হাউকাউ পার্টি
সুগন্ধী না হলেও আকৃতি আর বর্ণ বৈচিত্রের কারণে অর্কিড আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুল।
এই ফুলটা আমাদের দেশে এখনো তেমন জনপ্রিয় না হয়ে উঠলেও পৃথিবীতে তার অস্তীত্বের ইতিহাস কিন্তু অনেক দিনের।
গ্রীক পুরান অনুসারে অর্কিড ছিলেন নিম্ফ ও স্যাটারের সন্তান। এক উৎসবের রাতে মতিভ্রস্ট হয়ে তিনি এক সন্নাসীনিকে আক্রমন করেছিলেন, এতে খেপে গিয়ে মঠের অন্যান্য সন্নাসীরা তাকে মেরে টুকরো টুকরো করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়।
তখন তার পিতা জিউসের কাছে প্রার্থনা জানালে, তিনি অর্কিডের
দেহাংশবশেষ থেকে সৃষ্টি করেন অর্কিড ফুল।
এই ছবিটা তোলার পরপরই সোহার আক্রমনে দুটো ফুলের অকালমৃত্যু হয়েছিল:#, তাই পরবর্তি ফটোসেশনে তাকে আর নেয়া হয়নি
দু'বছর আগে মানিকগঞ্জের প্রশিকায় অফিসের একটা ট্রেনিং গিয়েছিলাম। আগে থেকেই জানা ছিল যে,এখানে অর্কিডের চাষ হয়। তো যতক্ষন ট্রেনিং চলছিল, আমার আর তর সহ্য হচ্ছিল না, কখন শেষ হবে, আর কখন আমি অর্কিড আর জারবালার ফার্মটা দেখেতে যাবো।
যাই হোক, ট্রেনিং শেষে যে অল্প একটু সময় পেয়েছিলাম, তার মধ্যেই দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির হলাম সেই অর্কিড চাষের ক্ষেতে।
সেখানে ছোট ছোট প্লাস্টিকের টবে অর্কিড শিশু, আর কিছু বড় ফুলন্ত গাছের সমাহার।
সেখান থেকে বেশ কিছু ছোট চারা গাছ কিনে এনেছিলাম, (একদম চারা গাছ ২০ টাকা, আর এক বছর বয়সের একটু বড় গাছের দাম নিয়েছিল ৮০ টাকা)।
সেই গাছ গুলোকে আহলাদি মেয়ের মতো বড় করে তুলেছি, সম্প্রতি তারা আমার যত্নের উপহার হিসেবে ফুলে ভরিয়ে তুলেছে আমার বারান্দার ছোট কোনটিকে। এই যে সেই সুন্দরীরা......
অর্কিড কিন্তু খুবই কস্ট সহিষ্ণু গাছ। চাইলেই স্বল্প পসিরসের এই গাছ লাগানো যায়, বারান্দায়, সিড়ির কোনে বা জানালার পাশে। একটাই খেয়াল রাখাতে হবে যেন গাছে সরাসরি সূর্যের আলো না পড়ে আর মোটামোটি আলো হাওয়া লাগে।
যারা অর্কিডের গাছ নিজের করে পালন করতে চান, তাদের জন্য কিছু টিপস.........
অর্কিডের জন্য আলাদা টবই পাওয়া যায়, যেগুলোর গায়ে ফাকা জায়গা থাকে। এমন টবে প্রথমে একদম নীচে কিছু কয়লা বা ঝামা ইট দিতে হবে এরপরে নারকলের ছোবড়া দিয়ে বাকি অংশটা ভরাট করে তার মধ্যে অর্কিডের চারা ঝুড়িটিতে লাগান। গাছ লাগানোর মাধ্যমে হিসেবে নারকেলের ছোবড়া ছাড়াও আম গাছের মৃত ছাল কিংবা আম কাঠের গুঁড়ো (কাঠ কাটার সময়ে সেগুলো বের হয়), মোটা বালি, শুকনো গোবর এবং কিছু শুকনো মস (ভেজা দেয়ালে সবুজ হয়ে কার্পেটের মত জন্মে) ব্যবহার করা যায়।
এই গাছে স্প্রে করে পানি দিতে হয়, গরমের দিনে দু'বার, শীতে একবার। আর গাছে যদি ফুল থাকে তাহলে খেয়াল রাখতে হবে ফুলের গায়ে যেনো পানি না লাগে, কারণ তাহলে ফুল ঝরে পড়ার আগেই পঁচে যাবে।
পানি দেবার সময় গাছের কান্ড আর পাতা গুলোও ভিজিয়ে দিতে হবে।
মাসে একবার গাছের গোড়ায় চা-চামচের আধ চামচ সুফলা দু'লিটার পানিতে গুলে সামান্য পরিমাণে দিতে হবে। খুব গরমের সময় বা গাছে ফুল থাকলে সার দেয়া যাবে না।
এছাড়া ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য মাসে একবার মেটাসিড চল্লিশ ফোঁটা দু'লিটার পানিতে গুলে স্প্রেয়ারের সাহায্যে গাছে দিতে হবে। বছরে দু'বার ব্যাবিস্টিম দু'চামচ, দু'লিটার পানিতে গুলে একই পদ্ধতিতে দিলে ভাল হয়।
আর ফুল আসার পর ফুল শুকিয়ে গেলে তার স্টিকটা সাবধানে কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে।
এবার আমার সংগ্রহের দু'জন অভিজাত(কারণ দাম বেশি) অর্কিডের এর ছবি দেখুন......
আর একটা মজার কথা হলো আমার খাবার দাবারে যে ভ্যানিলা আর ভ্যানিলা ফ্লেবার ব্যবহার করি, তাও কিন্তু এক ধরণের অর্কিড থেকে তৈরি করা হয়
ভ্রমণপ্রিয় প্রকৃতিপ্রেমীরা যদি অর্কিডের অপার সৌন্দর্য দেখতে চান তাহলে ঢু' মারতে পারেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে।
এই গ্রামে ১১ একর জমির উপরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্কিড ফার্মটি অবস্থিত। এখানে সাত জাতের একুশ ধরণের মোট তিন লাখেরও বেশি অর্কিড আছে!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।