http://technologybrief.blogspot.com/
পূথিবী ধংসের আগে...
আব্দুল্লাহ-আল-মামুন
“সাইয়েন্স ফর সেভিং দি ওয়ার্ল্ড” বা সংক্ষেপে এস.এস.ডব্লিউ হচ্ছে পূথিবীর ১০০ জন সেরা বিজ্জানীদের নিয়ে গঠিত একটা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান - যারা পূথিবীর ইকোসিস্টেম,পরিবেশ দুষণ, মহাবৈশ্বিক উস্নতা, মহাবিশ্বের বহিঃজাগতিক দুর্যোগ প্রভূতি থেকে পূথিবীকে রক্ষা করে, পূথিবীকে মানুষের বসবাসের উন্নত পরিবেশ করে রাখার জন্য, দিন রাত নিরলস কাজ করে চলেছে। এখানে আছে এমন ১০০ জন মেধাবী বিজ্জানী, বলা হয়ে থাকে তারা চাইলে পূথিবীর ঘুর্ণন বন্ধ করে দেয়ার মত বুদ্ধি নাকি তারা মাথায় রাখেন। আর তাদের এই জ্জানকে আরো বাস্তবমুখী করে তুলেছে এস.এস.ডব্লিউ এর উন্নত অতি আধুনিক ল্যাবরেটরি আর অত্যন্ত জটিল গাণিতিক সমাধানের থ্রীডি স্যলুশন আর প্রবাবিলিটির নিঁখুত বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তবমুখী প্রেডিকশন প্রদানে সক্ষম অতি আধুনিক কম্পিউটার “দি পাই”। পূথিবীকে নিরাপদ রাখার মন্ত্রে দিক্ষিত অতি আধুনিক এই মেধাবী দলটিকে নেতূত্ব দিচ্ছেন সুযোগ্য নেতা,অতি সুপার কম্পিউটার “দি পাই” এর চেয়েও দ্রুততম মাথার অধিকারী, ৫০ বছরের অভিজ্জ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতবিশারদ মিঃ জিন্দা এ্যলেক্স। এই শান্ত মাথার বিজ্জানী আজ হঠাৎ ১০ মিনিটের মধ্যে এস.এস.ডব্লিউ এর সব সদস্যকে মটিং এ উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন, তাও আবার ভিডিও কনফরান্সিং নয় সরাসরি কনফারেন্স রুমে।
মিটিং এর উদ্দেশ্য হিসেবে তিনি বলেছেন, “The earth will destroy within 71 hours and 5 moments, explore the way to save it.” স্বয়ং এলেক্স এর এই উদ্বিগ্নতা নিশ্চিত কুসংবাদ বহন করে। অতি স্পর্শকাতর বিষয় না হলে তিনি এই রকম দুশিন্তাগ্রস্ত হয়ে এত দ্রুত মিটিং কল করবেন না এটা যেমন এস.এস.ডব্লিউ এর সব সদস্য জানেন, তেমনি জানেন এই সংকট সমস্ত বিশ্ববাসীর, এই সংকট যে কোনো কিছুর বিনিময়ে প্রতিহত করতে হবে। কিন্তু কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কি সেই সংকট যেটা এস.এস.ডব্লিউ এর স্বয়ং নেতাকে উদ্বেলিত করেছে!
