বিবাহ করার কোন ইচ্ছা ফরিদের এই মুহূর্তে ছিল না । হঠাৎ কি ভাবে কি হয়ে গেল দেখে বাসর রাত । বউ লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে । ঘোমটা দেয়া কন্যা ফরিদকে দেখে বলল -- 'দরজাটা আটকায় আসেন । ' ফরিদ বলল -- 'আমাকে আপনি বলার দরকার নাই ।
তুমি করে বললেই হবে । ' বউ বলল -- 'সময় লাগবে । আমি হঠাৎ করে তুমি বলতে পারি না । ' ফরিদ বিছানায় এসে বসল । তারপর বলল -- 'তাড়াহুড়ার কিছু নাই ।
' বউ বলল --'আপনি কি আজকে রাতে কিছু করবেন?' ফরিদ হঠাৎ থতমত খেয়ে বলল -- 'জ্বি?'
বউ বলল -- 'কনডম আছে ?'
ফরিদ তো বিরাট অপ্রস্তুত হয়ে গেল-- 'ইয়ে মানে, হ্যা মানে না । '
বউ বলল -- 'অসুবিধা নাই । আমি নিয়ে আসছি । ওই হলুদ ব্যাগটা দেন তো । '
ফরিদ হলুদ ব্যাগটা এগিয়ে দিল ।
বউ বলল -- 'একটা বিষয় আপনাকে বলা হয় নাই । '
ফরিদের মনের ভেতর ছ্যাত করে উঠল । বাসর রাতে বউয়ের মুখে একটা বিষয় বলা হয় নাই মানে খুব্ই খারাপ সংকেত । ফরিদ বলল - 'কি বিষয়?'
বউ বলল - 'আপনি দাড়ায় আছেন কেন --- বসেন । '
ফরিদ বলল -- 'বিষয়টা কি?'
'বিষয় আসলে -- আসলে ঠিক কিভাবে যে বলব ।
'
ফরিদ বলল -- 'বুঝতে পেরেছি । আমি আসলে অতীতে ঘটে যাওয়া কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না । '
বউ বলল -- 'এইটা অতীতের কোন বিষয় না । '
'অতীতের কোন বিষয় না --তাহলে কী?'
কন্যা বলল -- 'বসেন । তারপর বলি ।
'
নাটক সিনেমার যেসব রোমান্টিক দৃশ্য ফরিদের কল্পনায় ছিল বাস্তবে তার কিছুই মিলছে না । কল্পনায় ছিল সে এসে খাটে বসব । ঘোমটা তুলে মুখটা দেখবে । চাদের মতো অপরূপ তার সৌন্দর্য । তারপর ছোট করে দু একটা কবিতার লাইন বলবে ।
কবিতাও রেডি ছিল -- 'আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে -- বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে । ' এই কবিতাটা নির্বাচন করার পেছনের একটা উদ্দেশ্য আছে । হাটু জল থেকে আসলে হাটুর ওপর কাপড় উঠিয়ে মানুষ কি করে হেটে যায় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা । সেখান থেকে আরেকটু সামনে অগ্রসর হবে ।
কিন্তু ঘটনা একদমই অন্যরকম হয়ে গেছে ।
বাসর রাতের নতুন বউ কোন কাহিনী বলতে চায় কে জানে । যে মেয়ে আপনি থেকে তুমি বলতে পারে না সে এত সহজে কনডমের কথা বলছে সেইটাও একটা সন্দেহের বিষয় । হুট হাট করে বিয়ে করে ফেলা ঠিক হয় নাই, বিরাট ভুল হয়েছে ।
বউ বলল --'এই যে আমার একটা একটা অতি সুন্দরী মেয়ে আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হয় । কেন রাজী হল এইটা নিয়ে আপনার মনে কোন প্রশ্ন আসে নাই?'
