শুভ্র সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এক সঙ্গে তার মাথায় অনেকগুলো চিন্তা ভীড় করছে। বাবা, ভাই-ভাবী সবার ইচ্ছা সে বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসুক। যাওয়ার আগে সাইফুল সাহেব বার বার করে শুভ্রকে বিয়ে করার জন্য বলে গেছেন। সুরভী এবং তার পক্ষের আত্মীয় স্বজনরাপ্রায়ই একটার পর একটা সমন্ধ নিয়ে আসছে আর শুভ্র বিভিন্নভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এভাবে আর কতদিন? বয়সও তো কম হলো না। মায়াই হোক আর উর্মীই হোক তার সঙ্গে পরিচয় না হলে এতদিন হয়ত শুভ্র বিয়ে করেই ফেলত। বলা যায় পথিমধ্যে উর্মী বিঘ্ন ঘটাল। এখন উর্মী আসলে মায়া কি না তা নিশ্চিত হওয়ার পরই শুভ্র সিদ্ধান্ত নিবে।
এমনি একটা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে হঠাৎ করে নকশী তার মাঝে জড়িয়ে পড়ল।
নকশী প্রগ্রেসিভ, কথাবার্তায় আধুনিকতা আছে, মনের দিক থেকে বড় বলেই শুভ্রর মনে হয়, মোবাইলে কথা বলেই যেন সে শুভ্রকে আপন করে নিয়েছে এটা হয়ত তার উদারতা আর উর্মী রহস্যময়, নকশী কয়েকবার মোবাইলে কথা বলে তাকে যতটা আপন করে নিয়েছে উর্মী দীর্ঘদিন তার পাশাপাশি ডেস্কে কাজ করেও তার সামান্যতম স্থানও দখল করে নিতে পারেনি। নকশীর সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে শুভ্রর খুব কাছের মানুষ মনে হয় আর উর্মীর সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে শুভ্রর অন্য গ্রহের বাসিন্দা বলে মনে হয়। তারপরও শুভ্র শুধুমাত্র তাকে মায়া মনে করে অনেকদিন অপেক্ষা করেছে আর সে অপেক্ষা করতে চায় না। আবার মায়া উর্মী কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় না।
শুভ্রর মোবাইল রাতে ঘুমানোর সময় রিংগার অফ করা থাকে।
পরদিন সকালবেলা সে তার মোবাইলের কল রেকর্ড দেখে।
আজ সকালবেলা মোবাইলের কলরেকর্ড দেখতে গিয়ে শুভ্র তার মোবাইলের এস.এম.এস এর ইন বক্সে একটা ম্যাসেজ পেল।
নকশী লিখেছে
One stone is enough to break glass,
One sentence is enough to break heart,
One second is enough to fall in love,
One friend is enough to makes happy life.
Nokshi.
এস.এম.এসটা সেন্ড করেছে রাত তিনটায় এস.এম.এসটা পড়ে শুভ্র আপন মনে একটু হাসল, বাঃ সুন্দর লিখেছে তো।
শুভ্র একবার মোবাইলের ঘড়িতে সময় দেখল, সকাল সাতটা বাজে।
এত সকালে নকশীকে মোবাইল করবে? সে তো রাত তিনটার পর ঘুমিয়েছে, তবুও এমন সুন্দর একটা এস.এম.এস পাবার পর অন্ততঃ তাকে একবার থ্যাংকস্ জানানো উচিত।
শুভ্র মোবাইল করল।
একবার রিং হতেই নকশী মোবাইল রিসিভ করল, হ্যালো, হাউ আর ইউ?
হ্যাঁ ভাল, আপনি?
ভাল।
আপনার সুন্দর একটা এস.এম.এস পেয়েছি, থ্যাংকস্ এ লট।
আমি এখন সেই এক সেকেন্ড সময়ের জন্য ওয়েট করছি।
শুভ্র জিজ্ঞেস করল, নকশী আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
বলুন।
আপনার এস.এম.এসগুলো খুব সুন্দর।
একথা আপনি আগেও বলেছেন।
হ্যাঁ বলেছি, এখন একটা কথা জানতে ইচ্ছা্ করছে এই এস.এম.এসগুলো কি আপনার মনের কথা?
অবশ্যই, আপনি একটা কথা মনে রাখবেন, আমি কখনো মুখে একটা আর মনে আরেকটা এভাবে কোন কাজ করতে পারিনা। মুখে যা বলি সেটাই আমার মনের কথা। আমি তো আপনার কাছ থেকে সেই এক মিনিট সময় চাচ্ছি, তারপরই আপনি বুঝতে পারবেন, আমার চোখের দিকে তাকালেই আপনার কাছে সব ষ্পষ্ট হয়ে যাবে।
তাই নাকি?
আসুন না আজ একবার?
কোথায়? কখন?
আপনি বলুন?
আপনার অফিস শেষ ক’টায়?
পাঁচটায়, আপনার?
আমারও তো অফিস শেষ পাঁচটায়?
আপনার অফিস কোথায়?
ফার্মগেট।
শুভ্র বলল, তাহলে আপনি ছ’টায় চলে আসুন, বসুন্ধরা সিটি’তে।
ওকে।
উর্মী আগে অফিসে পৌঁচেছে। সে মাথা নত করেই শুভ্রর দু’য়েকটা কথার জবাব দিয়েছে।
শুভ্রর হাতেও কাজের চাপ তাই সেও আজ খুব কম কথা বলেছে তবে আজ শুভ্রর মনটা ভাল। প্রতিদিন উর্মীর সঙ্গে তার কথা বলার যে কৌতুহল থাকত আজ আর তেমন নাই। তবু অভ্যাসবশতঃ অনেকক্ষণ কাজ করার পর উর্মীর দিকে চেয়ারটা ঘুরিয়ে নিয়ে একটা নিঃশ্বাস টেনে বলল, উর্মী আজ তোমার হাতে কাজ বেশি নাকি?
