সোনালি আজকে একটু বেশিই চঞ্চল । ছাগল ছানা যেমন তিড়িং বিড়িং করে লাফায় ঠিক তেমনি। এক্ষেত্রে পার্থক্য হচ্ছে ছাগল ছানা মার সাথে থাকলে তার সাহস বেড়ে যায় আর সোনালির ক্ষেত্রে যখন সে মায়ের দৃষ্টি সীমার বাইরে। সোনালি মার অলক্ষ্যে বাড়ি থেকে বের হতে চায়। দুর্ভাগ্য তার মা দেখে ফেলে।
‘সোনালি আজকে আর বাইরে যাসনে। ’
‘মা একটু খেলে আসি । এখনই চলে আসবো। ’
‘তোকে যেতে নিষেধ করেছি। কত কাজ পড়ে আছে! যা হাড়ি পাতিলগুলো মেজে ফেল।
’
সোনালির মনটা খারপ হয়ে যায়। শুকনো মুখে সে হাড়ি পাতিল মাজতে বসে। তার মন খারাপের কারণ- গ্রামে চরকিওয়ালা এসেছে। সাধারনত এদিকটায় অতটা আসেনা। তাদের বাস সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।
মানুষজন এমনিতেই এদিক ঘেঁষতে ভয় পায়। ঐ দেশের উর্দিওয়ালারা সীমান্তে মানুষ দেখলেই গুলি করে মেরে ফেলে। এজন্য তাদের কোনো কারণ লাগেনা। আমাদের দেশেও তো উর্দি পরা মানুষ আছে। কই কখনতো শুনলাম না তারা ঐদেশের কাউকে মেরেছে! আমরা যেমন গরীব ঐ পারের মানুষদেরও তো দেখি আমাদের মতোই।
তাহলে এটাই হবে ওরা খুব খারাপ। নাইলে শুধু শুধু কেন আমাদেরকে মারবে। এসব চিন্তাই ঘুরপাক খায় সোনালির ছোট্ট মস্তিষ্কে।
হাড়ি পাতিল ধোয়া শেষ করে সে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে। কিশোরীসুলভ চপলতায় তা আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।
হঠাৎ সে উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
‘মা ঝন্টু- মন্টু কোথায়! অনেকক্ষণ ধরে ওদের দেখছিনা। ’
ঝন্টু- মন্টু ওদের ছাগল ছানা। সোনালির খুবই প্রিয়। তার খেলার সাথি।
দিনের অনেকটা সময় সে তাদের সাথে অতিবাহিত করে। ভাবছিলো এখন ওদের সাথে খেলবে।
‘দেখে আয়তো! কিন্তু খবরদার ভুলেও যেন সীমান্তের ধারে না যাস। ’ তার মায়ের কড়া হুকুম।
‘ঠিক আছে মা।
’
সোনালি আর এক মুহূর্ত দেরি করেনা। দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। এখন তাকে আর পায় কে! মুক্ত স্বাধীন বিহঙ্গ। সে জানে ঝন্টু- মন্টু এখন কোথায় আছে! মাকে বলে বাড়ি থেকে বেরোবার ফন্দি করছিলো শুধু। তাদের বাড়ি থেকে কাছেই মহুয়া ময়দান।
এখানেই ঝন্টু- মন্টু এই সময়টা ঘুরে বেড়ায়। ছানা দুটোর স্বভাবও হয়েছে তার মতো- খালি টো টো। কিন্তু এখানে এসে সে ওদেরকে দেখতে পেলোনা। এদিক সেদিক খুজতে খুজতে কখন যে সোনালি কাটাতারের বেড়ার কাছে চলে এসেছে- নিজেও জানেনা। ভয়ে তার গলাটা শুকিয়ে আসে।
কিন্তু তার বিপরীতে উদ্ভব ঝন্টু- মন্টুর প্রতি তার মায়া। সেই মায়ার জয় হওয়াতেই সে সাহস করে এগিয়ে যায়।
হঠাৎ গুলির গগনবিদারী শব্দ। নিস্তেজ হয়ে পড়ে সোনালি। তার দেহ থেকে গল গল করে বেরিয়ে আসছে তাজা রক্ত।
তাকে বিদীর্নকারী গুলিটাও হয়তো বলছে- নাহ এটা ঠিক হয়নি। আমাকে এই কোমলমতির গা থেকে এক্ষুণি বের করে নাও।
সোনালির মা মেয়েকে খুঁজতে বেরিয়েছেন। অজানা আশংকায় তিনি আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। গন্তব্য তার কাঁটাতার।
তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে সেদিকেই পথ দেখাচ্ছে। না, মেয়েকে খুঁজে পেতে তাকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছেন মেয়ের পরিহিত জামা। কাঁটাতারে ঝুলছে সোনালির নিথর দেহ।
tanim zubair
All rights reserved
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।