কথাটা সে খারাপ বলে নাই ।
মেয়ে কঠিন সুন্দর । এই ধরনের মেয়েদের সাধারণত অতীতের কোন ঘটনা থাকে । এ্ই যেমন ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল । তিনদির পর ভুল বুঝতে পেরে বাড়িতে ফিরে এসেছে -- এই ধরনের কোন ঘটনা । ফরিদের প্রথমেই সন্দেহ হয়েছে ।
আপত্তি করে অবশ্য কোন লাভ হয় নাই । সবাই মেয়ে একবার দেখেই কাত হয়ে গেছে । ফরিদের ধারণ তার বাবা কাত হয়েছে কন্যার আব্বাজানের শান শওকত দেখে । এই মেয়ের রূপের প্রশংসা করা যাবে না । ভাব দেখাতে হবে কোন ব্যাপার না ।
ফরিদ উদাস কন্ঠে বলল -- 'আমার কাছে সৌন্দর্য বড় বিষয় না । মনটা হলো প্রধান । '
'তাই । ' তারপর হঠাৎ করে এক ঝটকায় শাড়ি হাটু পর্যন্ত উঠিয়ে এনে বলল -- 'আচ্ছা আমার পা কি দুটো কি সুন্দর ?'
ধবধবে সুন্দর ফর্সা দুটো পা । হঠাৎ দুলাভাইয়ের কথা মনে পড়ল ।
'শালাবাবু, বিড়াল কিন্তু বাসর রাতে মারতে হয় । তা না হলে কিন্তু আমার অবস্থা হবে । দেখ না আমি তোমার আপার কথায় উঠি আর বসি । কারণ একটাই বাসর রাতে বেশি সফট হয়ে গেছিলাম । বুঝলা রূপ দেখে ভুলে গেছে হবে না ।
পুরুষ মানুষকে হতে হবে ইস্পাত কঠিন । '
বউ বলল -- 'ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না ?'ফরিদের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল ।
ঘোমটা কন্যা বলল -- 'ইচ্ছা করলে ছুয়ে দেখতে পারেন । গতকালই্ আমি ওয়েক্সিং করেছি । ওয়েক্সিং কি জানেন তো ?'
'জ্বি না ।
'
'জানেন না ! কি জানেন আপনি ?'
ফরিদ হঠাৎ বলল -- 'হাটু বিষয়ক একট কবিতা জানি । আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে -- বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে। পাড় হয়ে যায় গরু পাড় হয় গাড়ি । ' ঘোমটা কন্যা বলল -- 'জ্বি !' ফরিদ নিজের আচরণে নিজেই বিস্মিত হয়ে গেল । এই সময় হঠাৎ কবিতা আবৃত্তি করা ঠিক হলো না ।
বিশাল ঝামেলা লেগে গেছে ।
ফরিদ পরিস্তিতি সামাল দেয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে বলল -- 'না মানে বেশ গরম লাগছে জানালাটা খুলে দেই । ' বউ বলল -- 'দরজা জানলা খুলে আমি ওসব করতে পারব না । ছি: । ' ঘোমটা কন্যা হঠাৎ করে হাসতে শুরু করল ।
ফরিদ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বসে রইল । একটু পর হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলল -- 'ও আচ্ছা আপনাকে যে কথা বলতে চেয়েছিলাম । আমাদের বংশের নিয়ম হলো বিবাহের পর প্রথম এক মাস কিছু করা যাবে না । '
'কি করা যাবে না?'
'বুঝেন না । ন্যাকা ।
'
'ও আচ্ছা । ও আচ্ছা । বুঝতে পেরেছি । আমাদের বংশ মতে অবশ্য কোন বাধা নাই । '
'আমার জানানোর দরকার ছিল আমি জানালাম ।
এখন আপনি কি করবেন সেটা আপনার বিষয় । এরকম ঘটনা হয়েছে যে আমার খালু খালার নিষেধ মানে নাই । তারপর --'
ফরিদ বলল --'তারপর কি?'
'আর কি -- খালাকে প্রথম মাসেই বিধবা হতে হলো । এখন দ্বিতীয় খালুর সাথে আছে । '
'বলেন কি ! তিনি এই নিষেধ মেনে নিয়েছেন?'
'দেখছেনই তো দ্বিতীয় খালু এখনও জীবিত আছেন ।
আমি জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না । নেন আমি ফোন লাগাচ্ছি খালার সাথে কথা বলেন । '
'আরে আরে কর কি ?'
