আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিওয়ালী কুইন মিশেল ওবামা



বাংলাদেশ মানেই দুই ঝগড়ুটে খালাম্মার মুখচ্ছবি। পাকিস্তান মানেই দুই টেনপারসেন্ট আংকেলের বোমার ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে ভিক্ষা করে বেড়ানো। ভারত মানেই বিপাশা বসুর ঠুমকা, কারিনার নিজহাতে রান্নার লাস্য, চিন্তাবিদ মনমোহন আর রঙ দে বাসন্তী। এই তিন দেশের একটাতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য টস করতে হয়না। বারাক ওবামা তাই মনমোহন কাকুর দাওয়াতটাকেই সাম্প্রতিক নির্বাচনে রাজনৈতিক বিপর্যয় ভুলতে যাওয়ার গন্তব্য হিসেবে বেছে নিলেন।

ঢাকায় ওবামা এলে হাসিনা আন্টি সিদ্দিকা কবিরের রেসিপি, মিশেলকে বেইলী রোডের শাড়ী আর শামীম আরা নীপা ঘরানার রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দিতেন। এর মধ্যে খালেদা আন্টি দেখা করে আওয়ামী নির্যাতনের পেপার কাটিং ওবামার হাতে দিয়ে যেতেন আড়ং এর পাঞ্জাবীসহ। মিশেলকে আলাদাভাবে ইউনুস স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে হত, গ্রামীণ যাদুঘরে দারিদ্র্য দেখতে। বেশ বোরিং দাওয়াত। চারপাশে বোকা গাম্ভীর্য।

ইসলামাবাদে ওবামা এলে নানা জায়গায় বোমার তোপধধনি দিয়ে ওবামা বরণ হতো। শস্যের চেয়ে টুপি বেশী,ধর্মের আগাছা বেশি সম্মিলিত তালিবানিস্তানে এলে ওবামার মিডিয়া কাভারেজ রক্তাক্ত হয়ে যেতো অনায়াসে। ওয়াইনে চুমুক দিতে গিয়ে ওবামার মনে হতো রক্তে চুমুক দিচ্ছেন। মি টেনপারসেন্ট কিছু যুদ্ধ-খয়রাতের কথাটা গোঁফের ফাঁকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতো। একধরণের পাওনাদার ভাব জারদারীর ভিক্ষুক অবয়বে।

তিক্ত এক দাওয়াত। চারপাশে বোকামীর ছড়াছড়ি। আর দিল্লী মানেই অনাবশ্যক আড়ম্বরহীন রঙ্গিন সন্ধ্যা। অল্পে তুষ্ট এক জাত,ধর্মকে যারা সংস্কৃতির সঙ্গে চমতকারভাবে মিশিয়ে প্রমাণ করতে চলেছে ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তি। এর কারণ সাতচল্লিশের পরে ওরা নেহেরুর মতো নেতা পেয়েছিল।

তার আগে গান্ধীকে পেয়েছিল। তারা শিক্ষা-শান্তি-সংস্কৃতির আর নিজের চরকায় তেল দেয়ার মন্ত্র দিয়ে গেছেন। নিজের চরকায় তেল দিলে, আমদানী নির্ভরতা কমে রপ্তানী সামর্থ্য বাড়ে। পূজোর উপহারে বই শামিল করলে,গোলকের অন্যমানুষের সঙ্গে গল্প করার সামর্থ্য বাড়ে,তাতে ব্যবসা হয়,চাকরী হয়,অন্য সংস্কৃতির কাছ থেকে শেখার সুযোগ হয়। বাংলাদেশ সবজান্তার দেশ।

পাকিস্তান ইসলামকে কম্পলিট কোড হিসেবে নিয়ে নাস্তানাবুদ। আর ভারত কম খেয়ে কম পরে শিল্প-সংস্কৃতি-বিজ্ঞানের চর্চা করে চলেছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত মনষ্করা বাঙ্গালী সংস্কৃতির মৌলবাদ আর হীনমন্যতায় গোলকায়িত না হয়ে প্রায় ফুরিয়ে গেল। পাকিস্তান ওদিকে ভারতকে হিংসা করতে করতে কয়লা হয়ে গেলো। ভারত কিন্তু কারো কথায় কান না দিয়ে মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির লিবেরেল সাম্পানে বসে টাইটানিককে চ্যালেঞ্জ করলো যথা সময়ে।

