আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালাতে রাফ'উল ইয়াদাইন সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ একটি আলোচনা

কাঁদো, যখনি কাঁদতে ইচ্ছে করবে। কান্না শুদ্ধতম আবেগ প্রকাশের একমাত্র উতকৃষ্ট মাধ্যম। অতি সুখের সংবাদ এ মানুষ শুদ্ধতা খুজে পায়, অতি দু:খের সংবাদ এ মানুষ শুদ্ধতা খুজে পায়। কাজেই কাঁদো, কেঁদেই তোমার জীবনকে তুমি শুদ্ধতা দান করো। - তুর্কী মরমী কবি দাদায়েম ঈমাস

রাফ'উল ইয়াদাইনের পক্ষে কতিপয় বিখ্যাত হাদিস - ১. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকূর জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্" বলতেন। তবে সাজদাহর সময় এরূপ করতেন না। ২. মালিক ইবনে হুওয়ায়রিস (রা হতে বর্ণিত।

তিনি যখন সালাত আদায় করতেন থন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু'হাত তুলতেন। আর যখন রুকূ করার ইচ্ছে করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত তুলতেন, আবার যখন রুকূ থেকে মাথা তুলতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা এরূপ করেছেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত মুত্তাফাক্বুন আলাইহি, আল-লু'লু' ওয়াল মারজান, আল্লামা মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী (রহ, অনুবাদ: ডক্টর শাহ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম, সোনালী সোপান প্রকাশন, পৃষ্ঠা-১১১) ৩. সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ (রা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা যখন সালাত আরম্ভ করতেন, তখন কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। অনুরূপ যখন রুকূ করার জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা লাকাল হামদ" বলতেন। তিনি সিজদায় এমনটি করতেন না।

(সহীহ বুখারী, হাদিস - ৭৩৫, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০২; এছাড়া হাদিস - ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯ দ্রষ্টব্য; সহীহ মুসলিম হাদিস - ৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৮) ৪. আলী (রা রাসূল (সা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয সালাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছে করতেন, তখনও তিনি এরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্হায় তিনি রাফ'উল ইয়াদাইন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক'আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ'উল ইয়াদাইন করতেন এবং তাকবীর দিতেন।

(সহীহ আবূ দাউদ, হাদিস - ৭৪৪; মুযাফফর বিন মুহসিন রচিত জাল হাদিসের কবলে রাসূলুল্লাহ (সা এর সালাত, পৃষ্ঠা: ১৯৭-১৯৮ থেকে ৩ ও ৪ নং হাদিস বর্ণনা করা হলো। ) সোনালী সোপান প্রকাশন এর আল-লু'লু' ওয়াল মারজান গ্রন্হ থেকে উল্লেখযোগ্য টীকা: হানাফী মাযহাবে তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া কোথাও রাফ'উল ইয়াদাইন তথা হাত উত্তলন করা হয় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা আজীবন সালাতে তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়াও রাফ'উল ইয়াদইন বা হাত উত্তলন করেছেন। উপরে বর্ণিত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা হাদিস তার জলন্ত প্রমান। ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন।

তাঁর অপর বর্ণনায় এটা রয়েছে যে, যখন তিনি (রাসূল (সা) দ্বিতীয় রাকআত হতে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও দু'হাত (কাঁধ বরাবর) উঠাতেন। (বুখারী ১ম খন্ড ১০২ পৃষ্ঠা; মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা; আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, ১০৪-১০৫ পৃষ্ঠা; তিরমীযি ১ম খন্ড, ৫৯ পৃষ্ঠা; নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা; ইবনে খুযায়মাহ ৯৫-৯৬ পৃষ্ঠা; মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা; ইবনে মাযাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা; যাদুল মা'আদ, ১ম খন্ড, ১৩৭, ১৩৮, ১৫০ পৃষ্ঠা; হিদায়া দিরায়াহ, ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা; কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ১ম খন্ড, ১৯০ পৃষ্ঠা। ) "আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা যখন সালাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন কিন্তু সাজদাহর মধ্যে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন না। রাসূল (সা মহান আল্লাহ তা'আলার সাথে সাক্ষাৎ অর্থাৎ তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই তাঁর সালাত এরূপ করতেন।