'ধরেন কোন অসুবিধা নাই । খালার সাথে আমরা খুবই ফ্রি । '
'আজব যন্ত্রণায় পড়লাম ।
'
'হ্যালো জামাইবাবু ?'
'জ্বি খালা ভাল আছেন?'
'শোন বাবা একটু ধৈর্য ধর । সবুরে মেওয়া ফলে । তোমার প্রথম খালু মেওয়া ফলার সময় দেয় নাই । এখন কে জানে উপরে বসে কি ফল খাচ্ছে । '
বউ বলল -- 'কি এবার বিশ্বাস হলো ?'
ফরিদ বলল -- 'আমি আসলে এইসব কুসংস্কার বিশ্বাস করি না ।
'
বউ বলল -- 'ও আচ্ছা । তাহলে শাড়িটা খুলে ফেলব ?'
'না না -- কিছু খোলার দরকার নেই । বাঙালি ছেলে মেয়েদের একটা ধারণা বিয়ে মানেই শুধু সেক্স । আসলে বিয়ে অনেক বড় একটা বিষয় । সেক্স ইজ এ স্মল পার্ট ।
'
'ও তাই । তাহলে শাড়ি খুলব ? '
ফরিদ বলল -- 'না না কিছু খোলার দরকার ন্ই । খালা বুজুর্গ ব্যক্তি । তিনি যখন একটা কথা বলেছেন । আমার মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বের সাথে নেয়া দরকার ।
তাছাড়া একটা মাসেরই তো বিষয় । দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে । '
বউ বলল -- 'আপনার ফোন বাজছে । '
ফরিদ বলল -- 'আবার খালা করল নাকি ! বিরাট মুসিপদে পড়লাম । হ্যলো -'
'হ্যালো মামু -- কোপাকোপি শ্যাষ?'
'কে আপনি কি বলছেন এইসব উল্টা পাল্টা ।
'
'আরে আমি মামু বলতাছিলাম । মোড়ের মুদির দোকানের কালা মামু । '
'কালা মামু !'
'বিয়া কইরা কি সব ভুইলা গেলা নাকি মামু । মনে নাই ওই যে তোমারে আর তোমার বন্ধুরে বক্সীবাজারের ফান্টু চা খাওয়াই ছিলাম । '
'ও আচ্ছা আচ্ছা কি ব্যাপার ।
'
'মামু রাইতে খানার পরে বাথরুমে ব্ইসা একটা কোত মারছি । '
'কি মারছেন?'
'কোত মারছি । '
'এইটা আবার কোন প্রাণী । এই নামে কোন প্রানীর কথা তো কখনও শুনি নাই । '
'আরে মামু ।
বিয়া কইরা তোমার মাথা আউলাইয়া গেছে নাকি । কোত মারছি মানে ভদ্র ভাষায় যারে বলে পায়খানায় বসছি । '
'কি বস আবোল তাবোল কথা বলছেন । আপনি কালকে ফোন করেন । '
'সরি মামু ।
এক মিনিট । ঘড়ি ধইরা এক মিনিটের বেশি সময় নিমু না । আমি খুবই উত্তেজিত অবস্থায় আছি । '
'যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন । '
'মামু বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান আমি বাহির করছি ।
'
'খু্বই আনন্দের বিষয় । তো আমাকের ফোন করেছেন কেন ? আমি তো জাতিসংঘের মহাসচিব না । '
'আরে মামু শুনই না । খালেদা জিয়া তো কইছিল পাগল আর শিশু ছাড়া আর কেহ নিরপেক্ষ নাই । কি কইছিল কিনা ? আবার হাইকোর্টে রায় দিছে হাসিনায় রং হেড মানে পাগল ।
তাইলে সমাধান তো হইয়াই গেল । হাসিনা হইব পাগল হিসাবে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান । প্রস্তাবটা কেমন?'
