বায়তুল মোকাররমের খতিব প্রফেসর আলহাজ মাওলানা সালাহ্উদ্দিন জুমার বয়ানে বলেন, পবিত্র মাহে রমজানের বিদায়ের পর আমাদের মাঝে এসেছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল মাস হচ্ছে রোজা কবুলের মাস, তথা গুনাহ থেকে মুক্তির মাস। কেননা যার রোজা কবুল হয়েছে, সে এই মাস থেকে গুনাহর ভারমুক্ত হয়েছে। যার রোজা কবুল হয়নি তার চেয়ে হতভাগ্য আর কেউ নেই। রমজান মাসের বরকত যারা হাসিল করেছেন তারা মানসিকভাবে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন এ মাসে।
যারা রমজানের যথাযথ কদর করেনি তাদের উচিত এখনই আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তেগফার করে আল্লাহতায়ালার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া। গুনাহ ছেড়ে দিয়ে নেক আমলের দিকে ফিরে আসা। অন্যথা দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি অনিবার্য। গুনাহ থেকে তওবা না করলে, অনবরত আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থাকলে দুনিয়াতে আল্লাহ বিভিন্ন রকমের গজব-আজাব দিয়ে তাদের পাকড়াও করে থাকেন। দুনিয়ার গজব-আজাব মানুষের কৃতকর্মের ফল।
আল্লাহ বলেন, 'জলে ও স্থলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের কৃতকর্মের কারণে। ' মানুষের বিভিন্ন অপকর্ম আর পাপকার্যের কারণে এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করলে আল্লাহ ভূমিকম্প, ভূমিধস, বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, সুনামি ইত্যাদি আসমানি জমিনি গজব দিয়ে মানুষকে শাস্তি দিয়ে থাকেন। এরই মধ্যে কয়েকবার আমাদের দেশে মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে। আল্লাহ রহমত না করলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে মহাবিপর্যয়।
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এ থেকে রক্ষা করার আর কেউ নেই। মানুষের জাগতিক এবং আত্দিক অত্যাচারই ভূমিকম্পের একমাত্র কারণ। জমিনের ব্যবহার যথাযথভাবে না করা, যেমন বিল্ডিং কোড না মেনে বিল্ডিং করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নিয়মের অতিরিক্ত বসতবাড়ি তৈরি করা, ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, বিভিন্ন শিল্প-কারখানার গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা, সমুদ্রের মধ্যে শিল্পবর্জ্য ফেলা, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো ইত্যাদি অত্যাচার ভূমিকম্পের বাহ্যিক কারণ। আর বেলেল্লাপনা, লাগামহীন নাফরমানি, পাপাচার, অত্যাচার-অবিচার, ব্যভিচার এসব অশ্রাব্য কার্যাবলী হচ্ছে ভূমিকম্পের আত্দিক কারণ। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমির প্রতি মানুষের অত্যাচারমূলক আচরণই ভূমিকম্পের মূল কারণ।
এসব বিপর্যয় এবং এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে বাঁচতে হলে ভূমির প্রতি বাহ্যিক অত্যাচার পরিহার করে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি পাপকার্য পরিত্যাগ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, অত্যাচার, ব্যভিচার পরিহার করতে হবে। আল্লাহর নাফরমানি ছেড়ে তার গোলামির দিকে ফিরে আসতে হবে, নফল নামাজ, নফল রোজা জিকির-আসকার বেশি বেশি করতে হবে। তাহলে ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে বাঁচা সম্ভব। বিভিন্ন নফল ইবাদতের পাশাপাশি শাওয়াল মাসের রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
কারণ শাওয়ালের রোজা খুবই মর্যাদাকর। রাসূল (সা.) বলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে জাগতিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে। যাতে বিপর্যয় ঘটে গেলে বিপর্যস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের করুণা করুন, তওফিক দিন।
আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।