যে কারণে ওবামা বন্ধু হিসেবে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন। ভারতের উপর ওয়াশিংটনের বসিং এর যুগ শেষ। ভারত এখন পশ্চিমা অর্থনীতির উন্নয়ন সহযোগী, সাহায্যপ্রার্থী নয়। গান্ধী মেমোরিয়ালে ওবামার শ্রদ্ধা দেখতে যাওয়া নেহাত রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নয়। ওবামার গোলক কূটনীতিতে গান্ধী একজন দার্শনিক সেটা তার পরবর্তী কার্যকলাপে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

আর মিশেল ওবামা ভারত সফরে বলিউড ধামাকার ঠুমকায় বিপাশা বসুকে বিনা মেক আপে পরাজিত করে আফ্রো আমেরিকান স্মার্টনেস দেখালেন। ফেসবুকে টুইটারে মিশেল বন্দনা। সভ্যতার স্রোত টেমস থেকে কঙ্গোর দিকে নাকি কঙ্গো থেকে টেমসের দিকে। মিশেল ওবামা কয়েকটি শিশুর সঙ্গে বলিউড গানের ঝটকায় নেচে সংস্কৃতির এক আফ্রো-আমিরিকান-ইন্ডিয়ান ফিউশন উপহার দিলেন। মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে কেনেডীর রুপসী বিড়ালাক্ষী বিধুমুখির গ্ল্যামারকে ম্লান করে দিলেন ঘনশ্যমল সৌন্দর্য্যে।

আমরা যারা দুর্গা প্রতিমার পেছনে সময় নষ্ট করলাম,তারা দিল্লীর দীপাবলীর উতসবে মিশেল ভাবীর মুজরা দেখে পুনরাবিষ্কার করলাম বর্ণবাদ এখন মিথ, মিশেল বিপাশা বসুর মতো ফেয়ার এন্ড লাভলী না মেখে, সাদা প্রাসাদ থেকে উড়ে এসে শ্যাম সৌন্দর্যের লাস্যময়ী নাচে, আবেগের সাহজিকতায়,অনায়াস মানবিক সরলতায় জয় করলেন ভারত হৃদয়। এটা দরকার ছিল দক্ষিণ এশীয় শান্তির বাতাবরণের জন্য। সংশয়বাদীরা এখন পর্যন্ত ঠাহর করতে পারেনি ব্যাপারটা কোন দিকে যাচ্ছে। অর্থনীতির পর্যবেক্ষক রা খানিকটা আঁচ করেছেন। পশ্চিমা অর্থনীতির আধিপত্যের যুগ শেষ।

চীন ২০২৭এর মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিকে পাশ কাটিয়ে যাবে। ব্রাজিল-ভারত-রাশিয়া অর্থনীতির বড় শক্তি হিসেবে জায়গা করে নেবে। জাতিসংঘের বৃহত পঞ্চশক্তির মাঝে ফ্রান্স,বৃটেনের অবস্থা হতদরিদ্র জমিদারের মতো। ফলে ২০২৫এর পর থেকে ভারতের গোলক রাজনীতির বড় শক্তি হয়ে ওঠাটা এখন সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশে যারা ভারতজুজু দেখিয়ে ভোট নেন তারা ৪৭এর আগের আত্মীয়তা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।

ভারত সফল একটি রাষ্ট্র,ভারতের প্রতিটি মানুষ দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রদূত। ফলে ভারতের গরীবীর মধ্যে,ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার সাধ পূরণ হয়েছে। আর আমরা আড়ঙ্গের হাজার টাকার নকশী কাথায় শুয়ে দেশের দুর্নাম করি,কাদা ছোড়াছুড়ি করি। দেশের বাইরে কুতসা রটাচ্ছে জামাত-শিবির-রাজাকার,দেশের মধ্যে কাদা মাখাচ্ছে বিএনপি,সেই কাদাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আওয়ামীলীগের ইভটিজার টেন্ডার পাগল দল। আর একদা ওপিয়াম চীনের মতো ফেনসিডিলের মধু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের সুযোগ বঞ্চিত হতাশ তারুণ্য।