উর্মী শুভ্রর দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ল, উর্মী তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি অসুস্থ?
না।
তোমার চোখ দু’টা তো বেশ লাল, কোন অসুখ করেছে নিশ্চয়ই।
না আমার কিচ্ছু হয়নি।
তবে তোমার চোখ লাল কেন?
বলছি তো আমার কিচ্ছু হয়নি।
উর্মী আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছ?
উর্মী বিরক্তির সুরে বলল, শুভ্র তুমি কিন্তু আমাকে নিয়ে বেশি ভাবো, এটা অট লুকিং দেখায়। অফিসে তো আরো অনেকে আছে তাদের নিয়ে তো কোনদিন ভাবো না, কাউকে তো কোনদিন ভাল-মন্দ জিজ্ঞেসও কর না, আমি মেয়ে দেখে আমাকে করুনা দেখাও। আমি তোমার এমন কে যে আমার সবকিছু তোমাকে বলতে হবে? আমি তো অনেক কিছু লুকাতেই পারি, প্রাইভেসি বলে একটা কথা আছে আর আমরা একসঙ্গে কাজ করলেও আমাদের দু’জনের মধ্যে অনেক লিমিটেশন আছে, ইচ্ছা করলেই তুমি লিমিট এক্সিড করে আমার প্রাইভেসি ব্রেক করতে পার না।
সরি উর্মী আমি তোমার কাছ থেকে এ রকম উত্তর আশা করিনি।
আসলে তুমি খুব মিস্ট্রিয়াস, সবকিছু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি কর। সহজ হতে চেষ্টা কর, সবার সঙ্গে খোলামেলা হতে চেষ্টা কর, ভাল লাগবে তবে আমার মনে হয় তোমার সাইক্রিয়াটিক দেখানো উচিত।
তারমানে আমি এবনরমাল?
না এবনরমাল না, তবে নরমালও না।
দেখ তোমাকে রেগে যাবার মতো আমি কিছু বলিনি অথচ তুমি রেগে গেলে, আসলে তুমি সব সময় নিজেকে খুব বড় ভাবো আর মনে কর দুনিয়ার সমস্ত পুরুষ তোমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সবাই তোমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে, পুুরুষ মানুষ সম্পর্কে তোমার ধারণা ঠিক না।
আমি বোরকা পরি সেজন্য তুমি আমাকে এভাবে বলছ, তুমি জানো আমি পুরুষ মানুষকে হিংস্্র মনে করি নাকি শ্রদ্ধা করি? আমি যে পুরুষ মানুষকে কত শ্রদ্ধা করি তা যদি তুমি জানতে তবে বুঝতে? আর কেন বোরকা পরি তা যদি তুমি জানতে তবে এভাবে মন্তব্য করতে পারতে না।
তবে সবকিছু বলছ না কেন?
কি বলব?
কে তুমি মায়া না উর্মী?
আমি যদি মায়া না হয়ে উর্মী হই এবং তুমি আমার কোনদিনও পরিচিত ছিলে না।
তবে আমি তোমাকে আর কোনদিন তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করব না।
আমি যদি মায়া হই?
তবে একদিন আমি যাকে মনে মনে ভালবেসেছিলাম তাকে আজ প্রকাশ্যে ভালবাসবো তাকে বিয়ে করে বউ বানাবো।
কিন্তু আমি মায়া একথা জানার পরও তুমি যদি বিয়ে করতে না চাও?
অসম্ভব।
শুভ্র আমি মায়া নাকি উর্মী সেটা তুমিই আবিস্কার করবে।
তবে আমাকে আবিস্কারের পর তুমি কি করবে সে দায়িত্ব তোমার, আমার বিশ্বাস আমি যদি মায়াও হই তবুও তুমি আমাকে বিয়ে করবে না। যা হোক তোমার সন্দেহটা দূর করা দরকার। প্রথম চাকরির দিন থেকে তুমি বিষয়টা বিভিন্নভাবে জানতে চেষ্টা করেছ। আমাকে আর ক’দিন সময় দাও প্লিজ।
ওকে।
শুভ্র আমার মনটা ভাল নাই তাই তোমার ওপর রাগ করেছি, প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবে না।
শুভ্র আর কোন কথা বাড়াল না। সে আবার তার কাজে মনোযোগ দিল।
আজ কাজের চাপ একটু বেশি ছিল। শুভ্র তাড়াহুড়া করছিল।
নকশী মোবাইল করল ঠিক পাঁচটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে।
শুভ্র মোবাইল রিসিভ করল, হ্যালো।
স্যার আপনার কি অফিস শেষ হয়েছে?
শুভ্র আম্তা আম্তা করে বলল, না এই আর কয়েকমিনিটের মধ্যে আমি ফ্রি হবো।
আমি রওয়ানা হলাম।
শুভ্র বাধা দিয়ে বলল, প্লিজ একটু সময় দিন, আমি বের হয়ে আপনাকে রিং দিব।
আচ্ছা ঠিক আছে।
শুভ্র মোবাইল রাখার পর উর্মী জিজ্ঞেস করল, তোমার কি আজ বাইরে কোন কাজ আছে?
না, ঠিক কাজ না।
তোমার যদি কোন তাড়া থাকে আর কাজের চাপ বেশি থাকে তবে আমি তোমাকে হেল্প করি?
নো থ্যাংকস্।
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।