আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বগৌরবে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়



বুড়িগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার গৌরব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সুদীর্ঘ ১৪২ বছর ধরে জ্ঞানের দ্যুাতি ছড়িয়ে চলছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। মেধাবীদের দীপ্ত পদভারে মুখরিত এ শিক্ষাঙ্গনটি। জাতীয় রাজনীতির প্রবল প্রভাবকের ভুমিকা রেখে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম না জানা আরও অনেকে শহীদ হন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ মোজাম্মেল হক, ইসলামী শাসন কায়েমের স্বপ্নবাজ শহীদ ফয়সালের সুরোভিত পদধুলিতে গৌরবান্বিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। মননশীল মেধাবীদের শীর্ষতম পছন্দের বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরে দেখা ঃ ১৪২ বছর পূর্বে জগন্নাথ স্কুল নামে ১৮৬৮ সালে এর পথ চলা শুরু হয়। এর পরে ১৮৮৪ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ নামে এর রূপান্তর ঘটে। উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান কলেজে পরিনত হয় ঢাকা জগন্নাথ কলেজ।

১৮৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে স্কুল শাখা পৃথক হয়ে যায়। ১৯২০ সালে ওহফরধহ ষবমরংষধঃরাব পড়ঁহপরষ “ঔধমধহহধঃয পড়ষষবমব ধপঃ” আইন পাশ করে নথিভুক্ত করে। ১৯২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উপলক্ষ্যে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অবসান ঘটে এবং এ্যাক্ট ১৬, ১৯২০ এর আওতায় জগন্নাথ কলেজের সমস্ত সম্পত্তি, দায়-দেনার ভার স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যাস্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কলেজটিতে স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি জগন্নাথ ইন্টামেডিয়েট কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে পুনরায় স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়।

১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ সরকারি করা হয়। ১৯৭৫ সালে এখানে সম্মান এ স্নাতকের পাঠ্যক্রম চালু হয়। পরে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৮২ উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি জগন্নাথ কলেজের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তর করা হয়।

অবশেষে জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২০০৫ সালের ২৮ নং আইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী সরকারি জগন্নাথ কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সর্বশেষ অবস্থা ঃ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১.১১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। চারটি অনুষদের মাধ্যমে আটাশটি বিভাগে প্রায় ২৪০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তিনশতাধিক শিক্ষক পাঠদানেরত। যেসব বিষয়ে পাঠদান করা হয়ঃ বিজ্ঞান অনুষদ ঃ পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, প্রাণি বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত, ভূগোল ও পরিবেশ, মনোবিজ্ঞান, ফার্মেসি, মাইক্রো বায়োলজি এন্ড বায়োটেকনোলজি ও কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ ঃ হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ঃ রাষ্ট্র বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান, সমাজ কর্ম, নৃ-বিজ্ঞান এবং গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। কলা অনুষদ ঃ বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শন ও আইন বিভাগ। উপযুক্ত চারটি অনুষদে আটাশটি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ২৬৩৫ টি। যা কিছু আছে ঃ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার রয়েছে।

মেডিকেল সেন্টার, আধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন কেন্দ্র, একটি ক্যান্টিন আছে। এখানে সাংবাদিক সমিতি, বি,এন.সি.সি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার ইউনিট, বাঁধন ইউনিট, পরিবহন সুবিধা, মসজিদ এবং ছাত্রীদের জন্য কমন রুম রয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। তবে যা কিছু আছে তা সবই প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপর্যাপ্ত ও অপ্রতুল। যা দরকার ঃ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট হল থাকা অথচ হলই নেই।

কর্তৃপক্ষ বলে বেড়াচ্ছে এটি একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু প্রচলিত আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ টি হল রয়েছে তবে কাগজ পত্রে ৬ টি হলের মালিকানা কর্তৃপক্ষের কাছে আছে কিন্তু তা বেদখল। কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকার নেক-নজর দিলেই তবে হলগুলো দখলমুক্ত হতে পারে। অন্যথায় ভবিতব্যই ভালো জানে হলের খবর। অন্যদিকে ছোট ক্যাম্পাস শিক্ষার্থী বেশি, ফটক একটি খোলা অপর দক্ষিণমুখী ফটকটি নির্মাণ শেষ হলেও মনে হচ্ছে বন্ধত্বের অমরত্ব লাভ করছে ফটকটি।

শেষ অবধি দূর্ভোগ তিলকটি শিক্ষার্থীদের তাকদিরের লিখন হিসেবেই লেগে আছে এখনও। ছাত্র রাজনীতি ঃ ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাশীল দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগই এককভাবে সক্রিয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নিস্ক্রিয়। তবে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেই তাদের সাভাবিক কাজ চালিয়ে যাছে।

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির ক্ষমতাশীল দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অগনতান্ত্রিক ও বাকশালী এবং পরমত সহিষ্ণুতার অভাবের কারণে ক্যাম্পাসে নিস্ক্রিয় রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। প্রত্যাশা ঃ আছে, নেই এর মাঝেও অপার সম্ভাবনার তরী বেয়ে এগিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। হলসহ যাবতীয় অপ্রাপ্তির অবসান আশু হতে যাচ্ছে। নিরন্তর ও নিবিড় প্রচেষ্টা আন্তরিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। আলো আসছে এবং আলো আসবেই! এই ই প্রতীতি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.