এক এক করে সবাই চলে এসেছেন এস.এস.ডব্লিউ এর অতি আধুনিক শুন্যে ভাসমান কনফারেন্স রুমে। একটা রোবট এসে মঞ্চের উপর বেশ উঁচু শুন্য স্থানে ফসফরাসের গুড়া দিয়ে একটা সামন্তরিকের মত আঁকল। মুহুর্তেই “দি পাই” এর বিশাল থ্রীডী স্ক্রিণ ভেসে উঠল ওই ফসফরাসের সামন্তরিকের উপর।
মঞ্চে উদ্বিগ্ন মুখে প্রবেশ করলেন মিঃ এ্যলেক্স। সংক্ষিপ্ত সম্ভাশনের পর শুন্যে ভেসে থাকা ফসফরাসের সামন্তরিকের একটা বিন্দুতে আংগুল ছোয়াতেই ভেসে উঠল, পূথিবী ব্যাবচ্ছেদের একটা এ্যনিমেশন। মিঃ এ্যলেক্স ব্যখ্যা করতে শুরু করলেন। “পূথিবী সূষ্টির সময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। আস্তে আস্তে তা ঠান্ডা হয়, এবং এক সময় তা মানুষের বসবাস যোগ্য হয়।
এভাবে আস্তে আস্তে ভু-পূষ্ঠের নিচের দিকে ঠান্ডা হতে শুরু করে। পূথিবীর কেন্দ্র যখন উত্তপ্ত ছিল, তখন পূথিবীর কেন্দ্রের পরমাণু এক্স অক্ষের পজিটিভ দিকে ছুটছিল, এবং তাই সুর্য পূথিবীর পূর্ব দিকে উঠত। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন পূথিবীর কেন্দ্র ঠান্ডা হওয়া শুরু করে তখন পূথিবীর কেন্দ্রের পরমানূ গুলোর গতিও কমতে থাকে এবং তা কমতে কমতে এক পর্যায়ে শুন্য হয়ে যাবে। কিন্তু তবুও পূথিবী তার গতি জড়তার কারণে একই দিকে ঘুরবে। এবং তা অনন্তকাল ধরে ঘুরতে থাকবে।
কারণ মহাশুন্যে সব রকমের ফ্রিকশনই কম বলে ‘Law of Inertia’ সম্পুর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে । আর এই অনন্তকাল ধরে ঘোরার প্রমাণ আমরা পায় মহাকাশ যান গুলো থেকে। আমরা যান গুলোকে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে তুলে দিয়ে যানের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এবং তা ‘Law of Inertia’ অনুসারে অনন্তকাল ধরে ছুটতে থাকে কোনো রকম জ্বালানী ছাড়াই। আর সেইকারণেই আমরা পূথিবীর কেন্দ্র ঠান্ডা হয়ে এর পরমাণু গুলোর গতি কমে যাবে কিম্বা গতি শুন্য হয়ে যাবে জেনেও, ‘Law of Inertia’ অনুসারে পূথিবী অনন্তকাল ধরে ঘুরতে থাকবে মনে করে, সেটা নিয়ে অতটা চিন্তিত ছিলাম না।
কিন্তু...” - এক নিঃশ্বাশে বলে থামলেন মিঃ এ্যলেক্স। একটু বিরতি দিয়ে আবার বলা শুরু করলেন, “... কিন্তু আমাদের ‘পরমাণু মনিটরিং টিম’ আজকে হঠাৎ দেখেতে পেয়েছেন, পূথিবীর কেন্দ্রের পরমাণুগুলোর ভিতরকার ইলেক্ট্রণগুলো, হঠাৎ করেই তাদের গতির দিক পরিবর্তন করতে শুরু করছে। এবং এই পরিবর্তনের রেট ১ বিলিয়ন ইলেক্ট্রণ পার মুহুর্ত। এই হিসেবে গতি পরিবর্তন হতে থাকলে”—স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে বললেন,” আমাদের ‘দি পাই’ এর হিসেব মতে সমস্ত পরমাণু এর সবগুলো ইলেক্ট্রনের গতি পরিবর্তন হতে সময় লাগবে ৭০ ঘন্টা। এবং এই গতি পূথিবীর গতি এর উলটা দিকে কাজ করে পূথিবীকে থামাতে সময় লাগবে আরো ১ ঘন্টা।