" (বায়হাকী, হেদায়াহ, ১ম খন্ড, ১১৪ পৃষ্ঠা) "আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা বলেন, রাফ'উল ইয়াদাইন হচ্ছে সালাতের সৌন্দর্য্য। রুকূতে যাবার সময় ও রুকূ হতে উঠার সময় কেউ রাফ'উল ইয়াদাইন না করলে তিনি তাকে ছোট পাথর ছুড়ে মারতেন। (নায়লুল আওত্বার ৩/১২, ফাতহুল বারী ২/২৫৭) হাদিস জগতের শ্রেষ্ঠ ইমাম ইসমা'ঈল বুখারী (রহ রাফ'উল ইয়াদাইন নামক একটি স্বতন্ত্র হাদিস গ্রন্হই রচনা করেছেন। যার মধ্যে ‌‌‌১৯৮ টি হাদিস বিদ্যমান। (তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে গ্রন্হটি ছাপা হয়েছে।

) যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল আলবানী তাঁর 'সিফাতু সালাতুন্নবী' গ্রন্হে বুখারী ও মুসলিমের হাদিস "তিনি রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় দু'হাত উঠাতেন" উল্লেখ করে টীকায় লিখেছেন - এ হস্ত উত্তোলন নবী (সা থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যস্ত। কিছু সংখ্যক হানাফী আলিমসহ বেশীরভাগ আলিম হাত উঠানোর পক্ষে মত পোষন করেন। রাফ'উল ইয়াদাইন সম্পর্কে খোলাফায়ে রাশিদীন ও আশারা মুবাশশারীন: ইমাম যায়লা'ঈ হানাফী (রহ, আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষ্নৌবী হানাফী (রহ, আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী হানাফী (রহ এবং হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ সকলেই ইমাম হাকিম (রহ থেকে বর্ণনা করেছেন, ইমাম হাকিম (রহ বলেছেন, 'রফয়ে ইয়াদাইন ব্যতীত অন্য কোন সুন্নাতের বর্ণনার ক্ষেত্রে খোলাফায়ে রাশিদীন, আশারা মুবাশশারা (জান্নাতের শুভ সংবাদ পাওয়া ১০ জন সাহাবী) এবং বড় বড় সাহাবীগণ (তাঁদের দূর দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও) এতত্রিত হয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (নাসবুর রায়াহ ১/৪১৮ পৃষ্ঠা; নাইলুল ফারকাদাইন, পৃষ্ঠা ২৬; তালখীছ আলহাবীর ১/৮২) শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ ও রাফ'উল ইয়াদাইন: শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ সালাতের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, "সালাত শুরু করার সময়, রুকূ'তে যাওয়ার সময় এবং রুকু' থেকে উঠার সময় রাফ'উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। " (গুনইয়াতুত ত্বালিবীন, পৃষ্ঠা ১০) উপরের দীর্ঘ আলোচনা থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, আমাদের অতি প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে "রাফ'উল ইয়াদাইন" করতেন।

এমনি কোন কোন হাদিসে এমনও দেখতে পাওয়া যায় যে আজীবন তিনি এমনটি করে গিয়েছেন। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে আমার আশে পাশে কোন মসজিদে তো নয়ই এমন কি কোন মুসল্লী (২/১ জন ব্যতিক্রম) কেও "রাফ'উল ইয়াদাইন" করতে দেখিনা। এর কোন সঠিক কারনও খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। কিছুটা আমাদের অজ্ঞতা, কিছুটা মাযহাবী গোঁড়ামী কিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা সুন্নাত থেকে আমাদের সরিয়ে দেয় সেটা ভেবে আমার খুব দু:খ হয়। আবার খবর পেলাম, কিছুদিন আগে রমযান মাসে সিলেটের আম্বরখানার কোন এক মসজিদে কতিপয় হানাফী মাযহাবের ঠিকাদারী আলেম এসবের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

রেকর্ডকৃত ওয়াজটি এখনও শোনা হয়নি। শোনা হলে সে বিষয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে। উপরের লেখার কারন কাউকে ছোট করা নয়। সালাতের মতো এতো পবিত্র, গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল অজ্ঞানতার অন্ধকারে পতিত থাকবে কেন? মাযহাবী গোঁড়ামীতে পরিপূর্ণ থাকবে কেন? সকল অজ্ঞানতা দূর করে, সকল গোঁড়ামী প্রতিহত করে মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সঠিক, সহজ-সরল পথে চলার তওফিক দিন। আমীন।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।