>>>বৈশাখের ঐ রুদ্র ঝড়ে আকাশ যখন ভেঙ্গে পড়ে, ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায়...<<<
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০ মিটার উঁচুতে চারপাশে পাহাড়ঘেরা সমতলভূমি আরাফাতের ময়দানে লাখ লাখ মুসলিমের কন্ঠে একত্রে ধ্বনিত হলো "লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাক। " অর্থাৎ "আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। " আজ হাজিদের সমবেত ধ্বনিতে মুখরিত ও প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পাহাড়ঘেরা পবিত্র আরাফাত ময়দান। পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজ সোমবার ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ পবিত্র হজ পালন করেছেন।
গতকাল রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই মক্কার অদূরে মিনা নগরে লাখো মানুষের ঢল নামে।
কেউ গাড়িতে, কেউবা তিন-চার ঘণ্টা পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছান। সারা রাত মিনায় তাঁবুর মধ্যে ইবাদত-বন্দেগি করে কাটান আল্লাহর মেহমানেরা। আজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে কেউ গাড়িতে, কেউ পায়ে হেঁটে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হন। সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদের আরাফাত ময়দানে আনার জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ির ব্যবস্থা করে। হাজিদের মানস চোখে ভেসে ওঠে সেই আরাফাত ময়দানের ছবি, যেখানে ১৪০০ বছর আগে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় ভাষণ দিয়েছিলেন।
বিদায় হজের ভাষণ বিশ্ব মানবতার কল্যাণে মুক্তি সনদ। সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র (ইহরাম) পরা লাখো মানুষের এই স্রোত যতই আরাফাতের নিকটবর্তী হতে থাকে, ততই তাঁরা ভাবাবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মক্কা নগর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে হাজিরা কেউ সেখানে তাঁবু টাঙিয়ে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে মাথায় ছাতা ধরে দেশ, জাতি, সাদা-কালোর ঊর্ধ্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবস্থান করেন। হজের অন্যতম অংশ ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজ পালনকারীরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন।
আরাফাতের ময়দানে কেউ, পাহাড়ের কাছে কেউ বা সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করেন। কেউ কেউ খুতবা শোনার জন্য মসজিদে নামিরাতে উপস্থিত হন। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল শাইখ হজের দিন মসজিদে নামিরায় খুতবা দেন। হজ পালনকারী খুতবা শোনেন এবং নামাজ আদায় করে নিজ নিজ তাঁবুতে ফিরেন।
হজের দিন জাবালে রাহামত বা আরাফাতের পাহাড়কে দূর থেকে দেখলে মনে হবে ‘সাদা’।
কারণ, সাদা ইহরাম পরা হজ পালনকারীরা ওই পাহাড়ে ওঠে ইবাদত করেন; তাই দূর থেকে পাহাড়কে মনে হয় সাদা পাহাড়। জাবাল মানে পাহাড় তাহলে অর্থ দাঁড়ালো রহমতের পাহাড়। এ পাহাড়ে একটি বড় উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলে থাকেন। উঁচু পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ে সিঁড়ি করা আছে যাতে এটি বেয়ে খুব সহজে চূড়ায় চলে যাওয়া যায়।
জনশ্রুতি আছে যে হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া দীর্ঘদিন কান্নাকাটির পর এখানেই এসে মিলিত হয়েছিলেন।
এ দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সৌদি কর্তৃপক্ষ এ বছর ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৯৩ হাজারের বেশি মানুষ পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ছয় হাজার ৭৩৮ জন সরকারি এবং বাকি সবাই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন। এ বছর সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৩০ লাখ লোক হজে অংশ নিচ্ছেন।
উল্লেথ্য, ২০০৬ সালে ভিড়ে পায়ের চাপে ৩৬৩ জন হাজি মারা যান। ২০০৯ সালে বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছিলেন হাজিরা।
সূত্রঃ ইন্টারনেট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।