এবং এর পর ৫ মুহুর্ত পুথিবীর গতি শুন্য থাকবে এবং তারপর এটি বিপরীত দিকে চলা শুরু করবে। ফলে সুর্য পূথিবীর পশ্চিম দিকে উঠবে। পূথিবীর উপর সুর্য আর চাঁদের মহাকর্ষ বলের তারতম্য হবে। সুর্য যে মহাকর্ষ বলে পূথিবীকে টানবে, পূর্থিবীর এংগুলার মোমেন্টাম সেই বলের চেয়ে .০২% কম হবে এবং এবং পূথিবী ছিটকে সুর্যের উপর আছড়ে পড়ে ধংস হয়ে যাবে। ”-মিঃ এ্যলেক্স একটু বিরতি নিলেন।
পুরো কনফারেন্স রুম জুড়ে পিন পতন নিরবতা। সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। সবাই অতি দ্রুত চিন্তা করে চলেছেন। আবার নিরবতা ভাংলেন মিঃ এ্যলেক্স। বলে চললেন, ”এখন থেকে আমাদের হাতে আছে আর ৭১ ঘন্টা।
এর মধ্যেই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এর সমাধান। যে কোনো মুল্যে আমাদেরকে পূথিবীর ঘুর্ণণ বন্ধ রক্ষা করতেই হবে। নাহলে ধ্ংস হয়ে যাবে আমাদের পূথিবী, ধংস হয়ে যাব আমরা, আমাদের ভবিষ্যত। সমস্ত বিশ্ববাসী আজ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের দিনটির জন্যেই পূথিবীবাসী আপনাকে আমাকে এত সম্মান, মর্যাদা দিয়ে এই এস.এস.ডব্লিউ তে রেখেছেন।
আজকে আমাদের প্রতিদান দেয়ার দিন। আজকে আমাদের ঋণ শোধ দেয়ার দিন। আসুন আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় পূথিবীকে রক্ষা করি, রক্ষা করি পূথিবীর মানুষকে। ”-ঢোক গিলে এক মুহুর্ত থেমে আবার বলা শুরু করলেন মিঃ এ্যলেক্স-“আপনারা ল্যাবরেটরিতে চলে যান। চিন্তাভাবনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করুন।
যে কোনো প্রকার সম্ভাবনা দেখার সাথে সাথে আমাকে জানাবেন। আর কারো কিছু প্রশ্ন থাকলে নেটওয়ার্ক দিয়ে ‘দি পাই’ কে জিজ্জেস করবেন। ধন্যবাদ। ”- মঞ্চ থেকে নেমে সোজা নিজের রুমে দ্রুত চলে গেলেন মিঃ এ্যলেক্স। চাপা গুঞ্জন দ্ধনি ভেসে উঠল পুরো কনফারেন্স রুম জুড়ে।
একদিন কেটে গেলো এখনো কেউ কোনো প্রস্তাবনাই দিল না। মিঃ এ্যলেক্স চিন্তিত মুখে তার দেয়ালের বিশাল থ্রীডি স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করছেন। একটা ভিডিও কল এ্যলার্টে তার চিন্তায় ছেদ পড়ল। মিঃক্যাপ্স কল করেছেন। যাক, তাহলে মনে হয় একটা সমাধান পাওয়া যাবে, কারণ মিঃক্যাপ্স খুব সুক্ষ মাথার চিন্তাশীল মানুষ।
