আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থ্যাংকসগিভিং আর পুনশ্চ: বখশিষ

সাধারণ মানুষ

থ্যাংকসগিভিং উপলক্ষ্যে বেশ কতগুলো দাওয়াত পাওয়া গিয়েছে। থ্যাংকসগিভিং এর গল্পটা বলে নিই প্রথমে: এর ব্যাপারটা হল ১৬২০ সালে ১০২ (মতান্তরে ১০৩ জন) মে ফ্লাওয়ার নামের এক জাহাজে করে ইউরোপ থেকে যাত্রা করে উত্তর অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে। তাদের যাত্রার মূল কারণ ছিল ধর্ম এবং সংস্কৃতি রক্ষা। তারা প্রথমে প্রথাগত চার্চের বিরোধী ছিল, পরে তারা দেশান্তরী হয়ে অন্য ইউরোপীয়ান দেশে কিন্তু সেখানে তারা ঐদেশি কালচারে মিশতে চায় নি। তখন তারা জাহাজে চড়ে বসেন।

ঐসব যাত্রীদের এখন পিলগ্রিম নামে ডাকা হয়। তারা ৬৬ দিন পরে ডাঙায় এসে পৌঁছায়। তাদের মধ্যে অনেকেই পথে মারা যায়। তারা সাথে করে ইউরোপের যেসব বীজ এনেছিল সেসবের ফলন একদম ভাল হয় নি । তখন অ্যামেরিকার আদি অধিবাসী (যাদের আমরা রেড ইন্ডিয়ান বলে সিনেমা টিনেমাতে দেখি) তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

তারা ইউরোপীয়ানদের অপরিচিত জায়গায় মাটির ব্যাপারে জ্ঞান দেয়, তাদেরকে কর্ন(ভুট্টা) চাষ করতে শেখায় । তখন ভাল ফলন হবার পর ১৯২১ সালে ৯০ জন রেড ইন্ডিয়ান আর তাদের সর্দারকে দাওয়াত করে দেশন্তরী ইউরোপীয়ানরা (সেটলার/ পিলগ্রিম) তখন থেকে থ্যাংকসগিভিং এর উৎসব শুরু হয়। নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার থ্যাংকসগিভিং পালন করে অ্যামেরিকানরা। (অতীতে কয়েকবার তারিখ চেন্জ হয়েছি ওয়াশিংটন, লিংকনের সময়) থ্যাংকসগিভিং এর আরেকটা উপলক্ষ্য হচ্ছে ভাল ফলনের, বন্ধু দেবার জন্য জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। অ্যামেরিকা ছাড়াও কানাডা এবং আরো কয়েকটি দেশে এই উৎসব হয়।

থ্যাংকসগিভিং এর অবশ্যই টার্কি (মুরগি/তিতির জাতীয় প্রাণী, মিস্টার বিনের মাথা যেটাতে আটকে গিয়েছিল ) খাওয়াতে হবে। টার্কি পাখি, এটা তুরস্ক না। অনেক ইতিহাস বললাম, বেশিরভাগই এখানকার মানুষের থেকে শোনা, লিফলেট পড়ে জানা আর উইকি থেকে উঁকি মেরে দেখা। উইকির বিশাল আর্টিকেল পুরোটা পড়ার মত শক্তি এখন নেই। আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন।

উইকি পুনশ্চ: থ্যাংকসগিভিং এরসময় এরা পরিবার পরিজনের কাছে যায়-আসে বা পরিবারিক ভাবে সময় কাটায়, তাই বিদেশিদের অনেক সময় আগের সপ্তাহে দাওয়াত করা হয় যেটাকে Pre-thanksgiving Dinner বলা হয়। আজকে একটা অর্গানাইজেশন সমস্ত ইন্টারনয়াশনাল স্টুডেন্ট দের দাওয়াত দিয়েছিল। তো সেখানে খাবার নেবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এখানকার একজন, বয়স ষাটের কোঠায় হবে, জিজ্ঞেস করল তুমি কোথা থেক এসেছ? আমি বললাম, বাংলাদেশ। বলল, বাংলাদেশের কোথা থেকে? আমি ভাবলাম বাংলাদেশের নাম মনে হয় শোনে নি কখনও, আমি বললাম এটা ইন্ডিয়ার পাশের একটা দেশ (অনেক সময়ই এভাবেই দেশ চিনিয়ে দিতে হয়, যদিও দুর্ভাগ্যজনক)। সে বলল, আমি জিজ্ঞেস করছিলাম বাংলাদেশের কোন অংশ থেকে আসছ? আমি বাংলাদেশে ছিলাম ৪ বছর, ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮।

আমি বললাম, বাহ্, তুমি হল এদেশে এসে দেখা প্রথম অ্যামেরিকান যে আমার দেশে আগে গিয়েছে। সে বলল, হুম, আমি বারিধারায় থাকতাম। আমি ইউএস এম্বেসিতে চাকরি করতাম। আমি বললাম, তাহলে তোমার দু-চারটা বাংলা শব্দ জানার কথা। সে বলল, ১২ বছর আগে চলে এসেছি।

একটা মনে আছে: বখশিষ। আমার কিছুক্ষণ সময় লাগল ব্যাপারটা বুঝতে। ঐ লোক বাংলাদেশে থাকতে এতবার এই শব্দটার মুখোমুখি হয়েছে যে তার এই একটা শব্দই মনে আছে। আমি বললাম, দ্যাটস আ ব্যাড ওয়ার্ড টু রিমেম্বার। সবাই ভাল থাকবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.