'অতি উত্তম প্রস্তাব । আপনি এক কাজ করেন কাল সকালে উঠে সোজা প্রেস ক্লাবে চলে যান । টিভি ক্যামেরার সামনে প্রস্তাবটা দেন ।
'
'তয় একটা সমস্যা আছে মামু । মগা আলমগীর না আবার প্রধান হইয়া যায় । হ্যায় তো সবচেয়ে বড় দাবিদার । হালায় কয় বিরুদি দলের জেলেরা সাগরের পানি নিয়া লাড়া-চাড়া করাতে নাকি মহাসেন হইছে । কত বড় আহাম্মক !'
'মামু ।
আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি । অন্যসময় কথা বলব । ' ফরিদ বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল -- 'সরি । পাড়ার মানুষ । কথা না বলে রেখে দিলে মনে কষ্ট পাবে ।
'
বউ বলল -- 'ফান্টু চা কি ?'
ফরিদ আকাশ থেকে পড়ল । ছোটবেলায় বায়োনিক ওম্যান নামে একটা সিরিয়াল হতো । সেখানে বায়োনিক ওম্যান দূর থেকেই সবার সব কথাবার্তা শুনতে পেত । এই মেয়ে তো বায়োনিক ওম্যান হওয়ার কথা না । সে ফোনের কথা শুলে কি করে ।
'আপনি ফোনের স্পিকার ওন রেখে কথা বললেন হঠাৎ কানে এল । আমি বিভিন্ন ধরনের চা খেতে খুব ভালবাসি । '
কথার বলার সময় ফোনের স্পিকার ওন ছিল ! যেদিন ঝামেলা বাধে একটার পর একটা বাধতেই থাকে । ফান্টু চায়ের বিষয়টাও আলোচনা করার মতো কিছু না । হঠাৎ একদিন মামু বলে --'মামু নতুন জিনিস খাইবা ।
ফান্টু চা । ' ফরিদ খেয়ে দেখে জিনিস খারাপ না । খাইলেই বেশ একটা আলগা ফূর্তির ভাব চলে আসে । দুইদিন পর ফরিদের বন্ধু তরফদার বলল আসল ঘটনা --'আরে ছাগল চায়ের সাথে ফেন্সিডিল মিশাইলে তারে কয় ফান্টু চা । কয়বার খাইছস?'
'দুই তিন বার ।
'
'আর খাইছ না । '
'কেন? ভালই তো লাগে । '
'এই সব খাইলে কিন্তু পড়ে আর দাড়ায় না । '
'কি দাড়ায় না ?'
'তোর বডিতে কি এমন জিনিস আছে যেইটা দাড়াইতে পারে । '
ফরিদ চিন্তা করে বলল --'কস কি দোস্ত?'
তরফদার বলল -- 'এইসব ছাইড়া দে ।
বিয়ার পরে বউয়ের কাছে শরম পাবি । '
ফরিদ ফান্টু চা আর খায়নি । কিন্তু এই বিষয়টা বউয়ের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় । ফরিদ বলল -- 'ফান্টু চা বিশেষ ধরনের একটা চা । '
'নামটা এমন অদ্ভুত কেন ? ফান্টু ?'
'ও আচ্ছা ।
চায়ের পাতাটা ফ্রান্স থেকে আসে তো তাই সবাই আদর করে ডাকে ফান্টু । '
'ফ্রান্সের চা । ওয়াও । আমিও খাব । '
'অবশ্যই ।
'
বউ বলল -- 'ঠিক আছে । আমার না খুব ঘুম পাচ্ছে । আমি একটু ঘুমাব । '
বউ বিছানায় একপাশে জায়গা করে শুয়ে পড়ল ।
গভীর রাত ।
ফরিদ বারান্দায় এসে বসেছে । বাইরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে । 'বাসর রাতে বৃষ্টি হলে সেই দম্পতি নাকি খুব সুখী হয় । ' কখন বউ বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে । ফরিদের দিকে তাকিয়ে বলল -- 'আপনি এত বোকা কেন ? ফোনে ওটা আমার বান্ধবী রুনা ।
আপনার সাথে একটু দুষ্টুমি করেছে । আমার খালা কি কখনও ফোন করবে ?'
ফরিদ একটু হাসল । তারপর বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইল ।
বউ ফরিদের হাত ধরল । তারপর বলল -- 'আর বৃষ্টি না ।
এবার আমাকে দেখবে । এসো । '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।