তিনি অবশ্যই একটা ভালো সমাধান প্রস্তাব করবেন। এইসব ভাবতে ভাবতে প্রফুল্ল মেজাজেই কলটি রিসিভ করলেন মিঃ এ্যলেক্স। ভুমিকা ছাড়াই কথা শুর করলেন মিঃ ক্যাপ্স। মিঃ এ্যলেক্স, আমরা যদি পূথিবীর কেন্দ্রে এমন একটা নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারি যেটা পূথিবীর কেন্দ্রের সব ইলেক্ট্রনের গতিকে এক্স অক্ষের পজিটিভ দিকে ঘুরতে বাধ্য করবে তাহলে আর পূথিবীর ঘুর্নণ বন্ধ হবে না। কিন্তু এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।
প্রথম কথা পূথিবীর কেন্দ্রে সঠিক স্থানে পারমাণবিক বোমা টা রাখা আর দ্বিতীয়ত নিয়ন্ত্রিত সফল বিস্ফোরণ ঘটানো। মিঃ ক্যাপ্স এটুকু বলে ঢোক গিললেন। মিঃ এ্যলেক্স চিন্তিত মুখে চেয়ারে হেলান দিলেন, শান্ত ভংগিতে বসে সেলুলয়ডের স্ক্রিনে ভেসে থাকা মিঃ ক্যাপ্স এর চোখের দিকে উৎসুক দূষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। মিঃ ক্যাপ্স আবার বলা শুরু করলেন। পূথিবীর কেন্দ্র আমরা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ দিয়ে মাপতে পারব।
এখন এই কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে মানে পূথিবীর ব্যাস বরাবর আমরা যদি পূথিবীর ব্যাসার্ধ পরযন্ত ইলেক্ট্রিক হোল তৈরি করি এবং সেই হোলে আমরা পারমাণবিক বোমাটি ছেড়ে দেয়, তবে পূথিবীর কেন্দ্রের আকর্ষণে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে তা কেন্দ্রের দিকে যেতে থাকবে। কিন্তু এটা যখন কেন্দ্রে পৌছাবে তখন সেটা গতি জড়তার জন্যে যে গতি লাভ করবে সে গতি দিয়ে সে পূথিবীর কেন্দ্র ছাড়িয়ে যেয়ে থামবে। ফলে এভাবে পূথিবীর কেন্দ্রে বোমাটি স্থাপণ সম্ভব হবে না। আবার আমরা যদি পূথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পরযন্ত ইলেক্ট্রিক হোল তৈরি করি, তাহলে আমরা যখন এক প্রান্ত থেকে এটা ছাড়বো, একইভাবে এটা পূথিবীর কেন্দ্রের আকর্ষণে কেন্দ্র পরযন্ত যাওয়ার পর গতি জড়তার কারণে পূথিবীর অপর প্রান্তের দিকে রওয়ানা হবে এবং আবার যখন গতি জড়তা শেষ হবে, তখন সে যেহেতু পূথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে গেছে সুতরাং সে আবার পূথিবীর কেন্দ্রের আকর্ষণে আবার কেন্দের দিকে আসবে এবং আবার একইভাবে গতি জড়তা লাভ করবে।
এভাবে বোমাটি সরল ছন্দিত গতিতে দুলতে থাকবে।
তবে যেহেতু প্রতিবার খুব সামান্য পরিমাণ করে গতি জড়তা কমতে থাকবে সুতরাং ‘দি পাই’ এর হিসেব মতে এটি ৫৯১ ঘন্টা ৫৫ মিনিট এভাবে সরল ছন্দিত গতিতে দোলার পর সেটা পূথিবীর কেন্দ্রে স্থির হবে। কিন্তু আমাদের হাতে সময় আছে আর মাত্র ৪৩ ঘন্টা। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে থামলেন মিঃ ক্যাপ্স। এদিকে মিঃ এ্যলেক্স মিটিমিটি হাসছেন। মিঃ এ্যলেক্স কে হাসতে দেখে মিঃ ক্যাপ্স হচকিত হয়ে গেলেন।
