নিরপেক্ষ আমি
আফ্রিকার ন্যাশনাল ক্রুগার পার্ক। আসলে ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটা জঙ্গল। এই জঙ্গলে বসবাস করে প্রায় ১৫০ প্রজাতির জীবজন্তু, যার বেশির ভাগই হিংস্র ও ক্ষুধার্ত।
এমন জঙ্গলে কেউ রাত কাটায়! আর এখানেই টানা আট দিন কাটিয়ে ফিরেছে অ্যালেক্স এমবোইনি। সাধ করে নয়, ক্রুগার পার্কে আসলে হারিয়ে গিয়েছিল ১২ বছর বয়সী অ্যালেক্স।
ক্রুগার জঙ্গলে ঢোকার আগেই অ্যালেক্সের জীবনে ‘অভিযান’টা শুরু হয়েছিল। নিজের দেশ মোজাম্বিক থেকে পালানোর অভিযান।
পর্তুগিজ কলোনি মোজাম্বিক বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। খাওয়া জোটে না, বাড়ি নেই; হাজারো সংকট তাদের। ফলে প্রতিবেশি দক্ষিণ আফ্রিকাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।
প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার মোজাম্বিক নাগরিক চোরাই পথে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঢুকে পড়ে ভাগ্যের সন্ধানে।
ভাগ্যের সন্ধানে আগেই সাময়িক ভিসা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে এসেছিলেন অ্যালেক্সের বাবা। এবার চোরাই পথে ভাগ্য খুঁজতে বের হয়েছিল অ্যালেক্স আর তার মা।
কিন্তু মাঝপথেই পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তারা বিছিন্ন হয়ে গেল। অ্যালেক্সের মা টেরও পেলেন না ভয়ংকর এই জঙ্গলের কোথায় হারিয়ে গেছে ছেলেটা!
ছেলেটা হারাল ক্রুগার পার্কে।
এ জঙ্গলে আছে শ দুয়েক চিতা, ২৭ হাজার আফ্রিকান ষাঁড়, হাজার দেড়েক সিংহ, প্রায় দুই হাজার হায়েনাসহ আরও সব হিংস্র প্রাণী। এর যেকোনো একটিই যথেষ্ট ছিল অ্যালেক্সকে শেষ করে দেওয়ার জন্য।
অ্যালেক্স বর্ণনা করেছে সেই সময়ের অনুভূতি, ‘যখন রাত নেমে এল, আমি একটা মাটির ঢিবিতে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। রাতে খুব ভয় পেয়েছিলাম। শুনলাম দূরে কোথাও সিংহ ডাকছে।
’
শেষ পর্যন্ত এই ভয়ের বিপক্ষে অ্যালেক্সের জয় হয়েছে। এর আগে টানা আট দিন কেবল নদীর পানি খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছে। নানা কৌশল বের করে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে জন্তু-জানোয়ারকে। একটা সময় অ্যালেক্সের মনে হচ্ছিল, জানোয়ারে না মারলেও ক্ষুধায় মরবে সে।
একই কথা ভাবছিল পুলিশ।
ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় অ্যালেক্সের মা ছুটে গিয়েছিলেন স্বামীর কাছে। অ্যালেক্সের বাবা ভাবলেন, কিন্তু পুলিশ ছাড়া তো কোনো উপায় নেই! পুলিশের কাছে ছুটলেন তাঁরা।
পুলিশের লোকজন কোনো আশার কথা শোনাতে পারল না। শোনাবে কী করে, ক্রুগার জঙ্গলে একটা শিশু কি আট দিন বেঁচে থাকে!
এর পরও স্থানীয় পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করল। সঙ্গে নেওয়া হলো অ্যালেক্সের মা আর বাবাকে।
অ্যালেক্সের মাকে বলা হলো ছেলের নাম ধরে চিত্কার করার জন্য।
পরেরটুকু অ্যালেক্সের কাছে শুনুন, ‘প্রচণ্ড তেষ্টা পেয়েছিল, কিন্তু কোথাও পানি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তৃতীয় দিনে এসে পানি খেতে পারলাম। পরের কদিন আমি সেই ঢিবিতেই কাটালাম।
আট দিন পর নদী পর্যন্ত গিয়ে পানি খাওয়ার শক্তিও আর ছিল না।
এমন বোধ হলো, যেন মরে যাচ্ছি।
ঠিক তখনই মায়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। তিনি আমার নাম ধরে ডাকছেন। সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে হাঁটতে লাগলাম। দেখলাম, সত্যি আমার মা!’
স্থানীয় পুলিশ বিস্ময়ভরে দেখল অ্যালেক্সের মায়ের পঞ্চম ডাকের আওয়াজ শেষ হতে না হতেই জঙ্গল থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে এল একটি কালো ছেলে।
মায়ের ডাক বলে কথা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।