দুরুদুরু বুকে দরোজা ঠেলে ভেতরে তাকাই, মনের ভেতরে সংশয়- স্যার কি অনেক বুড়ো হয়ে গেছেন ইতিমধ্যে? সেই সে শেষবার দেখেছিলাম, তার চেয়ে ন্যুব্জ! কি অবাক কাণ্ড! ভেতরে চেয়ে দেখি, স্যার রীতিমতো ক্লাশ নিচ্ছেন। সেই যে অবিকল আগের মতো! প্রজেক্টরের উজ্জ্বল আলোর সামনে স্যার দাঁড়িয়ে! কেমন যেন এক লহমার মধ্যে হৃকম্প বোধ হতে থাকলো, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে স্যারের ক্লাশে দেরীতে পৌঁছানোর ত্রাসটি ফিরে এসেছিলো কয়েকটি সেকেণ্ডে ! সেসময়ের মতোই আমতা আমতা কৈফিয়ত দিতে গিয়ে তোতলাচ্ছি, কেউ একজন বসতে বলে বাঁচিয়ে দিলো যেন! সামলে নিতেই আরেক দফা হোঁচট খেতে খেতে দেখলাম, আরে, স্যার তো একফোঁটা বয়সে বাড়েননি, বরং পাতলা-টাতলা হয়ে ছিমছাম ঋজু এখন। শুধু মাথার চুলগুলো এখন পুরোপুরিই শুভ্র । স্যার আগের মতোই স্মার্ট আর প্রবল হিউমারবোধসহ সুবক্তা। সেই একই কথা বলার ভঙ্গী আর পরিমিত বিরতিতে মৃদু হাসি।
স্মার্টবোর্ডে প্রজেক্টরের আলোয় স্যার আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসের দৃশ্যাবলী দেখাচ্ছিলেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে। সেই স্মৃতি রোমন্থনসহ নানা টুকরো টুকরো কথা বলে চলছিলেন । শিক্ষকতার পাশাপাশি স্যারের অত্যন্ত প্রিয় শখ প্রকৃতি পরিদর্শন, উপভোগ এবং ছবি তোলা। তাঁর প্রদর্শিত ছবিগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্থান, লেক, পাখি, প্রাণী, ফুল, গাছ, রাস্তা, ছাত্রছাত্রী, বাস, বন, ঝোপঝাড়, দেয়ালের চিকা, ফুচকাওয়ালা, ভর্তিযুদ্ধ, একাকীত্ব সবই নানা বৈচিত্র্যে উঠে এসেছে।
থেকে থেকে উপস্থিত জা.বি.র নানা বিভাগের সাবেক ছাত্র-ছাত্রী আমরা ক’জনা হৈ হৈ করে উঠছি, ঘরোয়া আড্ডা প্রাণবন্ত হয়ে উথলে উপচে উঠছে। স্যারের স্ত্রী হাসনা জাঁহা শামসুদ্দীনও নানা আলোচনায় যোগ দিচ্ছিলেন, আফটার অল তিনিও জা.বি. ক্যাম্পাসে ৩৫টি বছর পার করেছেন। কথাবার্তা, আনন্দটিপ্পনী ইত্যাদিতে ক্রমশ: সহজ হয়ে উঠছিলাম আর প্রাণপনে নিজেকে বিশ্বাস করাতে সমর্থ হয়েছিলাম, স্যারের বক্তব্যের সূত্র ধরেই, ‘আমরা সবাই এখন এক্স-জাহাঙ্গীরনগরিয়ান’। তবু, দ্বিধা কি সহজে কাটে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।