অপ্রস্তুত হয়ে মিঃ ক্যাপ্স জিজ্জেস করলেন, আমার লজিকে কি কোনো ভুল আছে মিঃ এ্যলেক্স। মিঃ এ্যলেক্স মূদু হেসে বললেন, আপনার দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটার কথা বলুন। মিঃ এলেক্স মুখ টিপে হেসে আবার বলতে শুরু করলেন।
আমরা যদি কোনোভাবে সঠিক করে আমাদের স্পেশ্যাল পারমাণবিক বোমাটি আমরা পূথিবীর কেন্দ্রের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে পারি তখন আমরা বিস্ফোরণ ঘটাবো। আমাদের পারমাণবিক বোমাটিতে পূথিবীর ইলেক্ট্রনের ৩ গুণ বেশি ইলেক্ট্রণ আছে।
আমরা যদি বোমাটি সঠিকভাবে বসাতে পারি তবে বিস্ফোরণের পর সমস্ত ইলেক্ট্রনগুলো এক্স অক্ষের পজিটিভ দিকে ছুটতে থাকবে। এখন পূথিবীর যে সমস্ত ইলেক্ট্রন এক্স অক্ষের নেগেটিভ দিকে যাওয়া শুরু করছে কিম্বা করবে তাদেরকে এই আমাদের ইলেক্ট্রনগুলা বিকর্ষণ করে তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে দিবে। এটা অনেকটা এমন যে, ধরুন একটা মিছিল যাচ্ছে একটা সরু রাস্তা দিয়ে। মিছিলের কিছু লোক উলটা চলা শুরু করল। এখন আপনি যদি ঐ একই আয়তনের রাস্তা দিয়ে আরো একটা বড় মিছিল একই দিকে প্রবাহিত করেন, তবে রাস্তা যেহেতু সরু এবং নির্দিষ্ট সুতরাং ঐ বড় মিছিলটার প্রভাবে পুরোনো মিছিলটার উল্টাগামী লোকগুলা আর উলটা আসতে পারবে না।
এবং যেহেতু আমাদের ক্ষেত্রে, ইলেক্ট্রন দুটিই নেগেটিভ চার্জের সুতরাং তারা একে অপরকে বিকর্ষণ করবে এবং আমাদের বোমার ইলেক্ট্রনের গতি বেশি হওয়ার কারণে পূথিবীর ইলেক্ট্রনগুলোও আমাদের ইলেক্ট্রনের দিকে প্রবাহিত হবে। ফলে পূথিবীর গতি আর থামানোর মত শক্তিশালী ইলেক্ট্রন থাকবে না।
এটা হল লজিক কিন্তু... বলে একটু বিরতি দিলেন মিঃ ক্যাপ্স। ক্যাপ্স ল্কক্ষ্য করলেন মিঃ এ্যলেক্স তার টেবিলের উপরের টাচ প্যাড দিয়ে কি যেন ইকুয়েশন লিখছেন। ক্যাপ্সকে থামতে দেখে, মিঃ এ্যলেক্স বললেন, হুম ব্ললুন মিঃ ক্যাপ্স কিন্তু কি, কি সমস্যা হতে পারে? মিঃ ক্যাপ্স আবার বলতে শুরু করলেন, যদি কোনো কারণে, বোমাটির স্থাপন উলটা হয়ে যায়, তাহলে বোমার শক্তিশালী ইলেক্ট্রনগুলা পূথিবীর ইলেক্ট্রনের উলটা দিকে চলতে শুরু করবে এবং ‘দি পাই’ এর হিসেব মতে, ৩ সেকেন্ডের মধ্যে পূথিবীর ঘুর্ণণ উলটা দিকে ঘুরতে শুরু করবে এবং পূথিবী ধংস হয়ে যাবে।
আবার যদি সঠিকভাবেও স্থাপন করা যায়, তবুও এই যে এত শক্তিশালী ইলেক্ট্রন পূথিবীর ইলেক্ট্রনের দিকেই যাবে, ফলে পূথিবীর একই দিকেই পূথিবীর গতি বেড়ে যাবে এবং পূথিবীর মহাকর্ষ বলের তারতম্যের কারণে পূথিবী ধংস হয়ে যাবে। মিঃ ক্যাপ্স উদবিগ্ন চোখে কথা শেষ করে মিঃ এ্যলেক্স এর দিকে তাকালেন। দেখলেন ওনি খুব দ্রুত কি যেন লিখে চলেছেন। মিঃ ক্যাপ্স এ্যলেক্সকে বিরক্ত না করে কনফরেন্সিং টা অন করে রেখেই আবার চিন্তা করতে শুরু করলেন।
