কাল ১৫ আগস্ট। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর তাঁকে দাফন করা হয় টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ মুজিবকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে পেরেছিলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সেই ভাগ্যবানদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। বেঁচে আছেন কয়েকজন।
তাঁদের মধ্যে তত্কালীন টুঙ্গিপাড়ায় শেখ ছায়েরা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় মো. আবদুল হাই (৭৮), কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলী (৬২) ও তখনকার স্কুলছাত্র বর্তমানে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র ইলিয়াস হোসেন সরদার (৫২) অন্যতম। তাঁরা সবাই টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিবেশী। মো. আবদুল হাই ও ইলিয়াস হোসেন সরদার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এই তিনজনের সঙ্গেই আজ বুধবার কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মো. আবদুল হাই টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর বাড়িতে বসে ওই দিনের কথা জানালেন।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট ভোরে রেডিওতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কথা ভেসে আসে। সদর্পে কেউ একজন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার কথা ঘোষণা করছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার মানুষের কাছে সারা দেশের মুজিবভক্ত মানুষের মতো এই খবরটি অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করতে পারে। পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যার সাহস করেনি, সেখানে বাঙালিরা তাঁকে মারতে পারবে, বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেই বিশ্বাসের ভিত নড়ে যায়। রেডিওতে বার বার একই ঘোষণা। স্থানীয় শেখ ছায়েরা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে তখন কাজ করি। ভয় আর চাপা ক্ষোভে কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অবশেষে কর্মস্থলে যাই।
সারা দিন নানান আলোচনা। ততক্ষণে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বলতে গেলে সেদিন গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছিল। দুপুর দুইটার দিকে দেখি মাথার ওপর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। আতঙ্ক আর ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া মানুষের সঙ্গে মিশে অজানা আতঙ্ক নিয়ে গা শিউরে ওঠা সেই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে এগিয়ে গেলাম শতাধিক মানুষ।
শতাধিক মানুষ দেখে হেলিকপ্টার নিচে নামছে না। একপর্যায়ে পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এখন যেখানে টুঙ্গিপাড়া থানা মসজিদ, সেখানে বাক্সবন্দী রাখাল রাজাকে নিয়ে ঘাতকের হেলিকপ্টার নামে। পুলিশ কফিন বহনের জন্য আহ্বান জানালে প্রথমে পাঁচ-ছয়জন এগিয়ে যাই। কফিন এত ভারী যে ঘাড়ে করে বয়ে চলা কষ্ট হচ্ছিল।
বাঘিয়া নদীর তীরে কফিনটি মাটিতে রেখে আমরা এক দণ্ড দাঁড়িয়েছিলাম। হয়তো বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, তার শৈশব-কৈশরের স্মৃতিমাখা বাঘিয়ার তীরে এক দণ্ড থামতে! কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে আবার এগিয়ে চলার হাঁক সেনাবাহিনীর। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।