আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় সাদামাটা হয়ে গেল

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ।

আব্দুর রব সাহেব সকাল সাতটায় ঘড়ির অ্যালার্ম শুনে ঘুম থেকে উঠলেন। বাথরুমে ঢুকলেন, দাঁত মাজলেন, হাত-মুখ ধুলেন; ছেলেমেয়েকে ঘুম থেকে তুলে তাড়া দিলেন ইস্কুলের জন্য।

তাঁর গৃহিণী, লতিফা বেগম, তাঁর অনেক আগেই উঠেছেন, রান্নাঘরে ঢুকে গেছেন। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেতে বসলেন তাঁরা। ডিম, আলু ভাজি আর পরোটা। খুব দ্রুত খেয়ে নিলেন, কারণ তাড়াতাড়ি না বেরিয়ে পড়লে জ্যামে পড়তে হবে। বাসে চেপে তিনি এলেন অফিসে, ছেলেমেয়েরা গেল ইস্কুলে।

অফিসে ঢুকেই আব্দুর রব সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কাজে। দেখতে দেখতে দুপুর হল, টিফিন ক্যারিয়ার খুলে ভাত-তরকারী খেয়ে নিলেন তিনি। ঢং ঢং করে পাঁচটা বাজতেই ফাইলপত্র গুছিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। বাসায় ফিরলেন ক্লান্ত-বিধ্বস্ত অবস্থায়, ততক্ষণে সন্ধ্যা গড়িয়েছে। গোসল করে বেশ ঝরঝরে অনুভব করলেন।

ছেলেমেয়ের পড়ার ঘরে উঁকি দিলেন, ওরা বাবাকে দেখেই উচ্চস্বরে পড়া আওড়ানো শুরু করলো। একটু বিশ্রাম নিলেন তিনি, টিভির রিমোট নিয়ে কিছুক্ষণ গুঁতোগুঁতি করলেন। গৃহিণীর সাথে কিছুক্ষণ নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করলেন। পাশের বাড়ির ছেলেটা আছাড় খেয়ে নাকি হাত মচকেছে। রাতের খাবার তাঁরা খেয়ে নেন দশটার মধ্যেই।

ছেলেমেয়ে দুটো বেশ রাত জেগে পড়ে, সামনেই পরীক্ষা। আব্দুর রব সাহেব অবশেষে ঘুমোতে গেলেন। গৃহিণী যখন তাঁর পাশে শুতে এলেন, তখন দেখলেন, তাঁর স্বামীটির নাসিকাগর্জন চলছে। সারাদিনের একটানা কাজে তিনি নিজেও ক্লান্ত। গৃহিণীর কাজ তো সবার চেয়ে বেশী।

একটা সময় পুরো বাড়িটা নিস্তদ্ধ হয়ে গেল, সব আলো নিভে গেল। পরিবারের চারটি প্রাণীর নিঃশ্বাসের মৃদু আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই। একটি দিনের সমাপ্তি। পাঠক, বড় সাদামাটা গল্প হয়ে গেল? শুধুই স্বামী-স্ত্রী-সন্তান, ভাত-ডাল-তরকারী, বাসা-স্কুল-অফিস, খাওয়া-বিশ্রাম-ঘুম? গল্পে কোন টুইস্ট নেই, কোন স্পাইস নেই, কোন উত্তেজনা নেই? নেই কোন “মেসেজ”, কোন চরিত্রের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চিত্রণ? কোন আবেগ নেই, শব্দমালার ঝঙ্কার নেই? স্বীকার করছি, এই গল্পে তেমন কিছুই নেই। তবে জনাব, এটাই তো আমাদের, শতকরা আশি ভাগ মানুষের প্রতিদিনের গল্প।

যে গল্পের চিত্রনাট্য বছরের পর বছর ধরে অভিনীত হয়ে আসছে। যে গল্পের চরিত্র এই আমরা, নিজেরা, আটপৌরে মানুষেরা। যারা চোখের সামনে জন্মাচ্ছে, হেঁটে বেড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে, যাদের বেশীরভাগকেই কেউ মনে রাখছে না। আমি চাইলেই কি তাঁদের সেই গল্পের প্লট বদলে দিতে পারি? পারি না। (১৪ আগস্ট, ২০১৩)


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।