হঠাৎ মিঃ এ্যলেক্স এর চিৎকারে ক্যাপ্সের চিন্তার ছেদ পড়ল।
ইইয়েয়েয়েসসসস মিঃ ক্যাপ্স!! আমরা সমাধান পেয়ে গেছি। আমরা আমাদের প্রিয় পূথিবীকে বাচানোর উপায় খুঁজে পেয়ে গেছি ক্যাপ্স। এই দেখুন বলে সে তার(এ্যলেক্সের) বিশাল দেয়াল জুড়ে থাকা থ্রীডি স্ক্রিনের দিকে ক্যাপ্সের দূর্ষ্টি আকর্ষণ করলেন। স্ক্রিণে কিছু বড় বড় ইকুয়েশন আর কিছু জ্যামিতিক ছবি দেখা যাচ্ছে। মিঃ এ্যলেক্সের মাথায়ই এত বড় ইকুয়েশন এত কম সময়ে আসা সম্ভব, সে যে শতাব্দির সেরা গণিতবিদ।
সুতরাং এত বড় ইকুয়েশন আর এই বিদ্ঘুটে জ্যামিতিক ছবি দেখে মিঃ ক্যাপ্স বিন্দু মাত্র অবাক না হয়েই বললেন, তাই নাকি মিঃ এ্যলেক্স কই আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লীজ। অবশ্যই মিঃ ক্যাপ্স, এ আবিস্কার তো আপনারই, আমি শুধু আপনার আবিস্কারটাকে ম্যাথমেটিক্যাল সিমুলেশন করে আপনি যে যে সমস্যার কথা বলেছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছি। ওকে আসুন ব্যাখ্যা করা যাক।
শান্ত ভংগিতে মিঃ এ্যলেক্স ব্যাখ্যা শুরু করলেন। আপনি প্রথম যে সমস্যাটির কথা বলেছেন সেটি হচ্ছে, যদি পূথিবীর কেন্দ্র দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ইলেক্টিক হোল সূষ্টি করা হয়, এবং এক প্রান্ত দিয়ে আমরা আমাদের স্পেশাল বোমাটি ছেড়ে দেয় তবে অভিকর্ষ এবং গতি জড়তার কারণে সেটি সরল ছন্দিত গতিতে দুলতে থাকবে এবং দীর্ঘ সময় পরে এটা পূথিবীর কেন্দ্রে স্থির হবে।
এখন আমরা যদি আমাদের স্পেশাল বোমাটিকে একটা নর্থ পোলের সাথে বেঁধে ইলেক্ট্রিক হোলে ছেড়ে দেয় এবং হোলটির অপর প্রান্তে পূথিবীর উপরই আমরা যদি এমন শক্তিশালী নর্থ পোল স্থাপন করি যেটির ক্ষমতা পূথিবীর কেন্দ্র পরযন্ত পৌছে তবে আমাদের বোমাটির সাথে বাধা নর্থ পোলটি যখন পূথিবীর কেন্দ্রে এসে পৌছাবে তখন সাথে সাথে ইলেক্ট্রিক হোলটির অপর প্রান্তে রাখা নর্থ পোলটির বিকর্ষণে আমাদের পারমাণবিক বোমাটির গতি জড়তার কারণে বোমাটি আর পূথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরে যেতে পারবে না। মিঃ এ্যলেক্স হাসিমুখে একটা বিশালকায় ইকুয়েশন দেখিয়ে বলল, আমরা যদি এই পরিমাণ ইনটেনসিটির নর্থ পোল ইলেক্ট্রিক হোলটির অপর প্রান্তে পূথিবীর উপর স্তাপন করি তবে এই নর্থ পোলটির শক্তি পূথিবীর ঠিক কেন্দ্র পরযন্ত পৌছাবে আর এই পরিমাণ নর্থ ইনটেন্সিটি তৈরি করার জন্যে, আমরা (আর একটি ইকুয়েশন দেখিয়ে) এই