এর মধ্যে কোন সম্ভাবনা দেখতে কী পান? পাকিস্তান যুদ্ধের বাজার। যুদ্ধখরচের চাঁদার টাকায় গিলাফে বসে কথিত কালাযাদু নিবারণে ছাগল ছদকা দিয়ে চলেছেন জারদারি। আবার মুশাররফকে ফিরিয়ে আনার জলপাই জল্পনাকল্পনার মধ্যে, আফঘানিস্তানের তালিবানদের পাঠানো বোমার হতাশার ওষুধ হাসিস নিয়ে পাকিস্তানের সুযোগবঞ্চিত তারুণ্য অপিয়াম চীনের মতোই ঘুমিয়ে। জেগে আছে ভারত। ভারতীয়রা যে যেখানে আছে ভারতের সেলস এক্সিকিউটিভ হয়ে কাজ করছে।

সরকারের সমালোচনা করার বাতিক পশ্চিমবঙ্গে। ফলে উন্নতি সবচেয়ে কম। তবে ভারত ব্র্যান্ডিং এর কাছে ধরাশায়ী পশ্চিমা দুনিয়া। কারিনা কাপুর কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানদের জন্য নাচতে যায়, ওবামার জন্য রান্না করে,চেন্নাইয়ের একদা দলিত মিস্ত্রী পরিবারের ছেলে, বোস্টনের গ্যারাজ গবেষণাগার আশ্চর্য ঘটায়,লন্ডনে মুদি দোকানী সর্দারজি ক্যাটরিনা কায়েফকে দিয়ে মুদি দোকানের ফিতা কাটায়, নেদারল্যান্ডসে শাহরুখ ডাচ বংশোদ্ভুত ভারতীয়দের সঙ্গে নিয়ে ধবল বর্ণবাদী বুড়িদের ইন্ডিয়ান দোকান থেকে, সালোয়ার কামিজ,মশলা আর বলিউড ফিল্মের সিডি কেনাতে ক্যাম্পেইন করে আসেন। ভারতীয় ধ্রুপদী শিল্পিরাও সারা গোলক চষে বেড়াচ্ছেন সেতার,তবলা্‌ বাঁশী হারমোনিয়াম,এস্রাজ নিয়ে।

ভারতের রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর যেখানেই যান দাঁড়িয়ে থেকে বলিউড ডিসকো আয়োজনের তদারকি করেন। গাম্ভীর্যের রোগ নাই, তাই পশ্চিমা তরুণ তরুণীদের মধ্য রঙ বাদ্যের আনন্দময় ভারতের ছবি আঁকেন। ভারত কোন বেহেশত নয়। তবে চিন্তার জগতে বেহেশত তৈরির জন্য থ্রি ইডিয়টস ছবি তৈরীর ক্ষমতা ভারতের আছে। ভারত রহস্য তৈরী করতে পারে অভারতীয়দের মধ্যে।

এই রহস্য ভারতীয়রা কখনো ফাঁস করেননা। ছাত্র নং অধ্যায়নং তপ, রাং দে বাসন্তী আর অল ইজ ওয়েল ভারত উত্থানের তিন মন্ত্র। এখন চিন্তার জগতে দার্শনিক অভিঘাত তৈরীর ক্ষমতা ভারতীয় লেখকদের মাঝে আছে। খেলাধুলায় শচীনের উচ্চতা সাধক ভারতের সাফল্য। বলিউড ভারত ব্রান্ডিং এর সেরা উদাহরণ।

বাংলাদেশের নির্বোধ জঙ্গী মৌলবাদী ও সবজান্তা ডারুইন মৌলবাদীরা ভারতকে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত হিংসা করে নিজেদের চারপাশে এমন এক হীনমন্য বাতাবরণ তৈরী করেছে যে মিশেল ওবামার কাছে তা কঙ্গোর চেয়ে রঙ হীন। পাকিস্তান যেমন ডারফুরের চেয়েও অন্ধকার। দক্ষিণ এশিয়ায় আলো কেবল দিল্লীতে। এই প্রত্যাশার দিওয়ালী তাদের জাতিগত অর্জন। আমরা দেখে শিখতে পারি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।