আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুদিবসের প্রশ্ন: ইয়াসির আরাফাতকে কি খুন করা হয়েছিল?

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর জানা গেল, ফিলিস্তিনি নেতা ফরাসি হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো কীভাবে হাজির করা হবে, তা ঠিক করার কোনো উপায় তখন ছিল না।

তিনি কি নিহত হয়েছেন, নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্যজনিত কারণে? যদি হত্যাই হয়ে থাকে, তাহলে কারা তা করেছে এবং কেন? তাঁর অসুস্থতার ‘রহস্যময়’ ধরন থেকে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁকে দীর্ঘ সময়জুড়ে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। অপকর্মটি প্রমাণ করতে অনেক স্যাসাবুদও হাজির করা হয়। (এর আগে আরাফাতের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. কুর্দি, ইসরায়েলের শান্তিবাদী নেতা ইউরি আভনেরিসহ বেশ কিছু পত্রিকা একই অভিযোগ তোলে- অনুবাদক) এমনকি তাঁর কোনো কোনো ঘনিষ্ঠজনের প্রতিও সন্দেহের আঙুল তোলা হয়। সাম্প্রতিক কিছু চাঞ্চল্যকর সংবাদ (আল-জাজিরা) এ বিষয়ে নতুন বিতর্ক ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বের জন্ম দিয়েছে; খুলে দিয়েছে আলোচনার নতুন দরজা। ''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''' এ বিষয়ে গত বছরে ইউরি অভনেরির এই লেখাটা অনুবাদ করি।

আরাফাতের মৃত্যুদিবসের প্রশ্ন : তাঁকে কি খুন করা হয়েছিল?_ ইউরি অ্যাভনরি তখন কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন যে, আমি কন্সপিরেসি থিওরিকে এন্টারটেন করছি। বিতর্ক হয়। সাক্ষসাবুদ আসে। সম্প্রতি আল জাজিরা সহ বেশ কিছু নিউজমিডিয়ায় একই অভিযোগের প্রচার হয়। ঝড় ওঠে।

এর আগে ডিক চেনির তৈরি গুপ্তহত্যা দলের কথা ফাঁস হয় http://www.slate.com/id/2222820/, অভিযোগ ওঠে যে সিআইএ বেনজীর হত্যার সঙ্গেও জড়িত। শেখ মুজিব, প্যাট্রিস লুমুম্বাসহ অনেকের নামও তালিকায় চলে আসবে সন্দেহ নাই। ওদিকে এক বায়তুল্লাহ মেহসুদের সেকেন্ড হ্যান্ড দাবি করেন যে, বায়তুল্লাহ মেহসুদ ভারত ও ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছে। কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়। আরো অনেক কিছু দিনে দিনে জানা যাবে, এখন সেগুলো তুলছি না।

পরে দেখা যাবে। ;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;; পাঁচ বছর হলো আরাফাত মারা গেছেন। এর মধ্যে নৃশংস ইসরায়েলি কৌশলে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নেতা খুন হন। তাঁদের বেশির ভাগই হামাসের নেতা। ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের হাতে নিহত সবাইকে ‘শহীদ’ বলে ডাকে।

আরাফাতও তাদের চোখে একজন ‘শহীদ’ নেতা। অর্থাৎ তাদের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক বিশ্বাস রয়েছে যে আরাফাতের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। আরাফাত যদি সত্যিই খুন হয়ে থাকেন এবং যেহেতু তিনি ইসরায়েলি বিমান হামলা বা কোনো গুপ্তঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারাননি, তাহলে মূল যে প্রশ্নটা এখন ফয়সালা করতে হবে তা হলো, কে তাঁর হত্যাকারী এবং কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে? ইসরায়েলিদের তরফে আরাফাতের মৃত্যু কামনার বিষয়টি কখনোই গোপন থাকেনি। ২০০২ সালের ১ ফেব্র“য়ারি সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন কয়েক দশক আগে সুযোগ পেয়েও আরাফাতকে খুন না করার জন্য সংবাদপত্রে দেওয়া সাাৎকারে অনুতাপ করেন। ইসরায়েলি পত্রিকা মারিভকে তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে লেবানন আগ্রাসনের সময়ই তাঁর উচিত ছিল আরাফাতকে ‘শেষ করে দেওয়া’।

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তা না করার জন্য আপনি কি অনুতপ্ত?’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অনুতপ্ত। ’ আরাফাত যেদিন মারা যান, সেদিন বিবিসি তখনকার ইসরায়েলি বিরোধী নেতা শিমন পেরেজের একটি মন্তব্য প্রচার করে। পেরেজ বলেন, ‘ভালো হলো যে দুনিয়া তাঁর কবল থেকে রা পেল...মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে সূর্য এখন জ্বলজ্বল করছে। ’ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আরাফাত বছরের পর বছর ধরে বুলেটে তবিত তাঁর রামাল্লার সদর দপ্তরে গৃহবন্দী ছিলেন। জীবিত আরাফাত বিশ্বের কাছে ইসরায়েলের জন্য বিপর্যয়ের উৎস হয়ে ছিলেন।