ইকুয়েশন অনুসারে স্বয়ংক্রিয় ইলেক্ট্রিক ফিল্ড তৈরি করলেই আমরা শেষের ইকুয়েশন অনুসারে একটি নিয়ন্তিত নর্থ পোল সূষ্টি করতে পারব। আর স্পেশাল বোমাটির সাথে আমরা (আর একটি ইকুয়েশন দেখিয়ে) এই ইকুয়েশন অনুসারে ইনটেন্সিটি ওয়ালা নর্থ পোল তৈরি করলেই এই দুই নর্থ পোলের বিকর্ষণ, গতি জড়তার প্রভাবটাকে কাটিয়ে সহজেই আমাদের স্পেশাল বোমাটিকে পূথিবীর কেন্দ্রে স্থাপণ করতে সম্ভব হবে। এক নিঃশ্বাসে বলে থামলেন মিঃ এ্যলেক্স।
গণিতবিদ মিঃ ক্যাপ্স মুগ্ধ হয়ে দেখলেন মিঃ এ্যলেক্স এর ইকুয়েশন এবং বিস্লেষণ একদম নিখুঁত।
প্রফুল্ল হয়ে উঠল মিঃ ক্যাপ্সের মণটা। তারা যে ইতিহাস সূষ্টি করতে যাচ্ছে! চকচকে চোখে মিঃ ক্যাপ্স বলল, মিঃ এ্যলেক্স, আমরা মনে হয় পূথিবীকে বাঁচাতে যাচ্ছি। পরের সমস্যাটার সমাধানটা বলবেন প্লীজ। মিঃ এ্যলেক্য মূদু হেসে আবার শুরু করলেন। আমরা ‘মোশন কন্ট্রোল থিওরী অব ইলেক্ট্রন’ এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা ইলেক্ট্রনের গতি আলাদাভাবে নিয়ন্তন করতে পারি।
আমরা যদি আমাদের স্পেশ্যাল বোমাটির মধ্যে স্বংক্রিয় নিউরাল বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এমন ইনটেলিজেন্সি যোগ করে দেয় যাতে, বিস্ফোরণের পর শুধু মাত্র সেই সব ইলেক্ট্রনই গতিশক্তি লাভ করবে যারা বিপরীত দিক থেকে বিকর্ষণ বল অনুভব করবে। ফলে, শুধুমাত্র যে সমস্ত পূথিবীর ইলেক্ট্রন এক্স অক্ষের উলটা দিকে চলা শুরু করছে তারা বোমার ইলেক্ট্রনের যেহেতু বিপরীতমুখে আসতে চেষ্টা করবে সুতরাং বোমার ইলেক্ট্রনটি একটি তীব্র বিপরীতমুখী বল অনুভব করবে। ফলে বোমাটির কন্ট্রোল মোডুউলের ইন্টেলিজেন্সি সিস্টেম শুধু সেই ইলেক্ট্রনটিকে গতি শক্তি প্রভাইড করবে এবং এই বোমার ইলেক্ট্রনটির গতি শক্তির জন্যে পূথিবীর ইলেক্ট্রনটি তার দিকে পরিবর্তন করে আবার এক্স অক্ষের পজিটিভ দিকে চলতে থাকবে। এভাবে শুধুমাত্র যেসব ইলেক্ট্রন উলটা দিকে চলা শুরু করছে তাদের সরল রেখায় অবস্থিত বোমার ইলেক্ট্রনটি গতিশক্তি লাভ করবে এবং পূথিবীর ঐ ইলেক্ট্রনটির গতিপথ পরিবর্তন করে দিবে এবং এভাবে পূথিবীর সব ইলেক্ট্রন আবার আগের মত চলতে থাকবে এবং পূথিবীর গতিরও কোনো পরিবর্তন হবে না। কথা শেষ হওয়া মাত্র দুজনে উল্লাসে ফেটে পড়ল।
যখন তাদের উল্লাস থামল তখন তাদের হাতে আছে আর মাত্র ৩৭ ঘন্টা। মিঃ এ্যলেক্স দ্রুত পুরো আইডিয়াটাকে ‘দি পাই’ দিয়ে সিম্যুলেশন করতে বললেন মিঃ ক্যাপ্স কে। মিঃ ক্যাপ্স উল্লাসিত হয়ে দ্রুত কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়ে কনফারেন্সিং মডিউলটি বন্ধ করে দিলেন। মিঃ এ্যলেক্স আবারও সেলুলয়েদের স্ক্রিণে ভেসে থাকা ইকুয়েশনগুলোর দিকে মনোযোগ দিলেন।
