়ে। ওর বাবাও বাড়িতে নেই।
ঈদের আগে ঢাকায় কাজ করতে গেছেন। ’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই বিচারের প্রত্যক্ষদর্শী মশিউর রহমান সরকার বলেন, ‘ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে দাঁত ভাঙল মেয়েটির। অথচ আদালতের জরিমানার টাকা চলে যাবে সরকারি কোষাগারে। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েটি কী পেল?’
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ইউএনও রেজাউল আলম সরকার বলেন, ‘এটা ইভ টিজিংয়ের আওতায় পড়ে না। আদালত যা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা বুঝেশুনেই দিয়েছেন।
’ কিন্তু ইভ টিজিং না হলে জরিমানা কেন আদায় করা হলো এবং মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে না কেন, এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ইউএনও।
এটা আজকের প্রথম আলোর একটি সংবাদ।
ইভটিজিংয়ের শিকার দরিদ্র মেয়েটির তিনটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে।
অথচ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে ইউএনও নামমাত্র জরিমানা করলেন উত্তক্ত্যকারী বদমাশগুলোকে। সে জরিমানার টাকাও নিয়ে গেলেন সরকারী কোষাগারে।
এই নির্বোধ ইউএনও মনে হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।
এর এই অন্যায় বিচারের বিচার করবে কে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।