অতি নম্রতার জন্য ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে সম না হলেও আন্তর্জাতিক মনোযোগের আলো আকর্ষণে তিনি সমর্থ ছিলেন। আরব, মুসলিম, ইউরোপীয় ও অন্যান্য জাতির সমর্থন আদায়েও তিনি অনেকটা সফল। এখনো অনেকের চোখে তিনি হলেন পথের কাঁটা। তাদের বিশ্বাস, আরাফাত ইসরায়েলের জন্য ‘বাধা হিসেবে’ দাঁড়িয়ে থাকায় অবিচল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপরে একটি অংশ তাঁর ওপর বিরক্ত ছিল, কারণ তিনি ঐক্যের স্বার্থে উপদলীয় সংঘাত বন্ধে কান্তিহীনভাবে চেষ্টা করে গেছেন এবং বিভিন্ন পকে ছাড় দিয়ে চলছিলেন।

এভাবে তিনি ফিলিস্তিনি সমাজের ওপর ওই অংশের দাপট প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দিয়ে গেছেন। ইসরায়েলও তাঁকে ঘৃণা করত। তিনি শরণার্থী সমস্যা ও জেরুজালেমের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ছাড় দিতে নারাজ ছিলেন। বুশ প্রশাসনও যখনই সুযোগ পেয়েছে, তাঁকে অপমান, অপদস্থ, বাতিল ও অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বারবার তাঁর জায়গায় মাহমুদ আব্বাস ও মোহাম্মদ দাহলানের মতো ব্যক্তিদের ‘বিকল্প নেতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে।

খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার যে, আব্বাসসহ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সাধারণ ফাতাহ সদস্য ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সামনে তাঁকে ‘শহীদ’ বলে সম্বোধন করেছে। এসবের উদ্দেশ্য ছিল তাঁর ভাবমূর্তি থেকে ফায়দা তুলে নিজেদের জনপ্রিয় করা। গল্পটি হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেত। আব্বাস ও দাহলানের মতো নেতারা নিজেদের শহীদ আরাফাতের মশালবাহী হিসেবে দেখিয়ে কেবল মুখের কথায় ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার ‘বিপ্লব সাধনের’ স্বপ্ন দেখিয়ে যেতেন। ব্যাপারটা এ রকমই চলত, যদি না পিএলওর দ্বিতীয় প্রধান নেতা ফারুক কাদ্দুমি প্রকাশ্যে দলিল-দস্তাবেজ দেখিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করতেন যে, আরাফাত খুন হয়েছেন।

কাদ্দুমি অভিযোগ তুলেছেন, আব্বাস ও দাহলান এবং এরিয়েল শ্যারন ও মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম বার্নস মিলে আরাফাতকে গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হলেও অন্যরা এখনো বেঁচে আছে। স্বাভাবিকভাবেই রামাল্লাভিত্তিক ফাতাহর নেতারা কাদ্দুমির বিরুদ্ধে গালাগালের ঝড় বইয়ে দিয়েছেন। আব্বাসের অভিযোগ, আগামী ৪ আগস্ট ফাতাহর দীর্ঘ প্রতীতি কংগ্রেস বানচালের জন্যই কাদ্দুমি এটা করেছেন। আর কাদ্দুমি বলছেন, এ অভিযোগ তিনি কংগ্রেসেই তুলতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু আব্বাস স্বাধীন কোনো দেশে কংগ্রেস হওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে অধিকৃত পশ্চিম তীরে তার স্থান নির্ধারণ করায় তাঁকে আগেই এটা প্রকাশ করতে হলো। কাদ্দুমি তিউনিসিয়ায় নির্বাসিত আছেন, পশ্চিম তীরে তাঁর আসা সম্ভব নয়। কাদ্দুমি এও বলেছেন যে, একটি ‘বিপ্লবী’ আন্দোলনের সম্মেলন ইসরায়েলের অনুমতি নিয়ে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় সফল হতে পারে না। স্বাধীন কোনো তদন্ত কিংবা অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কাদ্দুমির অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। কিন্তু আরাফাতের মৃত্যু নিয়ে এমনিতেই সন্দিহান ফিলিস্তিনিদের জন্য বেশি প্রমাণের প্রয়োজন নেই।

তারা আরাফাতের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লাগাতার হুমকি ও হত্যাচেষ্টার সাক্ষী। সাধারণ ফিলিস্তিনি যারা, বিশেষত যাদের বসবাস গাজায়, তাদেরও বিশ্বাস যে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু ফিলিস্তিনি আরাফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত। একটি ক্ষুদ্র ফিলিস্তিনি এলিট গোষ্ঠী খোলাখুলিভাবে ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থতায় ব্যস্ত। দাহলান তো প্রকাশ্যেই গাজায় নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদের পে কথা বলে গেছেন যখন ইসরায়েল গাজায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ঠিক সে সময়টায় মাহমুদ আব্বাস ও দাহলানের ফিলিস্তিনি কর্তৃপ পশ্চিম তীরে আমেরিকার অস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিতি যোদ্ধাদের ইসরায়েলের শত্র“দের (হামাস সমর্থক) বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ফারুক কাদ্দুমি খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা এবং কাদ্দুমির প্রতি আস্থা থেকে সহজেই তারা এই হত্যার অভিযোগে বিশ্বাস আনছে। কিন্তু করুণ ব্যাপার এই যে, এ বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত করার বাস্তবতা এখন ফিলিস্তিনে নেই। প্যালেস্টাইন ক্রনিকল থেকে অনুবাদ রামজি বারুদ: প্যালেস্টাইন ক্রনিকল-এর সম্পাদক, দ্য সেকেন্ড প্যালেস্টিনিয়ান ইন্তিফাদা-এর রচয়িতা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।