স্পেশাল বোমা প্রস্তুত।
ইলেক্ট্রিক হোল তৈরি করার যন্ত প্রস্তুত। পুরো টিম প্রস্তুত। এখন শুধুই অপেক্ষা মিঃ এ্যলেক্সের অনুমতির। মিঃ এ্যলেক্স ঘড়ি দেখলেন । আর তাদের হাতে আছে ৩ ঘন্টা।
মিঃ এ্যলেক্স পুরো কাজটার সিমুলেশন, “দি পাই” এর রেজাল্ট প্রেডিকশন রিপোর্ট আর সতর্কতা গুলো আরো একবার দেখে কাজ শুরু করার অনুমতি দিলেন। শুরু হল ইলেক্ট্রিক হোল তৈরি, কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই ১ ঘন্টার মধ্যে পূথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত পূথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর তৈরি হল ইলেক্ট্রিক হোল। এর মাঝেই পূথিবীর “দি পাই” এর রিপো্ট মোতাবেক, প্রয়োজনীয় ইনটেনসিটি ওয়ালা নর্থ পোল, স্পেশাল পারমাণবিক বোমা রেডী হয়েছে। পূথিবীর কেন্দ্র মাপা, নর্থ পোল স্থাপন, প্রয়োজনীয় সতর্কতা এগুলো শেষ করতে করতে আর হাতে আছে ৫ মিনিট। স্পেশাল বোমাটি যেহেতু আলোর গতিতে কেন্দ্রে যাবে সুতরাং কেন্দ্রে বোমাটি রেখে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের জন্যে তা যথেষ্ট সময়।
বোমাটি ইলেক্ট্রিক হোলে রাখা হোলো, বোমাটিতে সেট করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরণ কন্ট্রোল মডিঊল যা পূথিবীর কেন্দের তাপমাত্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরিত হবে। সুতরাং ইলেক্ট্রিক হোল থেকে বোমাটিকে ছেড়ে দেয়া বাকি, তারপর আর মিঃ এ্যলেক্স এর নির্দেশে কাজ করবে না। কেউ জানে না কি আছে পূথিবীর ভাগ্যে। এই বোমাটি কি পূথিবীকে রক্ষা করতে পারবে, নাকি সে নিজেই হবে পূথিবীর মরণ কারণ। জানে না মিঃ এ্যলেক্স, কিন্তু এ ছাড়া যে মিঃ এ্যলেক্সের কিছু করার নেই।
সমস্ত পূথিবীর মানুষ লাইভ দেখছে, মিঃ এ্যলেক্স সবার সামনে এসে মাথা নত করে বোমাটি ছাড়ার নির্দেষ দিলেন। মুহুর্তের মধ্যে বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরিত হল। কিন্তু...
কিন্তু একি!! মিঃ এ্যলেক্স মনিটরিং মডিউলে দেখতে পেলেন কোনো এক অজ্জাত কারণে বোমাটি কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই বিস্ফোরিত হয়ে পূথিবীর গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, প্রচন্ড বেগে সুর্য ছুটে আসছে পূথিবীর দিকে। কিছু চিন্তা করার আগেই পুরো মহাবিশ্ব একটার পর একটা ধংশ হতে শুরু করল। সেই সাথে ধংস হয়ে গেল সম্পুর্ন মহাবৈশ্বিক সিস্টেম, ধংস হয়ে গেল পূথিবী, ধংস হল পূথিবীবাসী...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।