আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে সমর্থনই প্রমাণ করে অরাজকতার পেছনের শক্তিটি যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিএনপি

আসল কথায় যাবার আগে উইকিপিডিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসটা একটু দেখা যাক ..... বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ[১] বাংলাদেশের একটি [২] [৩]রাজনৈতিক দল যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার[৪] অভিযোগ আছে। [৫][৬][৭] এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।

এই দলটির ছাত্র শাখার নাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। দলটির বর্তমান প্রধান [৮] যুদ্ধাপরাধী[৯] মতিউর রহমান নিজামী। ২০১০ সালের ২৯শে জুন তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। [১০] বাংলাদেশবিরোধী জামায়াতিরাই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী[১১] সেটা নানা প্রমাণের[১২]মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। [১৩] তাই জামায়াত আর রাজাকার সমার্থক শব্দ।

[১৪] শীর্ষ ৫০ যুদ্ধাপরাধীদের প্রাথমিক তালিকাতে ৩য় অবস্থানে আছেন মতিউর রহমান নিজামী যা ২০০৮ সালে প্রকাশ করেছে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম । [১৫] বাংলাদেশ পূর্ব অধ্যায় সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। [১৬]সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। [১৭] বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতের কড়া সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানীদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানী মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না। [১৮] জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। ৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্য ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। গোলাম আযম ও এই কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।

[১৯] বাংলাদেশ অধ্যায় ১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এর ভারপ্রাপ্ত আমীর পদ লাভ করেন আব্বাস আলি খান।

বর্তমান নেতৃত্ব আমীর (দলীয় প্রধান)- মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। সিনিয়র নায়েবে আমীর- মাওলানা আবুল কালাম মুহম্মদ ইউসুফ। নায়েবে আমীর- জনাব মকবুল আহমদ। নায়েবে আমীর- অধ্যাপক এ. কে. এম নাযির আহমদ। সেক্রেটারী জেনারেল- আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ।

এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল- মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল- আব্দুল কাদের মোল্লা। এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল- এ. টি. এম. আজহারুল ইসলাম। আরও ইতিহাস জানতে এই লিংকে যান : Click This Link ১৯৭৩ সালের ১৮ই এপ্রিল সরকারী এক আদেশে আরো ৩৮ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে গোলাম আযমকেও বাংলাদেশের নাগরিক হবার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়। জিয়াউর রহমানের আনুকূল্যে গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সাময়িক ভাবে বাংলাদেশে আসেন এবং কোন ভিসা ছাড়াই ১৯৭৮-১৯৯৪ পর্যন্ত বাস করেন।

তিনি অলিখিত ভাবে বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক দল যাদের অধিকাংশই ১৯৭১ সালে দেশ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল তাদের আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটিকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া অনেকগুলো অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। তিনি গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দেন। কারা কিভাবে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দেন সেটা জানবেন এই লিংকে : Click This Link ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেন খালেদা জিয়া।

জাহানারা ইমাম এবং সেই আন্দোলন সম্পর্কে জানতে এই লিংকে যান : Click This Link জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্দোলন সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের জানা দরকার। তখনও জামায়াত শিবির চক্র জাহানারা ইমামসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সবাইকে মুরতাদ এবং নাস্তিক ঘোষণা করেছিল। অথচ তারা ধর্মের বিরুদ্ধে কিছুই বলেন নি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর নিজামী এবং মুজাহিদকে মন্ত্রী বানান। এখন পর্যন্ত তিনি জামাতকে তার ১৮ দলীয় জোটে বেধে রেখে লালন পালন করে যাচ্ছেন।

কারণ কী ? কারণ বিএনপির সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে পুনর্বাসন করার জন্য। মহান জিয়াউর রহমান সেই দায়িত্বটি নিয়ে রাজনীতির মাঠে তাদের ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন। সিআইএ এবং আইএসআইয়ের নীল নকশা অনুযায়ী এই শক্তিটাকে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে বিএনপি। এখন যখন সারা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিএনপির পা চাটা কুত্তা এবং জামায়াতের সহচর মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে সারা দেশে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানো হচ্ছে। দৈনিক আমার দেশ মিথ্যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে ব্লগাররা নাস্তিক।

এই আন্দোলনটি ধর্মের বিরুদ্ধে। আসলে এই আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্কই নাই। তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাব ৬ দফার মধ্যেই । গত বৃহস্পতিবার গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এই ৬ দফা ঘোষণা করা হয় : ৬টি আলটিমেটাম: ১) ঘাতক জামাত শিবিরের হামলায় শহীদ রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল মাহমুদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের আগামী ৭দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। ২) ২৬ শে মার্চের পূর্বে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সুশোধনী আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

৩) অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে সকল প্রকার জঙ্গিবাদী, এবং দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক জোগান দেয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। ৪) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যহত রাখতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। ৫) গণমানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তান্ডব বন্ধে অবিলম্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ গোপন আস্তানা সমূহ উৎখাত করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদের ভয়ংকর রূপ প্রকাশ করে দিতে হবে। ৬) যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতা গণমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই ৬ দফার কোথাও ধর্মীয় কোন বিষয় বলা হয় নি। তাহলে কেন এই তাণ্ডব ? এই তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্য। এখন বিএনপি ধীরে ধীরে তার মুখোশ খুলে বেরিয়ে আসছে। তারাই যে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি, এটাই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।