আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪৫০১ ইউআইএসসি উদ্বোধন: প্রতিশ্রুতির পথে, অবিচল যাত্রা

ডিজিটাল বাংলাদেশ (www.digitalbangladesh.gov.bd) ব্লগ এডিটর

'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বিনির্মাণ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো। জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর সরকার তার এ নির্বাচনী এ প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেনি বরং জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার মানসে "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গঠনে কাজ করে চলেছে অবিচল। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের কাছে কম সময়ে, কম খরচে দ্রুত তথ্য সেবা পৌছে দেয়া এবং 'অন-লাইন' এবং 'অফলাইন' সেবা প্রদান করে সারা বিশ্বের অফুরান জ্ঞান ভান্ডারের সাথে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। অনেকেই মনে করেন ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে কম্পিউটার এবং প্রযুক্তির ছড়াছড়ি। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ মূলত একটি সামাজিক পরিবর্তন।

যেখানে তথ্য প্রযুক্তিকে শুধু সহায়ক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এর জন্য সবচেয়ে জরুরী জনগণের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন। আর জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হলে সেটি তৃণমূল পর্যায় থেকে হওয়াটা খুব জরুরী। শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সাফল্য নিহিত। এ ক্ষেত্রে সহায়ক মাধ্যম হিসেবে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

আর এ কারণেই দেশের ৪৫০১ টি ইউনিয়ন পরিষদে 'ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র' (ইউআইএসসি) স্থাপন করে ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন একটি অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ সেবার পিছনে পিছনে ঘুরবে না বরং সেবাই পৌঁছে যাবে জনগণের দোরগোড়ায়। এজন্য সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ইউএনডিপি’র অর্থায়নে পরিচালিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৈরি করে জেলা তথ্য বাতায়ন। এর মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের মধ্যে তথ্য আদান প্রদানে অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হয় যা সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে ইউআইএসসি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশের অনেক ইউনিয়ন পরিষদে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সকল ইউনিয়নে ইউআইএসসি বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার জনমুখী পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টির ফলে সহজেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। তাঁর নির্দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ সুবিধাবিহীন ৮৫৯ টি ইউনিয়ন পরিষদে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হয়। প্রতি পরিবারে কমপক্ষে একজন সদস্যের কর্মসংস্থান করা বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি নির্বাচনী অঙ্গীকার। সকল ইউনিয়নে ইউআইএসসি বাস্তবায়নের ফলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্য থেকে ৯০০০ (নয়হাজার) -এরও বেশী মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হচ্ছে।

এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে, বিশাল এ জনশক্তির অর্ধেকই নারী। তবে সাড়ে চার হাজার এই ইউআইএসসিগুলিকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানগুলিকে সংখ্যার হিসেবে বিচার করাটা ঠিক হবে না, কারণ এই প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে আরো হাজার হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, আয়ের উৎস তৈরি হবে আরো বহু জনগোষ্ঠীর। স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে ইউআইএসসি'র গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনায় রেখে সরকার, জনগণ ও উদ্যোক্তার অংশীদারিত্বে ভিত্তিতে একটি বিজনেস মডেল দাঁড় করানো হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিকশিত করা হচ্ছে নেতৃত্ব। প্রতিটি ইউআইএসসি'র জন্য দু'জন করে ৯০০০ -এর বেশী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

ইউআইএসসি'র কাজের সুষ্ঠু ও কার্যকর সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তথ্য কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পর তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ সুদৃঢ় করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ইউআইএসসি ব্লগ (http://www.uiscbd.ning.com)। যেখানে তাঁরা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন এবং এ জাতীয় অভিজ্ঞতা বিনিময় দক্ষতা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে চালু হওয়া ইউআইএসসি'গুলিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। একযোগে দেশব্যাপী ৪৫০১ টি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু হলে এগুলি উন্নয়ন যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় একটি মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে।

ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র হলো একটি ''পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল''। ইউআইএসসি-গুলি গ্রামীণ জনপদে তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ইউআইএসসিগুলোতে সুলভে সরকারী, বেসরকারী ও বানিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন তথ্য ও সেবা দেয়া হচ্ছে। ইউআইএসসি-তে অনলাইন/অফলাইন সেবার মধ্যে রয়েছে ৫০ রকমের বেশী সরকারি ফরম, সরকারি সার্কুলার, বিধি, বিজ্ঞপ্তি, বিভিন্ন ডকুমেন্ট,জন্ম নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার এমপিওভূক্তির তথ্য, ভিজিএফ/ভিজিডি কার্ডধারীদের তথ্য, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ, কর্মসংস্থান বিষয়ক তথ্য, ইন্টারনেট-মোবাইলের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত সেবাসমূহ, জনগণের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি। ঘরের কাছে তুলনামূলক কম খরচে এক জায়গাতে সব সেবা নিশ্চিত হওয়ায় মানুষের যেমন সময় বাঁচবে তেমনি বাঁচবে খরচ।

এর ফলে গ্রামীণ জনপদে রাতারাতি বিশাল পরিবর্তন না হলেও টেকসই উন্নয়নের শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন ও জনগণের ক্ষমতায়ন হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ইউআইএসসি'র সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধার পাশাপাশি তথ্যসেবা আদান-প্রদানে সরকার তার হাত জনগণের দিকে বাড়িয়েই রেখেছে এখন প্রয়োজন অপর প্রান্ত থেকে সে হাত সঠিকভাবে ধরতে পারা। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাধারণ জনগণের মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এটি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদকে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে পারস্পরিক নিবিড় যোগাযোগ খুবই জরুরী।

কারণ, মানসিক পরিবর্তন ঘটানো কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব নয়, কার্যকর জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এটি অর্জন করা সম্ভব। সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ইউআইএসসি'র কার্যক্রমে জাতীয় পর্যায়ে এটুআই প্রোগ্রাম সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। এ কাজে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ইউএনডিপি প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর ২০১০ তারিখে সারাদেশের ৪৫০১টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করছেন। আর এই বিশাল আয়োজনে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউএনডিপি'র প্রশাসক (গ্লোবাল এডমিনিস্ট্রেটর) হেলেন ক্লার্ক।

ইউআইএসসি'র মাধ্যমে উন্মোচিত নতুন দিগন্ত গ্রাম নির্ভর বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার 'রূপকল্প ২০২১' অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.