গারো আদিবাসী স¤প্রদায়ের তীব্র আন্দোলন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা বন্ধসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরে বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের দ্বিতীয় রাবার উন্নয়ন প্রকল্পের সৃজিত রাবার বাগান লাভের মুখ দেখেছে। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে বাগানের সমস্ত ব্যয় মিটানোর পর বিশ কোটি ৫০ লাখ দুই হাজার টাকা নীট লাভ করেছে। কিন্তু এই রাবার বাগানের সমস্য সমাধানের দিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ নজর দেননা বলে প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে বাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পঞ্চাশের দশকে বন বিভাগ রসুলপুরে গুটি কযেক রাবার গাছ পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করে টেপিং করে লেটেক্স আহরণের পর রাবার উৎপাদনের হার সন্তোষজনক হওয়ায় বন বিভাগ রাবার বাগান সৃজনের প্রকল্পের কথা ভাবতে শুরু করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বন বিশেষজ্ঞরা মধুপুর গড়ের জলবাযু ও আবহাওয়া রাবার চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মত প্রকাশ করায় সরকার মধুপুর গড়েরর পতিত উঁচুভূমিতে রাবার বাগান সৃজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৯৮৫ সালে মধুপুরে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইরে পর বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনকে (বশিউক) রাবার বাগান সৃজনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৬ সালে বন বিভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৫ হাজার এক বনভূমি বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। ১৯৮৬ সালের ২ ফেব্র“য়ারী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এই পকল্পের উদ্বোধন করেন। বশিউক সাত হাজার ২০০ একর বনভূমি বুঝে নিয়ে রাবার বাগান সৃজনের কাজ শুরু করে ১৯৮৭ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের কারণে আদিবাসী গারো স¤প্রদায়ের সাথে বিরোধ বাধে।
ধীরে ধীরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে শুরু করলে প্রশাসন অযাচিত শক্তি প্রয়োগ করে। এর ফলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা হৈ চৈ শুরু করে। তারা আদিবাসী উচ্ছেদের কতিথ অভিযোগ তুলে দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন স্থানে চিঠিপত্র চালাচালি করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক রাবার বাগান প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্র“ত আড়াইশ কোটি টাকা ঋণ স্থগিত ঘোষণা করে। ফলে অর্থাভাবে প্রকল্পের অগ্রযাত্রা থেমে যায়।
পরবর্তীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় প্রকল্পটি হামাগুড়ি দিয়ে চলতে থাকে। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিন কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যায়ে চার হাজার ১০ একর এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্বের বাগান পরিচর্যাসহ নতুন তিন হাজার ৯২৪ একর বাগান সৃজন করা হয়।
দ্বিতীয় রাবার উন্নয়ন প্রকল্পের মধুপুর জোনের অধীনে বর্তমানে পীরগাছা, চাঁদপুর, সন্তোষপুর, কমলাপুর ও কর্ণঝোড়া এই পাঁচটি বাগান রয়েছে। এই বাগানে মোট রাবার গাছের সংখ্যা নয়লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩টি। এর মধ্যে উৎপাদনে এসেছে সাত লাখ ২২ হাজার ১১৯টি রাবার গাছ।
উল্লেখিত পরিমাণ উৎপাদনশীল রাবার গাছ থেকে ২০০৯Ñ২০১০ অর্থ বছরে লেটেক্স বা রাবার কষ সংগ্রহ করার পর প্রক্রিয়াজাতকৃত দুই হাজার ৯৯ টন রাবার পাওয়া গেছে। এই কষ উৎপাদনে অফিস ব্যায়, কর্মকর্তাÑ কর্মচারী, শ্রমিক, পরিবহন সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩২ টাকা। অপরদিক বাগান থেকে সংগৃহীত রাবার বিক্রয় মূল্য এসেছে ৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫৭০টাকা। যার ফলে সমস্ত ব্যয় মিটানোর পরও মধুপুরের দ্বিতীয় রাবার উন্নয়ন প্রকল্পে নীট লাভ হয়েছে ২০ কোটি ৫০ লাখ দুই হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে দ্বিতীয় রাবার উন্নয়ন প্রকল্পের জিএম আব্দুল হালিম বলেন, বাগান কর্মকর্তা কর্মাচরীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে এই সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাগানের কিছু সমস্যা সমাধানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত সমাধান করলে বাগান আরো লাভজনক হবে বলে মনে করেন তিনি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।